Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: ছবি ও প্রতিচ্ছবি

এত ভোরে দরজায় শব্দ? কে? চোখ কচলাতে কচলাতে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল নন্দা। কে-এ-এ-এ? চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল নন্দা।

আমি, নিরূপ।

দরজা ফাঁক করে নন্দা বলল, তুমি? এই সময়? কোথা থেকে? একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করে বাকি দরজাটি খুলে ধরলেই নিরূপ বাড়ির মধ্যে ঢুকে এল। তারপর বলল, আগে একগ্লাস জল দাও। ওষুধ খাব। তারপর বলছি?

জল আনতে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল নন্দা, কীসের ওষুধ?

নিরূপ উত্তর দিল না।

নন্দা তার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। বড়িটা মুখের মধ্যে ফেলে জিভ দিয়ে ভিতরে নাড়াচাড়া করে পেটের মধ্যে চালান করল। তারপর নন্দার দিকে তাকিয়ে বলল, খুব অবাক হয়েছ না? ভাবতেই পারনি আমি এসে হঠাৎ হাজির হব। জ্বালাতে আসব!

নন্দা বলল, ছাড়ো ওসব কথা, বলো কী হয়েছে?

কিছু না। পড়ে গিয়েছিলুম। গোড়ালিতে পেন। ঠিক হয়ে যাবে। আমি ক’দিন তোমার কাছে থাকতে পারি?

এখানে?

হাঁ।

মানে, ঠিক বুঝলাম না। তোমার কি কোনও কাজ আছে তাই থাকতে চাইছ?

না কাজ নেই বলে থাকব। থাকলে বলতাম না।

নন্দা বলল, হেঁয়ালি ছাড়ো। কেন?

আমি ক’দিন তোমার কাছে লুকিয়ে থাকতে চাই।

লুকোবে কেন? আর সে আমার কাছেই বা কেন? কিছুই বুঝতে পারছি না।

চা করো। তারপর কথা।

হুম, বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল নন্দা।

সুকিয়া স্ট্রিটের একটি ওষুধের দোকান থেকে বেরিয়েছিল নিরূপ এক ভোরে। তখন কলকাতা শহরের ভোরের ঘোর কাটেনি। এই সময় কলকাতার চেহারায় মফস্বলের গন্ধ ছেয়ে থাকে। শহরের বাইরে থেকে সবজি ঢোকে, চালানি মাছ নামে, ডিমের ছোট ছোট টেম্পো
শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ডিম সাপ্লাই করে। এই অঞ্চলে ওষুধের দোকানটি খোলা থেকে রাতভর। দিনের বেলা এর ঝাঁপি বন্ধ। তার সামনে কুকুরেরা বিশ্রাম নেয়। নিরূপ দোকান থেকে বেরিয়েই পাশের একটি গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। নন্দার বাসায়। যেতে যেতে সে বাঁ পায়ে চোরা টান অনুভব করল। আসলে পড়ে গেয়েছিল নিরূপ। সেই ঘটনাটা ঘটেছে সপ্তাহখানেক আগে। তখন সে অনন্তপুরে লুকিয়ে।

আস্তে দরজায় শব্দ করল নিরূপ। তার পরনে একটি পাজামা, গায়ে একটা ডোরা কাটা শার্ট, পায়ে চটি।

অনন্তপুর থেকে নিছক জেদের বসে একদিন কলকাতা শহরে চলে এসেছিল নন্দা। চোখে ছিল অভিনয়ের নেশা। নায়িকা হবার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। কেউ ছিল না তার চেনাজানা এই শহরে। স্টুডিও থেকে স্টুডিও ঘুরে অডিশন দিত, সন্ধের ট্রেনে ফিরে যেত অনন্তপুর। সেই দিনগুলি ছিল চরম উত্তেজনার, হতাশার, আবার কোনও কোনও দিন তুমুল উৎসাহের। কোনও একদিন তার অডিশনের পর পরিচালক তাকে ডেকে বলত, ভাল হয়েছে, তোমার হবে। এই হবার দিনক্ষণের কোনও ঠিকানা ছিল না। যে কোনও দিন ডাক আসতে পারে। এই ভরসায় কলকাতা যাওয়া-আসা।

এমনই এক সন্ধেবেলা অনন্তপুর স্টেশনে সুদর্শন একটি ছেলেকে নামতে দেখল নন্দা। একমাথা ঝাঁকড়া চুল, গায়ের রং তামাটে, উজ্জ্বল দুটো চোখ। নিজেকে সামলাতে পারেনি নন্দা। যে কোনও সিরিয়ালের নায়ক করে দেওয়া যায়। জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি অনন্তপুরে থাকেন?

অবাক চোখে তাকিয়ে নিরূপ বলেছিল, না, বন্ধুর বাড়ি যাব? আপনি?

আমি অনন্তপুরে থাকি। নন্দা। কলকাতা থেকে ফিরছি।

সেই আলাপ।

নিরূপকে প্রথমে খুব সপ্রতিভ মনে হয়নি নন্দার। কিন্তু কে তার এই অনন্তপুরে বন্ধু, সেটা জানার আগ্রহ গোপন করতে পারেনি সে। বলেছিল, অনন্তপুরে আপনার বন্ধু থাকে? কে?

নিরূপ বলেছিল, সজল। আপনি চেনেন?

সজল ব্যানার্জি?

হাঁ।

অল্পসল্প চিনি। বলে রিকশায় উঠে পড়েছিল নন্দা। বাকিটা তো পরে জেনে নেওযা যাবে এই ভেবে আর দেরি করেনি নন্দা। না হলে আর কিছুক্ষণ আলাপ চালিয়ে যাওয়া যেত। রিকশায় উঠে নন্দার মনে হল, আরে, সজলদার যে একজন বন্ধু আছে, সে আসবে, কই সে কথা বলেনি তো সজলদা? চেপে গেছে? আচ্ছা, দেখাচ্ছি। রিকশাটি মোড়ের মাথায় বাঁক নিল। দমকা ঠান্ডা হাওয়া এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার গালে। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়ায় ভিজে ভিজে ভাব। অনন্তপুরে এই সময়টি মনোরম। এখানে বুকভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়। কী করে ছেলেটি? সজলদার সঙ্গে পড়ে? পড়লে সে তো জানতে পারত। এই ক’দিন আগেও সজলদা সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা কাটিয়েছে। নিরূপের কথা উচ্চারণ করেনি। তাহলে সে কেমন বন্ধু, যে বাড়িতে চলে এল। সজলদা তাকে কিছু বলল না। মাঝে মাঝে সজলদাকে তার রহস্যময় মনে হয়। কথাবার্তার নিচে কোথাও একটু তলানি থেকে যায়। বার বার জিজ্ঞেস করতে হয় নন্দাকে।

জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিল, নিরূপ সজলের ইয়ারেই পড়ে। রাজনীতি করে। মাঝে মাঝে সজলের বাড়িতে থাকে। নন্দা বলেছিল, তুমি তো কোনও দিন বলোনি?

বলিনি, বলার মত নয় বলে। অন্য বন্ধুর মত। বন্ধু কে আসিস না বলতে তো পারি না।

কী করে? কোন দল।

সেটা বলা বারণ। আমিও জানি না। তবে ও গ্রামে গ্রামে কাজ করে ছুটির দিনে।

কী কাজ?

তাও জানি না। আমি ওর সঙ্গে কোনও দিন যাইনি।

আমাদের গ্রামে কী করে?

সজল বিরক্ত হয়ে বলেছিল, এত কেন জানতে চাইছ নিরূপের ব্যাপার? প্রেমে পড়ে গেছ নাকি?

পড়ার মতই দেখতে। বলে চালাক হাসি হেসেছিল নন্দা।

সজল বলেছিল, ঠিক আছে নিরূপকে বলব। তুমি ওর প্রেমে পড়েছ।

ধুর, তুমি একটা যা তা। কী ভাববে বলো তো?

আলোচনা থেমে গিয়েছিল। সজলের বাবার ফোন এসেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি ফিরতে বলেছিলেন। ঠাকুমা পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তারপর সজল ক’দিন যোগাযোগ করেনি। কিন্তু নন্দা দেখেছিল সজলের মধ্যে এক ধীর পরিবর্তন। সজল এড়িয়ে যেতে লাগল নন্দাকে। নন্দা প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরে বুঝতে পেরেছিল সজলদা আর তার কাছের মানুষ নেই। সে এক অন্য জগতের লোক। দেখা করতে গেলে নানান অজুহাত বলে, ফোন কেটে দেয়, একদিন নাম্বারটা ব্লক করে দিলে অভিমানে আর দেখা করেনি নন্দা। তার জেদ চেপে গিয়েছিল। তখন দু-একটি সিরিয়ালের দৌলতে সুকিয়া স্ট্রিটের একটি পুরনো বাড়ির এককামরার ঘর হয়েছে নন্দার। এক শনিবারে কাজের শেষে শিয়ালদায় নিরূপের সঙ্গে দেখা।

নন্দা আবার সেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল নিরূপের দিকে। কাছে এসে নিরূপ বলেছিল, বাড়ি ফিরছেন?

হ্যাঁ, সাড়ে আটটার ট্রেন। আপনি যাবেন?

না, আপনাকে দেখে এগিয়ে এলাম। আমি রাতের ট্রেনে কলকাতার বাইরে যাব। আপনার ফোন নম্বর দেবেন, যদি আপত্তি না থাকে?

তা দিতে পারি। তবে কোথায় যাচ্ছেন তো বললেন না?

সমস্তিপুর।

সেখানে কে আছে?

কেউ নেই। কাজে।

তারপর নিরূপ অনেকবার দেখা করেছে নন্দার সঙ্গে। নন্দা তাকে জিজ্ঞেস করেছে, কী করেন?

কাজ।

কী কাজ?

গুছিয়ে বলতে পারেনি নিরূপ।

একদিন নিরূপকে বেশ কড়া গলায় বলল, আপনি কি খুব বড়লোকের ছেলে? কিছু না করেই বেশ ঘুরে বেড়ান?

বড়লোকের ছেলেরাই বুঝি ঘুরে বেড়ায়? গরিব ছেলেরা ঘুরে বেড়ায় না?

না। তারা আমার মত জীবনে লড়াই করে। দেখছেন না?

সোজাসুজি তাকিয়ে ছিল নিরূপ। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছিল, নন্দা ঠিক কী বলতে চাইছে। নন্দা বলেছিল, দেখুন, আমি একটি সিরিয়ালে প্রতিবাদী গ্রামের মেয়ের রোল করছি। প্রতিনিয়ত অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছি। আবার নিজের জীবনে দেখুন সংগ্রাম করছি পায়ের নীচে একটুকু মাটির জন্য। আর আপনি যে সব জীবনের কথা বলছেন মাথায় ঢুকছে না, আপনি বোধহয় ঠিক জানেন না আপনি কী করছেন। কিন্তু আমি জানি।

চুপ করে শুনেছিল নিরূপ। খুব শান্ত গলায় বলছিল, তোমার সঙ্গে তোমার বাড়িতে একদিন বসতে হবে। তুমি খুব ইন্টারেস্টিং। সেই তার প্রথম নন্দার এককামরার ঘরে আসা। দিনের বেলা। দু-একবার এসেছে। তারপর অনেক দিন কোনও যোগাযোগ নেই। রাতের বেলা থাকার
কথা বলেনি কোনও দিন। আজ সে কেন এখানে থাকার কথা বলছে?

দিনের বেলা লুকিয়ে থাকত নিরূপ। দিনের বেলা কোনও না কোনও পরিচিতর বাড়িতে। নন্দা তাই জানে।

কিন্তু কাল দিনটা ছিল অন্য রকম।

রাতের অন্ধকারে নিরূপ আর সজল গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াত। সংগঠনের কাজে। নিরূপের সঙ্গে আলাপের পর সজল সরে এসেছিল নন্দার কাছ থেকে। কেননা কোনও না কোনও দিন এই খবর নন্দা জানতে পারবে। তখন এই সম্পর্কের পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তার চেয়ে আগেই দূরত্ব তৈরি হলে নন্দা সয়ে নেবে অনেকটা।

গতকাল রাতে গোপন ডেরায় অনেকদিন পর সামনাসামনি হয়েছিল নিরূপ ও সজল। সেখানেই একটি পুরনো বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে দু’জনে। সজলের বক্তব্য ছিল, শ্রেণীশত্রু বলতে আমাদের জমিদারদের, ধনীদের খতম করতে হবে। নিরূপ মেনে নেয়নি। বলেছিল, না। সেই কাজে যারা আমাদের বাধা দেবে তারাও শ্রেণীশত্রু। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ককে উত্তেজনায় নিরূপ চালিয়ে দিয়েছিল সজলের তলপেটে তার শানানো ভোজালি। খুব সময় দেয়নি সজল। সে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক মিনিটের মধ্যে। তারপর নিরূপ বেরিয়ে এসেছে ডেরা থেকে। একা অন্ধকারে। রাতে শিয়ালদা স্টেশনের শেষ বেঞ্চিতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল। ভোর হতেই সুকিয়া স্ট্রিট।

মুখ ধুয়ে নাও।

হাঁ। বলে বাথরুমের দিকে চলে গেল নিরূপ।

ফিরে এলে টেবিলে ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপটি সামনে রেখে নন্দা জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ আমার কথা মনে পড়ল, থাকবে বলছ? কী বাপ্যার?

কিছু না, ইচ্ছে হল।

আমার সিরিয়ালের কাজ আছে। কখন আসি আর কখন যাই তার ঠিক নেই। কে তোমাকে দেখবে?

দেখতে হবে না।

আমি এখানে একা থাকি। রাতে কোনও পুরুষের থাকা আমি চাই না।।

আমি তো তোমার বন্ধু।

মেয়েবন্ধু হলে কথা ছিল।

তাহলে থাকতে দেবে না বলছ?

না তা বলিনি। আমি কারণটা জানাতে চাইছি।

কোনও কারণ নেই।

তা কখনও হয়?

কী করে এসেছ, যে লুকবে? বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল নন্দা। কিছু কি অন্যায় করেছে, ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়ে থাকতে চাইছ?

কোনও উত্তর দিচ্ছে না নিরূপ। তাকিয়ে আছে নন্দার দিকে।

নন্দা আবার জিজ্ঞে করল, কী, উত্তর দিচ্ছ না কেন?

পারছি না। কিছুতেই বলতে পারছি না।

পারছ না? কী করেছ যে বলতে পারছ না? নাকি আমি শুনলে আমি সহ্য করতে পারব না? রহস্যভরা চোখে তাকাল নন্দা।

দুটোই। সামলাতে পারবে না।

তবু বলতেই হবে। না বলে সময় নষ্ট কোরো না।

আমি খুন করেছি।

খুন? কাকে?

সজলকে।

কেন? কী করেছিল সজলদা?

আমার বিরুদ্ধে কাজ করছিল।

তার প্রমাণ তোমার কাছে আছে? চোখ ক্রমাগত গরম হচ্ছিল।

আছে। তলে তলে সে ষড়যন্ত্র করেছিল।

তার প্রমাণ তোমার কাছে আছে?

আছে।

তা বলে তুমি তাকে খুন করবে?

শ্রেণীশত্রুকে তো খতম করতেই হয়।

সজলদা তো তোমার বন্ধু। শ্রেণীশত্রু হতে যাবে কেন?

হাঁ সে তাই। বলে থামল নিরূপ।

নন্দা এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরূপের ওপর। প্রথমে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলে বুকের ওপর পা চেপে ধরল নন্দা। সজলদা আমার প্রেম। তুমি তাকে খুন করেছ। বলে একটা হাত সে নিরূপের মুখের ওপর চেপে দিল। মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে কিছু বলতে চেষ্টা করছিল নিরূপ। তারপর কলার ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে দিল নন্দা। নিরূপের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল, আমার কাছে এসেছ কেন? লোকে জানতে পারবে না বলে? আর লুকিয়ে কিছুদিন থেকে আবার পালাবে? ধরতে পারবে না কেউ, সন্দেহ করবে না কেউ?

ঘাড় নাড়ল নিরূপ।

এবার বেশ জোরে নিরূপের তলপেটের নিচে লাথি কষাল নন্দা। আঘাতে কঁকিয়ে উঠল নিরূপ। মারের চোটে তার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে। সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তস্রোতে।

নিরূপ বলল, আমি আর পারছি না। এবার ছেড়ে দাও।

আর ঠিক সেই মুহূর্তে নন্দা সজোরে একটা ঘুষি মারল নিরূপের বুক লক্ষ করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল নিরূপ। আর সঙ্গে সঙ্গে হাততালি দিয়ে উঠল কাকলি।

গতকাল অনেক রাতে শুটিং থেকে বাড়ি ফিরে টিভিটা চালিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। আজ ছুটির দিন। কোনও কাজ নেই। টানা ঘুম দিয়েছিল কাকলি। ঘুম ভাঙতে তাকিয়ে দেখল গতকালের এপিসোডটি শুরু হচ্ছে। রিপিট টেলিকাস্ট। গোটা এপিসোডটি দেখার পর মনে মনে বলল কাকলি, সিরিয়ালের গল্পটা খুব জোরালো না হলেও নন্দার ভূমিকায় অভিনয়টা সে মন্দ করেনি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × five =

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »