কলকাতা-ঘেঁষা এই অঞ্চলটি তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেও পুকুর আর বাগান ঘেরা মফস্বল ছিল। এখন গাছের গ দেখা যায় না, শুধুই উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ি। খাস উত্তর কলকাতা ছেড়ে নানা কারণে ‘উৎখাত’ হওয়া লোকজনই এখানে এই ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে বাস করেন। উত্তর কলকাতার সেই ঢিলেঢালা জীবন, সেই আড্ডা, সেই অবসরযাপন অনেকেই বেশ মিস করেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষজন। সারাটা জীবন এক ঠাঁইতে বাস করে, এক পাড়ায় ছোট থেকে বড় হয়ে বুড়ো হওয়ার পরে নতুন জায়গায় এসে তাঁদের মানাতে বড় অসুবিধে হয়। এইরকমই তিন ফ্ল্যাটবাড়ির তিন বয়স্ক ভদ্রলোক নিজেদের মধ্যে এক সান্ধ্য আড্ডা চালু করেছেন। পাড়ার একটি ফ্ল্যাটবাড়ির নীচে কতকগুলি দোকান এখনও বিক্রি হয়নি। সেই বন্ধ দোকানের সামনের সিঁড়িতে রোজ সন্ধেবেলায় তাঁদের আড্ডা।
একটু কান পাতলে নানান আলোচনা শুনতে পাবেন। এই নতুন পাড়াটি যে কত খারাপ, বাড়ির বউমা কীরকমভাবে সংসার ভাঙার চক্রান্ত করছে, পেনিসিলিন ছাড়া যখন কোনও অ্যান্টি-বায়োটিক ছিল না তখন কীভাবে চিকিৎসা হত, উত্তর কলকাতার কোন দোকানের আলুর চপ-বেগুনি ভাল, উঠতি বড়লোকেরা এখানে কীভাবে দামের তোয়াক্কা না করে বাজার করে, কোন সময়ে কী না-খাওয়ার বিধান শাস্ত্রে আছে, কোন ডাক্তার টেস্ট করার নামে গলা কাটছে ইত্যাদি প্রভৃতি। সঙ্গে থাকে স্মৃতি রোমন্থন। নিজেদের যৌবনের হিরোইজম, নানান অভিজ্ঞতার কথা। পাড়ার বাচ্চাদের কিন্তু এঁরা খুব ভালবাসেন। বাচ্চারাও এতগুলো দাদুকে খুব পছন্দ করে। ফাঁক পেলেই দাদুদের সঙ্গে গল্প করে যায়। আর বাচ্চার মা-রা রাস্তায় যাতায়াতের পথে প্রায়ই ধমক খান, মেয়ে কেন রোগা হয়ে যাচ্ছে, এতটুকু ছেলেকে এতদূরে কেন ইস্কুলে পাঠানো হয়— এইসব বিবিধ কারণে।
জন্মইস্তক দর্জিপাড়ার ছেলে হরিনাথ মুখুজ্জে এই আসরের মধ্যমণি। সরকারি চাকুরে ছিলেন। মাথাভর্তি সাদা চুল, বাঁধানো দাঁত, সুগারের রুগি আর তিরিক্ষে মেজাজ। কারণে-অকারণে চেনা-অচেনা সবাইকে দু-কথা শুনিয়ে দিতে তাঁর জুড়ি নেই। কথায় কথায় বলেন, ‘আমাকে শেখাতে এসো না, আমি দর্জিপাড়ার ছেলে, তোমাকে এক হাটে কিনে আর-এক হাটে বেচে দিতে পারি।’ শার্ট-প্যান্ট পরেই রোজ আড্ডায় আসেন, বাজারেও যান। প্যান্ট-শার্ট ছাড়া তাঁকে কেউ কোনওদিন ফ্ল্যাটের বাইরে দেখেননি।
আড্ডায় থাকেন সৌম্যকান্তি, চক্রবর্তীমশাই, পণ্ডিত পুরোহিত ছিলেন। বেণীমাধব শীলের পাঁজি লেখার যে পণ্ডিতদের দল থাকতেন তিনি একসময় তাঁদের অন্যতম ছিলেন। চব্বিশ ঘণ্টাই ধুতি পরে থাকেন। বাইরে বেরোলেই ধোপদুরস্ত পোশাক। কথায় আভিজাত্যর ছোঁয়া। আজন্ম উত্তর কলকাতায় কাটালেও অত্যন্ত পরিশীলিত ভাষায় কথা বলেন, ওনার মুখে কেউ কোনওদিন কোনও অপশব্দ শোনেননি। আড্ডার আর-এক সদস্য রতন ঘোষ, লুঙ্গি আর হাফশার্ট পরেন। একটু তোতলা, মাথা জোড়া বিরাট টাক।
সেদিন সন্ধেবেলা আড্ডা মারতে বসে তিনজন দেখলেন, তাঁদের আড্ডার সিঁড়িতে আর-একজন বসে আছে। চেনা কেউ নয়, গোলগাল আমুদে চেহারার লোক, বেশ ফিটফাট পোশাক। ওই সিঁড়িটা বেশ চওড়া। আড্ডার তিনজন বসার পরেও বেশ খানিকটা খালি জায়গা থাকে। মাঝে মাঝেই চেনা বা অচেনা কেউ এসে খানিক বসেন সেখানে। তাদের পাত্তা না দিয়েই আড্ডা চলে। সেদিনও তাই হল। কথা হচ্ছিল প্রস্টেটের সমস্যা নিয়ে। মুখুজ্জেবাবু বলেই ফেললেন, ‘এরকম নচ্ছার রোগ আর নেই মশাই, এই প্যান্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে তো এই আটকে গিয়ে শ্বাস ওঠার জো।’ চক্রবর্তীমশাই বললেন, ‘কী আর করা যাবে বলুন? জরা তো অবশ্যম্ভাবী। কোনও মানুষের সাধ্যি নেই জরাকে এড়িয়ে যাবার।’ রতন ঘোষ তখন আবার বাঁধানো দাঁতে যে খাওয়াদাওয়া কতরমের অসুবিধের সৃষ্টি করে সেই নিয়ে তোতলাতে তোতলাতে অনুযোগ শুরু করলেন।
‘আমি আপনাদের সঙ্গে দুমিনিট কথা বলতে পারি?’ আচমকা ঘাড়ের কাছে গলার আওয়াজ শুনে আড্ডা থামল। সবাই তাকিয়ে দেখে সেই গোলগাল মাঝবয়িসি লোক। মুখুজ্জেবাবু তার আপাদমস্তক সন্দেহের চোখে জরিপ করে বললেন, ‘বলুন।’ লোকটি বসে থাকা তিন বয়স্ক লোকের সামনে এসে দাঁড়াল। বলতে শুরু করল। লোকটির কথায় হাসি মিশে যেন এক জাদু তৈরি হয়। তিনজনে চুপচাপ শুনে যেতে লাগলেন। লোকটি নীচু গলায় বলে চললেন,
‘বয়েস হওয়ার অনেক অসুবিধে। চুল সাদা হয়, মাথা ভরা টাক। দাঁত থাকে না, হজম হয় না, খাওয়ার মজা শেষ। হাঁটুতে বাত, ঘাড়ে স্পন্ডিলোসিস। মলমূত্রের নানা সমস্যা। প্রেসার সুগার কিডনি। আমাদের দেশে ষাট থেকেই এসবই এসে চেপে ধরে। বেঁচে থাকাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। শুধু অল্পসল্প বিস্বাদ খেয়ে দাদু দাদু ডাক শুনে ভয়ে ভয়ে মরার দিনগোনা। কিন্তু জানেন না কি, চিনে বহু মানুষ আশি-নব্বইতেও বৃদ্ধ হন না। অসাধারণ কেউ নন তাঁরা সকলে, আপনাদের মতই ছাপোষা। কিন্তু তাঁদের আশি বছরেও মাথায় কালো ঘন চুল। ঝকঝকে আসল দাঁত। রাত্তিরে এক থালা ভাত আর ইয়া বড় দুটো চর্বি ভর্তি শুয়োরের মাংসের স্লাইস খেয়ে শুতে যান। হজমের কোনও সমস্যা নেই। সুগার প্রেসার সব নরম্যাল। এন্তার সিগারেট ফুঁকছেন, মদটদও টানেন অনেকে। এমনকি পঁচাশিতে বিয়েথাও করছেন।’
‘ওই চিনেরা ম্যাজিক জানে নাকি?’ প্রশ্ন করেন রতন ঘোষ।
‘ম্যাজিক নয়, ফো-তি। একটা গাছের মূল।’ জবাব দিল লোকটি।
‘ফো-তি? নাম শুনিনি তো। ওদের জিনসেং-এর নাম জানা আছে ঘনাদার কল্যাণে। কিন্তু ফো-তি তো শুনিনি।’ জানালেন চক্রবর্তীমশাই।
‘‘জিনসেং? সে তো ফো-তি-র কাছে একেবারে শিশু। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পাশে ভুটানের রাজা। আসল রহস্য হল ফো-তি। যার আর-এক নাম, ‘হো শো ঊ’। মানে হল, কালো চুলের শ্রীযুক্ত হো।’’
‘এ আবার কেমনধারা নাম?’ জানতে চাইলেন মুখুজ্জে।
‘তারও এক ইতিহাস আছে কাকাবাবু।’ গোলগাল লোকটি বলে চলে, ‘অনেক কাল আগের কথা। চিনের এক অঞ্চলে দুর্ভিক্ষে সব উজাড় হওয়ার যোগাড়। খাবারের অভাবে সবাই গ্রাম ছেড়ে ছেড়ে পালাচ্ছে। শ্রীযুক্ত হো যে-গ্রামে থাকত সেখানেও সবাই পালাল কিন্তু অতিবৃদ্ধ, অথর্ব শ্রীযুক্ত হো-র সেই শারীরিক সামর্থ্য নেই। তিনি একা থেকে গেলেন গ্রামে। পাশের বন থেকে চেনা-অচেনা কিছু গাছের মূল যোগাড় করে এনে সেই খেয়েই দিন কাটাতে লাগলেন। দুর্ভিক্ষ একটু কমলে গ্রামের লোকেরা গ্রামে ফিরে এল। শ্রীযুক্ত হো এতদিনে নিশ্চয়ই মরে পচে সেখানে পড়ে আছেন এমনই ভেবেছিল সবাই। কিন্তু ফিরে এসে তারা তো অবাক! শ্রীযুক্ত হো-র মাথাভর্তি কালো চুল, আসল দুপাটি ঝকঝকে দাঁত, কথা বলতে গেলে আর হাঁপান না। মাইলখানেক অনায়াসে হেঁটে দিতে পারেন। কী করে এমন হল? বুড়ো হো বললেন, কেন এমন হল তা তিনি জানেন না। খোঁজ করতে বেরোল, শ্রীযুক্ত হো দুর্ভিক্ষর সময়ে একটি অচেনা গাছের মূল খুব খেয়েছিলেন আর তার থেকেই পুনরুদ্ধার হয়েছে তাঁর যৌবনের। সেই গাছের মূলের নামই হল ফো-তি। বললে বিশ্বাস করবেন না, সেই শ্রীযুক্ত হো তখন আর-একটি বিয়েও করলেন আর তাঁর একটি ছেলেও হল। চিনেরা ওই ফো-তি-র শেকড় খেয়েই বয়েস হলেও বুড়ো হন না।’
‘চিনেদের কথা তো বুঝলুম। কিন্তু আমরা চাইলে কোথায় পাব তোমার ওই ফো-তি?’ জিজ্ঞাসা করলেন রতন ঘোষ।
‘সব জায়গায় পাবেন। চিনে ওষুধের দোকানে পাবেন। আমাজন, ফ্লিপকার্ট-এর অনলাইন মার্কেটিং সাইটে পাবেন। কিন্তু ও সবই হল শ্বেত বা সাদা ফো-তি। ওতে তেমন কাজ হয় না। চাষই তো হয় ওই গাছের। কিন্তু আসল মাল হল লাল ফো-তি। চাষ করা যায় না। খুব দুর্লভ। যৌবন ফিরিয়ে আনার আসল চাবিকাঠি।’
‘সে পাওয়া যাবে কোথায়?’ রতন ঘোষ আবার জানতে চান।
‘এ দেশে আসলি চিজ পাবেন বলে মনে হয় না। তবে পাকেচক্রে আমার কাছে খাঁটি লাল ফো-তি কিছু এসেছে। কীভাবে তা জানতে চাইবেন না। ধরে নিন কনফুসিয়াসের আশীর্বাদ বর্তেছে আমার মাথায়। খানিকটাই আছে। আমি এগুলো বয়স্কদের বেচতে চাই। গেছিলাম কয়েকজনের কাছে। তারা চিটিংবাজ বলে ফুটিয়ে দিয়েছেন আমাকে। আপনাদের কারুর লাগলে দিতে পারি। অবশ্য আপনারা না-ও নিতে পারেন। অবিশ্বাস করতেই পারেন আমাকে। আর মালটা খুব সস্তা নয়। এক মাস রোজ দুটো ছোট টুকরো খেলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু ওইটুকু মালেরও অনেক দাম। আমি কাকাবাবু ও মাল সস্তায় বেচব না। যে কিনবে তিনি যৌবন ফিরে পাবেন। আর কিছু বেশি লাভ আমি করবই। তাতে লোকে আমায় পয়সার চামার ভাবলে আমি চামার।’
রতন ঘোষ দীর্ঘদিন বড়বাজারের মারোয়ারিদের গদিতে অর্ডার সাপ্লাই করেছেন। তিনি দুম করে কেনাবেচার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। দু-চারদিন অপেক্ষা করেন। ফলে চুপ করে রইলেন। চক্রবর্তীমশাই বিধাতার বিধানে বিশ্বাসী। যৌবন পুনরুদ্ধারের ম্লেচ্ছ উপায়ের প্রতি তাঁর কোনও মোহ নেই। তিনিও চুপ করেই রইলেন। আর দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন হরিনাথ মুখুজ্জের মুখঝামটা এসে আছড়ে পড়ে এই গোলগালের ওপর। কিন্তু দুজনকে অবাক করে মুখুজ্জেবাবু বললেন, ‘কই দেখাও তো ভাই তোমার ওই ফো-তি।’
লোকটি তখন ব্যাগ থেকে একটি কাচের ছোট স্বচ্ছ চৌকো বাক্স বার করে মুখুজ্জেবাবুর হাতে দিলেন। ভেতরে অনেককটা কালো কালো ছোট বস্তু, কাঠের টুকরোর মত। মুখুজ্জেও সেই বাক্স খুলে একটা টুকরো হাতে নিলেন আর তার গন্ধ শুঁকলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘এইটুকুর কত দাম?’
‘দেড় হাজার টাকা। কোনো ডিসকাউন্ট নেই।’ লোকটি জানাল।
‘পাঁচশ হলে এখনই নেব। নয় তো তুমি এসো হে।’ মুখুজ্জেবাবুর ছোট্ট জবাব। বাকি দুজন প্রমাদ গণলেন। রতন ঘোষ গলা খ্যাঁকারি দিলেন। চক্রবর্তীমশাই তো বলেই ফেললেন, ‘সাইড এফেক্ট-টেফেক্ট কী হবে না জেনে এত দাম দিয়ে কেনাটা কি ঠিক হবে?’ মুখুজ্জেবাবু এসব যেন শুনেও শুনলেন না। দুজনে বুঝলেন যুবক হওয়ার লোভটা হরিধন মুখুজ্জে সামলাতে পারছেন না। তাঁরা চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলেন।
‘এ কী বাজারের বাটামাছ পেয়েছেন যে তিন ভাগের এক ভাগ দাম দিচ্ছেন?’ এই বলে গোলগাল দর শুরু করল। মুখুজ্জেবাবু কিন্তু আর কিছুই বললেন না। ১২০০ ১০০০ ৮০০ অনেক দরই গোলগাল দিল। মুখুজ্জেবাবু নিশ্চুপ। শেষকালে এই মাল সে প্রথম বিক্রি করছে। সায়েত বলে একটা ব্যাপার আছে বলে ৫০০-য় সে রাজি হল। হরিনাথ মুখুজ্জে আর কথা না বাড়িয়ে মানিব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বার করে দিলেন। কথা না বাড়িয়ে সেই গোলগাল সেখান থেকে দ্রুত হেঁটে বিদায় নিল।
‘এ কী করলেন ভাই? এত দাম দিয়ে কী না কী কিনলেন?’ শুধোলেন চক্রবর্তীমশাই। মুখুজ্জেবাবু তখন সেই বাক্স থেকে দুটো কালো টুকরো বার করে মুখে ফেললেন।
‘দাদার তো দেখি তর সইছে না। খালিপেটে সকালে যা খাওয়ার কথা, এই ভরসন্ধেতেই সেটা খেয়ে নিচ্ছেন।’ একটু ব্যঙ্গই করলেন রতন ঘোষ।
মুখুজ্জেবাবু এতক্ষণে মুখ খুললেন, ‘যা ভেবেছিলাম তাই। আমলকীর টুকরোই বটে। একটু মোটা করে কাটা।’
‘আমলকী? মানে আপনি পাঁচসিকের আমলকী পাঁচশ টাকায় জেনেবুঝে কিনলেন?’
‘ফো-তি’, জবাবে বললেন মুখুজ্জেবাবু, ‘আসলে কী জানেন ফেরেববাজ দুরকমের হয়। একদল নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য সৎ দাবি করে লোক ঠকায়। এরাই সংখ্যায় বেশি। কিন্তু আর একটা ছোট দলও আছে। এরা নিজেদের খারাপ বলেই ঘোষণা করে এবং সেই ঘোষণার গুণেই লোককে ঠকিয়ে দেন। এ হল সেই দ্বিতীয় জাতের রেয়ার ঠগ। দেখলেন না কীরকম নিজেকে পয়সার চামার পর্যন্ত বলল।’
‘সে তো বোঝা গেল। কিন্তু এত বুঝেও আপনি পাঁচশ টাকা ঠকতে গেলেন কেন? লটারি পেয়েছেন নাকি?’ রতন ঘোষের খোঁচা।
‘মাস তিনেক আগে’, মুখুজ্জেবাবু বলে চললেন, ‘আমাকে কেউ একটা জাল পাঁচশ টাকার নোট গছিয়েছিল। যে দোকানেই দি কেউ নেয় না। শেষমেষ ব্যাঙ্কে চালাতে গেলুম। তারা তো আর একটু হলেই নোটটা বাজেয়াপ্ত করে নিচ্ছিল। অনেক বলেকয়ে উদ্ধার করে এনেছিলুম। সেই থেকে নোটটা আমার মানিব্যাগেই থাকে। কাউকে আর চালাতে যাইনি। সে বেচারি যদি টাকাটা ভাল মনে নিয়ে ফেঁসে যায়। মানিব্যাগে থেকে থেকে ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে নষ্ট হওয়াই ছিল সে নোটের ভবিতব্য। কিন্তু আজ এই ফেরেববাজকে দেখে ওই নোটের কথা মনে পড়ল। দিলুম চালিয়ে। আধো-অন্ধকারে ব্যাটা আর ঠাউর করতে পারেনি। এখন ও যদি সেই নোট চালাতে পারে তো ওর কেরামতি আর না পারলে ঠগের শাস্তি। আমার লাভ এই শুকনো আমলকীর বাক্স।’ বলে উঠে পড়লেন হরিধন মুখুজ্জে।
আর যেতে যেতে স্বগতোক্তি করলেন, ‘হেঁ হেঁ বাবা। আমরা দর্জিপাড়ার ছেলে। অমন ফেরেববাজকে একহাটে কিনে আর-এক হাটে বেচে দিতে পারি।’