জোনাকি মেঘের নিচে এই কুঁড়েঘরে
আজ প্রাচীন প্রাচীন কোন পুরনো দিন ঝরে
জোনাকি মেঘের নিচে এই কুঁড়েঘরে
আর স্মৃতির আকাশ জুড়ে
যাপনের দৃষ্টিতে যতদূর মনে পড়ে—
কোন দূর পারাবার জলে সহসা আলোড়নে
সেও একদিন ছিল এইখানে,
ও লেমন ইউক্যালিপ্টাস, তোমরা কি দেখেছ তাকে?
. মনে হয়, মনে হয় দেখেছি তারে কোথায়;
. সে কি সবুজ উঠোন ঘেঁষে যেন তার সুগভীর বুকে
. রোদের মতন নীল মোহনা আঁকে?
. মনে হয় তাকে তবে দেখেছি কোথায় কবে,
. কোন সুদূরে সোনালি গমের খেতে পাখিদের কলস্বরে
. খালিপায়ে কেউ এক আছে দাঁড়িয়ে,
. তার নদী বয়ে গেছে ভোরের জানালা গলে,
. জলবাঁধা মেঘ তার পায়ে পায়ে চলে
. তুমি কি খুঁজছ তাকে? ও তুমি কি খুঁজছ তাকে?
. মনে হয় তাকে তবে দেখেছি কোথায় কবে।
. তার চোখ রংধনু আকাশের ওপারে, বলেছিল সে—
. সেখানে নাকি দিনরাত দিনরাত
. ধূসরাভ-নীল রূপকথা-পাখি করে ডাকাডাকি
. ও ম্যাপল-পাইনের বন, ও ল্যাভেন্ডার-ওক,
. তোমরা কি দেখেছ তাকে?
. যতদূর মনে হয় মনে হয় দেখেছি তারে কোথায়,
. সে কি সবুজ উঠোন ঘেঁষে যেন তার সুগভীর বুকে
. রোদের মতন নীল মোহনা আঁকে?
. মনে হয় তাকে তবে দেখেছি কোথায় কবে,
. যেখানে শহর শেষে পদ্মগন্ধ ভাসে দৃশ্যত আনমনা বাতাসে
. হয়ত সেখানে তাকে পেলেও পেতে পারো,
. তবে ভয় হয়, আমাদের শুধু ভয় হয়
. সে কি পাছে ছেঁড়া ঘুড়ি হয়ে আর কোথা হারায়!
ও লেমন ইউক্যালিপ্টাস! ও ম্যাপল-পাইনের বন! ও ল্যাভেন্ডার-ওক!
একদিন, কোনও একদিন
গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে যদি তারে কোনও ভোরে
তোমাদের ফের মনে পড়ে, জেনো—
সে তো শখের উঠোন ফেলে
উজানদিঘির পাড়ে
জোনাকি মেঘের সাথে চলে যায় দূরে
আর প্রাচীন প্রাচীন, কোন পুরনো দিন
টুপটাপ টুপটাপ কল্পতরু থেকে ঝরে এই কুঁড়েঘরে।
পাদটীকা: ভোরের জানালা গলে, সবুজ উঠোন ঘেঁষে যেন তার সুগভীর বুকে, জলবাঁধা মেঘ, শহর শেষে পদ্মগন্ধ ভাসে দৃশ্যত আনমনা বাতাসে, শখের উঠোন ফেলে, উজানদিঘির পাড়ে— এই বাক্যাংশগুলোর উৎস স্বীকার: নিজ লেখা— বেলা অবেলা, সচলায়তন, নুশান, ২০১১।
**
জানতে দিয়ো যা কিছু ভালবাসার মতো দেখায়
আমাকে জানতে দিয়ো না—
তোমার অভ্রান্ত ভালবাসার কথা
জানতে দিয়ো আর সবকিছু—
যা কিছু ভালবাসার মতো দেখায়
কিন্তু সে অব্দি পৌঁছুতে পারে না, সেইসব কথা
আমাকে জানতে দিয়ো না—
তোমার অভ্রান্ত ভালবাসার কথা
আমাকে জানতেও দিয়ো না—
গভীর চিত্তদাহের লকলকে আগুনে ভস্ম হয়ে
বক্ষ ও নাভিমূল থেকে উঠে আসা
তোমার অনাবিল বেদনার কথা; পাকা বরইয়ের মতো
উপচে পড়া সে গোপন প্রেমের আভাস
দিয়ো না আমাকে
সব প্রাক্তন প্রেম
যা কিছু বিস্মৃত কুয়োর মত,
খাপছাড়া অর্ধমৃত হয়ে পড়ে আছে—
আমাকে সুযোগ দিয়ো
সেইসব নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করার
এই ফাঁকে ছলে-বলে-কৌশলে
তুমি চলে যেয়ো এইসব তাণ্ডব নাচ ফেলে,
ব্যথার লোহিত-নীলে।
কথা দিলাম— আমি দীপ্র এ ভয়ানক দহন
সহন করিতে পারি
যদি আর-সব শান্তিতে থাকে।