Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

দেশিক হাজরার কবিতাগুচ্ছ

শেষবেলা

যতটা খিদে পেলে
আর খেতে ইচ্ছে করে না, ঠিক
সেরকমভাবেই একবার ভালবেসো,
ভালবাসা পেতে ইচ্ছে করবে না।
আমাতে মিশছ, আমি তো মিশে যেতে পারছি না।
প্রতিটা বাতাস আমাদের এভাবে স্পর্শ করছে, আমরা ভালবাসছি আমরা হাসছি কাঁদছি, একসাথে ওঠা-বসা করছি। তবুও একে অপরের হতে পারছি না, খাবলে খাবলে অস্তিত্ব খুঁজে চলেছি।
অথচ, তোমার জন্য মনকেমন করে
মনের ভেতর হামাগুড়ি দেয় ব্যাকুলতা, শূন্যতার রাসলীলা চলে। যাই হোক, আমাকে যেতে হবে পূর্বদিকে তুমি এগিয়ে যেয়ো পশ্চিমের শেষ মোড়টার দিকে। এই স্থানের নাম দেওয়া থাক শেষবেলা।

*

কান্নাতরী নদীটির তীরে

কর্পূরের মতো উধাও হয়ে যেতে এক তিল তাপমাত্রার প্রয়োজন। চাঁদের কলঙ্কের মতো দাগ রেখে পুজো হতে থাকা তুমি, অস্তিত্ব হাতড়াতে অস্বীকার করবে মানুষ বিশ্বাস করবে এটাই সহজ এর থেকে সহজ কিছু নেই।

ভেবেছিলাম কেঁদে ভাসিয়ে দেব,
তোমার উঠোন ঘেঁষে বয়ে যাবে নদী যার নাম রাখব কান্নাতরী। দুটো যাযাবর পাখি ফেলে আসা স্মৃতি ধুয়ে নেবে সেই জলে, নদীর এপার ওপার জুড়ে শিমুলের বাগান। তুমি তীরে বসে ভাসিয়ে দেবে কাগজের ডিঙি, একমুঠো বাতাস অস্তিত্ব উড়িয়ে নিয়ে যাবে তার। তুমি হাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরতে চাইবে। নিজের বুকের পাঁজর খুলে খুলে দেখতে থাকবে তারপরও আবার অস্বীকার করবে।

এরপরে, তোমাকে পুড়িয়ে ফেলব ভেবেছিলাম। দেখি, তুমি নিজেই পুড়ে যাচ্ছ, যে কোনও সময় যে কোনও স্থানে আমার গল্প বলছ আমায় খুঁজছ তড়িৎচালিত যান্ত্রিক উপাদানে।

তবু মনে হয় নেই, কোথাও নেই। তোমার মনে নেই আমি। তোমার দুঃসংবাদের অটল বৃত্তে নেই। তোমার মনস্তাপে নেই তোমার প্রীতি-করে নেই।

আছি কেবল একটা ভাসমান পদ্মফুলের মতো যা ভেসে যাবে ওই নদীর ধারার দিক ধরে, চন্দ্র দিবসের ভাটার টানে।

*

প্রেম বিলাপ

আমাকে ভেঙে-গড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে চলে গেলে। আমার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো এখন একা একাই বাঁচে। দহনমূলক যে ক’টা কবিতা লিখেছিলাম— তুমি চলে যেতে এখন বড্ড বোকা বোকা লাগে। কোন এভারেস্টের পাদদেশের শীতল আবহাওয়া যেমন একটুকরো রোদ ভালবাসে, দু’টি গাছ যেরকমভাবে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাষাহীন আদান-প্রদান করে— তোমার সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা এমন। ভাল কী খারাপ আছ এখন কিছুই জানার অধিকার নেই— শুধু তুমি বেঁচে আছ— কিছু লেগে থাকে সম্পর্কের দল বলে দিয়ে যায় বারে-বারে।
এখানে একটি মজার কথা হল— প্রতিবার তোমাকে ভুলে যাবার যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাই তা নিমেষেই জল ঢেলে দিয়ে যায় আমাদের ঘিরে থাকা পরিচয়-টা। সকালবেলার আকাশ দেখলে মনে হয় শুধুই শূন্য, কিন্তু কে জানে— কত নক্ষত্রের প্রজন্ম লুকিয়ে আছে আমাদের মতো।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

স্বামী বিবেকানন্দ : প্রয়াণদিনে স্মরণ

বিবেকানন্দই সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক বাঙালি তথা ভারতীয়। রবীন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ১৯১২-পর্বে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় যাওয়ার পর, এবং তার পরের বছর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে। কিন্তু এর প্রায় কুড়ি বছর পূর্বেই বিবেকানন্দ শিকাগো-বক্তৃতা ও আমেরিকা-ইয়োরোপে এক নাগাড়ে প্রথম দফায় চার বছর থাকার সুবাদে আমেরিকার বিদ্বজ্জনমহলে যেমন, তেমনই জার্মানির মাক্সমুলার, ফ্রান্সের রোমাঁ রোলাঁ, রাশিয়ার টলস্টয় প্রমুখের শ্রদ্ধা এবং মনোযোগ আদায় করেন।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

প্রফুল্ল রায়: ব্রাত্য সময়ের কথাকার

প্রফুল্ল রায় নাকি অতীশ দীপঙ্করের বংশের। দেশভাগের অভিশাপেই দেশছাড়া হতে হয় তাঁকে, ১৯৫০-এ। একটা বিধুর বিষয় আমরা লক্ষ্য না করে পারি না। দেশভাগ সুনীল-শ্যামল-মহাশ্বেতা-শীর্ষেন্দু-অতীনদের কেবল ভূমিচ্যুত করেই ছাড়ল না, এমনকি তাঁদের কারুবাসনাকেও অন্যতর রূপ দেওয়ালো। দেশভাগ না হলে আমরা সুনীলের হাতে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, শীর্ষেন্দুর ‘দূরবীণ’ বা প্রফুল্ল রায়ের ‘পূর্বপার্বতী’ পেতাম না, যেমন পেতাম না শওকত ওসমানের ‘কর্ণফুলি’ বা হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি।’

Read More »
শৌনক দত্ত

মন্দ মেয়ে ভদ্র অভিনেত্রী: সুকুমারী দত্ত

বিনোদিনী দাসীর বর্ণময় জীবনের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া এই ‘তারকা অভিনেত্রী’-র বহুমাত্রিক জীবনটিও কম রঙিন নয় বরং বিস্মৃত নক্ষত্র এক, যিনি ১২৮২ বঙ্গাব্দের ৩ শ্রাবণ (১৮৭৫ খ্রি., মূল্য ছিল ১ টাকা) ‘অপূর্ব্বসতী’ নাটকটি লিখে বাংলা নাট্যাতিহাসের প্রথম নারী নাট্যকার হিসেবে সুবিদিত হয়ে আছেন।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস ও কালিদাস

পণ্ডিতেরা তর্ক তুলেছেন, কালিদাস ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ লেখেননি৷ কেননা একেবারে পয়লা আষাঢ়েই যে মেঘ নেমে বৃষ্টি আসবে, তা হয় না। তাঁদের মতে, ওটা আষাঢ়ের শেষদিন, ‘আষাঢ়স্য প্রশম দিবস’ হবে। কিন্তু প্রথম দিবস-ই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এবং তা এতটাই যে, কালিদাসকে নিয়ে ভারত সরকার যে ডাকটিকিট বের করেছে, সেখানে ‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে’ শ্লোকটি উৎকীর্ণ।

Read More »
রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »