
সুব্রত মজুমদারের ছোটগল্প
চিল্পা ছুটি আমার কাছে অভিশাপ। দীর্ঘ কোনও ছুটি পেলেই মন তাই আনন্দে ভরে ওঠার পরিবর্তে কেঁপে ওঠে। এই কোনও অঘটন ঘটল। অঘটন ঘটেও। তবে অঘটনের

চিল্পা ছুটি আমার কাছে অভিশাপ। দীর্ঘ কোনও ছুটি পেলেই মন তাই আনন্দে ভরে ওঠার পরিবর্তে কেঁপে ওঠে। এই কোনও অঘটন ঘটল। অঘটন ঘটেও। তবে অঘটনের

India’s First Bengali Daily Journal. আপনি যদি পাকা আমের দিকে তাকিয়ে সেটা খাওয়ার বাসনা রেখে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে হয়তো আপনার পরবর্তী জন্ম হবে আমের পোকা হিসেবে। ডাইনিং টেবিলে খোসাছাড়ানো আমের টুকরো কাঁটাচামচ দিয়ে তুলে খাওয়ার সৌভাগ্য হবে না। ‘যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধি ভবতি তাদৃশী।’ বিজ্ঞানও বলে, মৃত্যুর পূর্ববর্তী চিন্তা মস্তিষ্কে থেকে যাওয়ার কথা। এ নিয়ে হলিউডে একটা সিনেমাও হয়েছিল। একটা বিস্ফোরণ এড়ানোর জন্য ট্রেনের এক যাত্রীর মধ্যে ভবিষ্যৎ থেকে স্মৃতি পাঠানো হয়েছিল।

India’s First Bengali Daily Magazine. বাঁদর প্রশিক্ষিত ও বুদ্ধিমান, সে বাঁদরওয়ালার ঝোলা থেকে একটা তাবিজ বের করে রুষার হাতে দিল। মাত্র চার হাজার টাকা। একটা মূল্যবান জীবনের দাম। তবে শর্ত একটাই, কথা কম বলতে হবে। এক-একটা শব্দ মানে মৃত্যুর দিকে এক সেন্টিমিটার এগিয়ে যাওয়া। আর সেদিন থেকেই রুষা চুপ। প্রয়োজনেও কথা বলতে চায় না। ঈশারায় জানিয়ে দেয়। প্রতীক প্ররোচিত করলেও মুখের অর্গল খোলে না। জীবন সবার উপরে, তার নিচে সব। কোনওভাবেই মুখ খুলবে না সে।

India’s First Bengali Daily Journal. মাদলের তালে তালে নাচতে লাগল গণেশ। ঘরের ভেতরে দাদুও নাচতে শুরু করেছেন। কাছাখোলা নৃত্য। ভূতেদের গানে কিন্তু ভাটা পড়েনি। একনাগাড়ে মাদল-মৃদঙ্গ-ঝনঝনি-খঞ্জনি বেজেই চলেছে। গণেশও দমবার পাত্র নয়, সে আর-একটা মোক্ষম অস্ত্র বের করে আনল। একটা মাছধরার জাল। ভূতেরা নাকি জালের প্রান্তে লেগে থাকা লোহার কাঠিকে যথেষ্টই ভয় পায়। দেখা যাক কামাল। ভূতেদের লক্ষ্য করে জাল ছুড়ল গণেশ। কিন্তু ঠিক তখনই একটা প্যাচপ্যাচে কিসে যেন পা হড়কে ‘চিঁ-ধপ্’। আর জাল এসে পড়ল সবজান্তা গণেশেরই ওপর।

তাঁর স্থান ও কাল নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। সবার কাছেই কবি জয়দেব তাদের ভূমিপুত্র। আমরা বাঙালিরা যেমন বলি, তিনি আমাদেরই লোক; তেমনই ওড়িয়া, মারাঠি এবং গুজরাতিরাও জয়দেবকে নিজেদের ভূমিপুত্র বলে দাবি করে থাকেন। দক্ষিণ ভারতের লোকেরা তাঁকে দক্ষিণ ভারতীয় বলেও দাবি করেন। যদিও তথ্যগত দিক থেকে বাংলা আর ওড়িশার দাবিই অধিক। আসুন দেখি, এই তথ্যগত দাবিতে কে জেতে কে হারে।

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।