Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আজগুবি হিসেব

গল্পটা শুরু ভগবান ঘুম থেকে উঠে পড়ার পর।

উঠে দুটি বড় হাই তুলে চারিদিক দেখে তো চোখ ছানাবড়া। একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানোর যো নেই? তাড়াতাড়ি পাশে রাখা প্রেসারের ওষুধ খেয়ে ভীষণ রেগে ল্যাপটপে বিজ্ঞপ্তি লিখতে বসলেন। অনেক হয়েছে আর নয়। রাশ টানতেই হবে। ছি ছি, চুরি ডাকাতি আর মিথ্যাচারে একেবারে যাচ্ছেতাই মাখোমাখো অবস্থা। একেবারেই চলবে না। সব হিসেব হবে। কিছু হিসেবরক্ষক তুলে আনো। তারা সঠিক হিসেব করবে অতিরিক্ত দেনাপাওনার। কোনও কথা নয়, কোনও ছুতো নয়, কোনও যুক্তি নয়। স্যাট করে তুলে নিয়ে আসবে যমরাজ। তুলে নিয়ে আসবে— এই একটা ভয় থাকতে হবে। এতদিন ঘুমিয়ে থেকে বিচ্ছিরি কিছু লম্পট, মিথ্যেবাদী, চোর-ডাকাতের হাতে চলে গেছে সব। চোরের কাজ চুরি করা, সে সেটাই ভাল পারে। তাকে অন্য কাজ দিলে তো সর্বনাশ হবেই। প্রথমে ভয়টা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

এই ধরো, ছোটকাকা ছাদ থেকে সোলার উড়ন্ত সাইকেলে অফিস গেল। যেতে যেতে ছিপিদের উড়ন্ত ঘুড়িটা আকাশে টান দিয়ে ছিঁড়ে দিয়ে গেল। ছিপি পাশের পাড়ার বন্ধু। এখন সব ভাল ভাল নাম শেষ। তাই এখন ডাকনাম চলছে ছিপি, বল্টু, নাট, স্ক্রু, এইসব। ছিপিদের খুব দেমাক। চণ্ডীর মনে হল— খুব ঝামা ঘষে দিয়েছে কাকা। ছোটকাকার মতন উড়ন্ত সাইকেল তো নেই। কাকা টিফিন ছাড়া চলে গেল দেখে কাকিমা টিফিনের ট্যাবলেটগুলো নিয়ে পিছন পিছন দৌড়ে ছাদে চলে এল। কাকা তখন মাঝ আকাশে। কাকিমা আর কী করে, আকাশের দিকে দুহাত ঠেকিয়ে নমো নমো করল। তারপর ছাদে রাখা সোলার প্যানেলগুলোর তলায় বোনা ধনেপাতা কিছু তুলে নীচে চলে গেল।

আকাশে এখনও ঠিকঠাক রাস্তা হয়নি। যে যেমন খুশি তেমন হাইটে চালায়। হঠাৎ হঠাৎ উল্টো দিক থেকে আরও এরকম গাড়ি, ব্যাটারিচালিত সাইকেল, ট্রাক চলে এলে সে এক বিশ্রী কাণ্ড। যদি কেউ সেরকম ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়লে— দুমদুম দমাস, মাথা ফেটে, পেট ফেটে একাকার। মাঝে মাঝে সব জড়ো করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জোড়া লাগিয়ে আবার বাঁচিয়ে দেয়, তবে সেটা খুব কম। কোথায় সব নাটবোল্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে তার কোনও ঠিক আছে? এর মধ্যে যদি মুখোমুখি ব্যাপারটা ময়দানের ওপর হয় তাহলে তো চিত্তির, কিছুই পাবার কোনও সম্ভাবনাই নেই। পুরোটাই ছবিতে সাবাড়।

ওহ! বলা হয়নি যে, ময়দান তো তখন ওপেন চিড়িয়াখানা। চারিদিকে উঁচু জাল দেওয়া। পিছনে ফোর্ট বা পাশে ভিক্টোরিয়া, ডান পাশে মনুমেন্ট, সামনে জহরলাল নেহরু রোড। বড় বড় গাছ বাঘ সিংহ কুমির হনুমান পাখি সবাই খোলা আছে। একমাত্র ঘেরা গাড়িতে ঘোরা যায় ভিতরে।

তাহলে লোকজন কোথায় গেল, তাই তো? আছে তো। কলকাতার বড় বড় উঁচু বাড়িগুলো থেকে রোপওয়ে রয়েছে দূরের আর-এক বাড়িতে যাবার। তারপর লিফট টাওয়ার দিয়ে নিচে নেমে অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায়। উঁচু বাড়ির ছাদগুলো কাজ লাগিয়ে এই যাতায়াত সম্ভব হয়েছে। খুবই কম রাস্তায় বাস, গাড়ি চলাচল করে। চললেও সব সোলার ব্যাটারিচালিত গাড়ি। রাস্তার পাশে টানা রয়েছে সোলার প্যানেল।

ছোটকাকা তো চলে গেল, কাকিমা, মা, চণ্ডী, দাদু এদিকে সকাল থেকে ঠকঠক করে কাঁপছে। আজ আবার ‘টাকা ফেরত ডে’। এই এক অদ্ভুত দিন হয়েছে। প্রথম প্রথম মাইক করে পাড়ায় পাড়ায় বলা হয়েছিল পার্কে পার্কে দেওয়া হবে। তাতে এমন ভিড় হল পার্কের আশেপাশে রাত থেকে যে, বেশ কিছু মানুষ অফিসে যেতে পারল না, কিছু রুগি মারা গেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেল না। কলকাতায় জ্যামের রেকর্ড হয়ে গেল। প্রথমে জড়ো হল— তারপর যে যার জায়গায় গেল। সারাদিন এমনকি রাত অবধি জ্যাম রইল। তাই ঠিক হয়েছে এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে ফেরত টাকা।

দাদু বলেছিল, কত কী দেখব কে জানে! টাকা ফেরত দেয় নাকি কেউ? আজ অবধি শুনিনি। এর আবার অন্য কিছু ধান্দা আছে নিশ্চয়।
কাকা খবর নিয়ে এসে বলল, ‘আছে তো। ওই যে স্যাট করে? বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে তাতেই কাজ। কেউ কেউ দেখতে চেয়েছিল কিছু চুপি চুপি রেখে বাকিটা ফেরত দিতে। ও বাবা! কথা নেই বার্তা নেই, ফটাক সে কলাগাছের মত পড়ল আর মরল। যমরাজ হিড়হিড় করে ঠ্যাং ধরে টেনে নিয়ে গেল। সে এক বিশ্রী ব্যাপার। তারপর ইমেজ বলে একটা কথা আছে না? অন্য কিছু অপমান করলে কে সামলাবে? ভগা খেপলে কিছু বিশ্বাস নেই।’

যে যেখানে যত বেশি নিয়েছে সব রাতারাতি ফেরত দেবার হুজুক উঠেছে।

সুভাষবাবু বাড়ি করেছেন অনেক কষ্ট করে সর্বস্বান্ত হয়ে। যা হিসেব করে নেমেছিলেন তার প্রায় দ্বিগুণ গেছে। জিজ্ঞাসা করলেও বলেন না কারণটা। কারণ বললে যদি মরণবারি বর্ষিত হয়? সেই সুভাষবাবুর বাড়ি চলে এল টাকাওয়ালা। একেবারে মুটে মাথায়। বাইরের ঘরে সব টাকার বস্তা নামিয়ে গামছা দিয়ে মুখ মুছে বললে, ‘দাদা বুঝে নিন।’

সুভাষবাবু প্রথম ভাবলেন ডাকাত এসেছে মুটে করে সব নিয়ে যাবে। কেমন ভেবলে গিয়ে সব ভিজিয়ে ফেলেন আর কী। কাঁপা গলায় বললেন, ‘কী বুঝে নেব?’

ঘাম ফেলে সে বললে, ‘সে তো জানি না। বাজার দামের যা বেশি নেওয়া হয়েছিল মালমশলার জন্যে, সব ফেরত। সই করে দিন।’

‘আপনি?’

‘আরে চিনতে পারছেন না?’ গলা নামিয়ে বললে, ‘না চেনাই ভাল। আমিই তো সেই। আপনাদের এই এলাকার দেখভালের দূত।’

সুভাষবাবু সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন, ‘আরে কী কাণ্ড, আপনি নিজে কেন? তাও আবার মাথায় করে এইসব? কেউ দেখেনি তো? আপনার মানসম্মান বলে কথা। ছি ছি এটা কেন আবার?’

‘আছে আছে। আপনার জানার কথা নয়। সে এক হুলিয়া বেরিয়েছে।’

‘হুলিয়া? কী এমন হুলিয়া বেরল যে, আপনি একদম মাথায় করে। আমি তো কিছু চাইনি আপনার কাছে স্যার।’ অজান্তে ভয়ে গলা দিয়ে স্যার বেরিয়ে যায়।

মাথা নাড়িয়ে হাত ঝাঁকিয়ে বললে এলাকার পরিচিত দূত বিনোদ চামারিয়া। ‘জানেন না যখন, তখন আর জেনে কাজ নেই। তবে চুরি, ডাকাতি, লোক ঠকানো কিছু করে থাকলে রাতারাতি ফেরত দিন দাদা।’

‘আমি তো ভাই তেমন কিছু করিনি।’

বিনোদ মুখে এক অবিশ্বাস্য তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বলে, ‘কিছুই করেননি? যা! এমন কি হতে পারে নাকি?’

‘ওই সামান্য ব্যাংক লোন পাইয়ে দিয়েছিলাম ম্যানেজার হিসেবে, তার জন্যে যৎসামান্য।’

‘তাহলে সামনের ক্লাবে বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে দেখে নেবেন, আপনি কী করবেন। আমায় দাদা ছেড়ে দিন কাগজে সই করে। আমি কলাগাছ হতে চাই না।’

‘কলা গাছ? এখানে কলাগাছ এল কোথা থেকে?’

‘ওরে বাবা! আপনি তো অনেক পিছিয়ে। বিজ্ঞপ্তি পড়ুন, সময় নেই। পেরিয়ে গেলেই কলাগাছের মতন পড়বেন। নিন মশাই, আমায় ছেড়ে দিন। আরও কত জায়গায় ফেরত দিতে হবে তার ঠিক আছে! এত বছরের রাজনীতির ঠিকেদারি— লম্বা লিস্ট বুঝতেই পারছেন।’ সই করে দিতেই হনহন করে গলায় গামছা ঝুলিয়ে নেতা ঠিকরে বেরিয়ে যায়।

বস্তা ভর্তি টাকা নিয়ে সুভাষবাবুর ঠকঠক করে প্রথমে হাত, পরে পা ও বুক কাঁপতে থাকে। কী অমঙ্গল হল কে জানে। এরপর আসবে ডাকাত। সে এসে সব নিয়ে নেবে। কবে আবার এরাই এসে যদি বলে ফেরত চাই, তখন? এদের কিছু বিশ্বাস নেই।

মাথা বাইবাই করে ঘুরতে থাকে। এরা তো হাত খালি করে দিল, সুভাষবাবুর কী হবে? চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন কিছুদিন। কাকে কাকে ঠকিয়েছেন কেমন করে, সে কি মনে আছে?

সুভাষবাবু সবে চায়ের কাপ নিয়ে সোফায় বসেছেন। কাজের কাজের মাসি মালতি বললে, ‘দাদা, কে একজন ডাকছে দাদা বাইরে। মনে হয় লরির ড্রাইভার।’

বারান্দায় আসতেই পাঞ্জাবি শিখ ড্রাইভার একটা কাগজ এগিয়ে দেয়, ‘সাব, এই বাড়িটা কোথায় হবে?’

‘আরে, এ তো আমার বাড়ির ঠিকানা লেখা।’ মুখ তুলে জিজ্ঞাসু নয়নে বলেন, ‘কী ব্যাপার বলুন তো?’

ড্রাইভার দুহাত জোড় করে বলে, ‘মাপ করবেন, শ্যাম আগরওয়াল পাঠিয়েছে।’

‘কী পাঠিয়েছে?’

‘ওই যে দেখুন সব।’

চোখ কপালে উঠে যায়। বস্তা বস্তা চাল ডাল, তিন টিন তেল, ময়দা।

‘অ্যাঁ, এত কী? নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে।’

‘না বাবু। আপনি নিজেই কথা বলে নিন’ বলে ফোনটা এগিয়ে দেয়।

বাজারে শ্যাম আগরওয়ালের মুদির দোকান। সোনার চশমা পরা তেল চপচপে মালিক, ভাল করে কথাই শুনতে চায় না। তার গলা থরথর করে কাঁপছে। সুভাষবাবু পরিচয় দিতেই বমি করার মত গড়গড় করে বলে যায়, ‘এত ক্যাশ রাতারাতি কোথায় পাব বলুন দিকি? তাই জিনিসই পাঠিয়ে দিয়েছি। একটু কষ্ট করে রেখে দিন। এ আমি আর রাখতে পারব না। জীবনমরণ সমস্যা মশাই।’

সুভাষবাবুর আরও গুলিয়ে যায়। ‘আরে, আমি তো কিছু অর্ডারই করিনি, তাহলে আপনি এত কেন জিনিস পাঠিয়েছেন?’

‘আরে, কিছু মনে করবেন না, এগুলো আপনার পাওনা। এত বছরে যা বেশি বেশি নিয়েছি, সব কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দিতে হবে স্যার। আমি তাই করছি। দয়া করে নিয়ে আমাকে বাঁচান।’ কান্না জড়ানো গলায় বলেই ফোন রেখে দেয়। মনে হল আর-একটু হলেই কেঁদে দেবে।

ফোন রাখতেই বাবা যে নার্সিংহোমে শেষ ছিল তাদের ফোন। হাসপাতালের অ্যাডমিন জিজ্ঞাসা করে, ‘স্যার, এবার সব ঠিক আছে তো? মেসেজ পেয়েছেন?’

‘কীসের মেসেজ? কী ঠিক আছে?’

‘এই যে আপনি বাবার বডি নেবার সময় এত চিৎকার-চেঁচামেচি করলেন ‘বিল বেশি বিল বেশি’ বলে, তার জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার অ্যাকাউন্টে এক্সট্রা টাকা ফেরত দিয়েছে। দয়া করে অ্যাকসেপটেন্স জানিয়ে দেবেন, মেসেজ করে দেবেন।’ ফোনটা কেটে গেল। ফোন মেসেজ ঢুকল টাকা ফেরতের।

মেসেজ আসতেই থাকল ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান, পেট্রোল পাম্প— সব জায়গা থেকে মেসেজ এসেই যাচ্ছে। কুঁক কুঁক করে মেসেজ ঢুকেই যাচ্ছে। মাথা কাজ করছে না।

টিভি খুলতেই দেখা গেল, সেই একই খবর। লাইন ব্যতিব্যস্ত, ভীত, সন্ত্রস্ত অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি করছে। যে যেরকমভাবে পারে সব ফেরত দিচ্ছে। কোনও সময় টাকা, কোনও সময় জিনিস দিয়ে।

বুকের মধ্যে দুপদুপ শব্দ। আজি কি পৃথিবীর শেষদিন? হাত-পা ভিতরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে। হলটা কী? যা সবাই ফেরত দিয়ে দিল, তাতে তো পুরো বছর চলে যাবে।

রাস্তা দিয়ে উদভ্রান্তের মত নেতা, ব্যবসায়ী, মাস্তান, গুন্ডা, বাটপারদের মিছিল চলেছে। বারান্দা থেকে মানুষ মাথা ঝুঁকিয়ে দেখছে। কারুর মাথায় বোঁচকা, কারুর বগলে টাকার বান্ডিল।

এইবার মন খুশ। ভগবান খুব হাসছেন। হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। ধরে রাখতে গেলে, ভয় পেতে হবে। মৃত্যুভয়, পাপের ভয়, চুরি-ডাকাতির ভয়।

আদেশ দেন, যাও, ময়দানে দাঁড় করাও সেই বোকাহাবা ছেলেটাকে, যে ভিড়ের মধ্যে ‘রাজা তোর পরনের কাপড় কই?’ বলে মিলিয়ে গিয়েছিল। দরকার হলে গোরুখোঁজা খুঁজে তাকে ধরে আনো। তারপর ওর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে, সেই রাজা এখন কোথায়? যে দেখতে পায় না নিজের লজ্জা নিবারণের জন্যে পরনে কোনও কাপড় আছে কী নেই। ছেলেটিকে ধরে সেই প্রজাদের কাছে পৌঁছতে হবে, যারা সায় দিয়েছিল রাজার পরনে কাপড় আছে বলে। সব হিসেব নিতে হবে। কিছুই বাদ যাবে না। পৃথিবী পুনর্নির্মাণের সময় এসেছে। জঞ্জাল বাদ দিতে হবে।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »