Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

১. রূপকথা।।

জীবনের চেয়ে বড় রূপকথা আর হয় না, বলেছিলেন রূপকথাকার হ‍্যানস এন্ডারসন। ওই যে মাদুরের ওপর বসে হারমোনিয়াম নিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে একের পর এক গান গেয়ে চলেছে চোদ্দো কী পনেরো বছরের কিশোরী, আর তার পাশেই একটি বিশেষ গান তাঁর চেয়ে দশবছরের বড় দিদির কাছে আবদার করেও শুনতে পাচ্ছে না, প্রতিবাদস্বরূপ মাদুরে গড়াগড়ি, দিদির দিকে তির্যক চোখে চাওয়া, এসবের ফলে দিদির বাধ‍্য হয়েই পাঁচ বছরের ছোট্ট বোনটির মনোরঞ্জনার্থে শোনাতেই হয় গানটি, ‘ তৃষ্ণার জল এসো হে’। ওইটুকু মেয়ে, কী বোঝে গানটির? তবু ভাল লাগে। শুনতে ইচ্ছে করে। একবার। দুবার। বারবার। তাই তো মাদুরে হারমোনিয়ামটিকে সাক্ষী রেখে সত‍্যাগ্রহ, অর্থাৎ গড়াগড়ি। অদ্ভুত!

বাড়িটার সবটা না হোক, অনেকটাই অদ্ভুত। পদার্থবিদ‍্যা আর প্লেটো, মেলানো যায়? অথবা পরিসংখ‍্যান আর কাজী নজরুল? শ‍্যামাসঙ্গীত এবং দাবা? এ-বাড়িতে মেলান একজন। ওই যে তাঁর বেসুরো গলায় শুরু হয়ে গেল, ‘বাজবে যে মহেশের বুকে, নেমে দাঁড়া ক্ষেপা মাগী’। তার খানিক পরেই ‘যদি বারণ করো তবে গাহিবো না’। না, বারণ করবেন কোন দুঃখে? গায়কের স্ত্রী সাজেদা খাতুন বরং উপভোগ-ই করেন তাঁর এই অ-সুরসাধক পতিমহদাশয়কে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন‍্যাস উর্দুতে অনুবাদ করার একঘেয়েমি কাটে তাঁর এতে। অন‍্য এক ভাই আবার গজুলে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলসঙ্গীতের পাশাপাশি গজল গান-ও তাঁর প্রিয়।

পরিবারের সদ‍স‍্যসংখ‍্যা? এটা ১৯৪০-৪২, সম্পূর্ণ গণনাটা আপাতত স্থগিত রেখে যদি আর বছর চার-পাঁচ অপেক্ষা করি তো দেখব, আর-এক রূপকথায় যে ‘সাত ভাই চম্পা’ পেয়েছিলাম, তা পাল্টে গিয়ে হয়েছে সাত বোন। তৎসহ চার ভাই। মা। বাবা। রীতিমতো ফুটবল বা ক্রিকেট টিম নামানো যায়। হ‍্যাঁ, শ্রদ্ধেয়া সনজীদা খাতুন সম্পর্কে লিখতে গিয়ে রূপকথার মতোই মনে হচ্ছে সবকিছুই। অন্তিমেও দেখব, তাঁর সুদীর্ঘ একানব্বই বছরের আয়ুষ্কাল, অসংখ‍্য কৃতি, বাংলাদেশের সারস্বত জগৎকে হিমালয়প্রতিম উচ্চে তুলে ধরা, জীবনের পড়ন্ত বেলাতেও নতুন নতুন ভাবনা, রূপকথাকেও হার মানায়।

২. ইতিকথার আগের কথা।।

সনজীদা খাতুন স্বনামধন‍্য পিতা কাজী মোতাহার হোসেনের কন‍্যা। মা সাজেদা খাতুন। পিতা ফরিদপুরের, মা হুগলির। পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন পরিসংখ্যান ও পদার্থবিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পড়াতেন। ছিলেন আচার্য সত‍্যেন্দ্রনাথ বসুর স্নেহধন‍্য। সত‍্যেন্দ্রনাথের নির্দেশেই পদার্থবিদ‍্যায় এমএ মোতাহার কলকাতায় পরিসংখ্যান নিয়ে পড়তে যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ‍্যান বিভাগ চালু করেন। পাশাপাশি নজরুলের চেয়ে দু’বছরের বড় হয়েও তাঁর সুহৃদ, কবি যাঁকে ‘মোতিহার’ ডাকতেন। তিরিশের দশকে যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, আবুল ফজল, তাঁদের মতো তিনিও এতে অংশ নেন। এঁদের মুখপত্র ‘শিখা’-তে লিখতেন। উপমহাদেশে দাবা খেলাকে জনপ্রিয় করার পুরোধা এই মানুষটির ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল। মুক্তমনা ও প্রগতিশীল ছিলেন বলেই তাঁর সন্তানদের অনেকেই বাংলাদেশের এক এক কিংবদন্তিতে পরিণত হতে পেরেছিলেন। প্লেটোর ‘SYMPOSIUM’ অনুবাদ করেন তিনি। লিখেছেন গণিতশাস্ত্রের ইতিহাস, নজরুলের কাব‍্যের আলোচনা-সহ বহু গ্রন্থ। স্ত্রী সাজেদা খাতুন বঙ্কিমচন্দ্রের দুটি উপন‍্যাস উর্দুতে অনুবাদ করেন।

সনজীদাকে রূপ দিয়েছে একদিকে তাঁর পরিবার, অন‍্যদিকে সমসময়। ১৯৩৩-এ জন্ম তাঁর, এক সংস্কৃতিবান পরিবারে। পিতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ‍্যাপক। স্বভাবতই বাড়িতে একটি সারস্বত পরিবেশ ছিল। সেগুনবাগিচায় থাকতেন তাঁরা। বাড়িতে প্রায়শ গুণী মানুষদের আনাগোনা। আর নানা সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক আন্দোলনে তাঁর শৈশব-কৈশোর-যৌবন পরিব‍্যাপ্ত। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই যা চলমান। সনজীদার চলার পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, যদি সেসময়কার যাবতীয় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনি।

যখন পাকিস্তান জন্ম নেয়, সনজীদা তখন চোদ্দো বছরের। তার আগে থেকেই পাকিস্তান আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব, পঞ্চাশের মন্বন্তর, ছেচল্লিশের দাঙ্গার কাল সময় পেরিয়েছে উপমহাদেশ। স্বাধীনতার পর পর শুরু হল পশ্চিমাদের শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গবাসীর নতুন করে লড়াই। দশকের পর দশক বিচিত্র মাত্রায়। বাহান্নো, চুয়ান্নো, ছাপ্পান্নো। বিশদ করব না, জানা তথ‍্য। গোটা ছয়ের দশকটি ছিল একাত্তরের রিহার্সাল, সব দিক থেকেই। কী রকম?

গোড়াতেই একটা জিনিস মনে রাখা জরুরি, সনজীদা খাতুনের সংস্কৃতিজগতে যে মহতী ভূমিকা, তা পরম্পরাবাহিত। পিতা ও পরিবার থেকে তিনি মুক্তবুদ্ধি নিয়ে এগোবার প্রশ্রয় পান একদিকে, অন‍্যদিকে শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীতে পাঠগ্রহণের সুযোগ তাঁর জীবনাদর্শ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী যখন, সৈয়দ আলী আহসান এমনভাবে রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ পড়াতেন, যা তাঁকে রবীন্দ্রনাথের কাব‍্য এবং গানের প্রতি প্রগাঢ় প্রীতি এনে দেয়। ফলে তিনি অবিলম্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতে শুরু করেন। আজিমপুরে যেতেন সেগুনবাগিচা থেকে বাসে করে, ‘মুড়ির টিন’ বলে ব‍্যঙ্গ করা হত যে সিটি সার্ভিসের বাসগুলিকে। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিযুগে লীলা নাগ থেকে শুরু করে ফজিলাতুন্নেসা, এঁদের পরম্পরাই তো সনজীদা! যে আগ্নেয়তা বাঙালির মধ‍্যে প্রথমতমা এমএ পাশ মহিলা তথা উচ্চশিক্ষার্থে বিলেতযাত্রী ফজিলাতুন্নেসার বক্তৃতায় উঠে এসেছিল ১৯৩০-এ (সনজীদার জন্মের আগে!) কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ‘বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ – সেবক সঙ্ঘ’ আয়োজিত বক্তৃতায়, তার মর্মমূলেই তো রয়েছে সনজীদা তথা বাঙালি নারীমাত্রের-ই উদার আকাশের প্রতি আহ্বান! ফজিলাতুন্নেসা সেদিন সমাজ ও সভ‍্যতার বিকাশে পুরুষের সঙ্গে নারীর অধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘The highest form of society is one in which every man and woman is free to develop his or her individuality and to enrich the society what is more characteristic of himself or herself.’ এই যে সমাজে নারীপুরুষের সহযোগী হয়ে এগোনোর কথা বলা হল, তার সম্প্রসারণ-ই তো সনজীদার আত্মজীবনীর দৃঢ় ঘোষণার মধ‍্যে স্পষ্ট: ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার কাজের ক্ষেত্র। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র’। পরম্পরা একেই বলব। এই পরম্পরার মধ‍্যে সনজীদার ইডেন কলেজে পড়ার ভূমিকাটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা দীর্ঘ দশ বছর ধরে ফজিলাতুন্নেসাই তো কলেজটিতে অধ‍্যক্ষতা করেছিলেন, ডিগ্রি কলেজে দাঁড় করিয়ে গেছেন কলেজটিকে।

পথ মসৃণ ছিল না। পূর্ব পাকিস্তান জন্ম থেকেই অভিশপ্ত। পাকিস্তান আন্দোলনের পেছনে যেসব বাঙালির অবদান, পাকিস্তান জন্ম নিতে না নিতেই ব্রাত‍্য হয়ে পড়লেন তাঁরা। ১৯৪০-এ ঐতিহাসিক ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ উত্থাপিত হয়েছিল যাঁর মুখ দিয়ে, সেই শের এ বাংলা ফজলুল হক, বা মুসলিম লীগের প্রাগ্রসর নেতারা–, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ আজ আর গুরুত্ব পাচ্ছেন না নবজাত দেশটিতে। অর্থনীতি রাজনীতি ধর্ম শিক্ষা সবকিছুই পশ্চিমাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর নাম নয়া ঔপনিবেশিকতা।

অতএব দ্রোহ। ভাষা আন্দোলনে যার সূত্রপাত, আর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যার সমাপ্তি। মধ‍্যপর্বে কত প্রহরান্তের পাশফেরা! এর মধ‍্য দিয়েই পথ কেটে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে হয়েছে সনজীদাকে, তাঁর মতো আরও বহু মুক্তিপথের পথিককে। ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি, বারে বারে করিস নে ভয়’, রবীন্দ্রনাথের এমন বাণী থেকে সমিধ সঞ্চয় করেছেন তিনি ও তাঁরা। একটু ফিরে দেখি। সনজীদা কোন প্রতিকূলতা থেকে আগুনপাখির মতো জেগে উঠেছেন, বোঝা যাবে তাইতে।

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, ঐতিহাসিকতাকে সমীহ করলে, পিতা কাজী মোতাহার এবং কন‍্যা সনজীদা যুগপৎ তাঁদের দায়বদ্ধতা পালন করেছেন। ষাটের দশকে বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল। একাত্তরকে বাস্তবতা দিতে এই দশকের ভূমিকা অসীম। ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ, বহুলাংশেই ছিলেন পশ্চিমাদের শোষণের প্রতিবাদে সোচ্চার। বিশ্ব ইতিহাসেই তখন প্রলয়নিনাদ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, গণ আন্দোলন আর অসুন্দরের বিরুদ্ধে জেহাদ। জাপান-মার্কিন চুক্তির বিরুদ্ধে সে দেশের মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, মার্কিন সাম্রাজ‍্যবাদ কঙ্গোর প‍্যাট্রিস লুমুম্বাকে হত‍্যা করে আফ্রিকার দেশে দেশে বিদ্রোহের বারুদ ছড়িয়েছে, ফ্রান্সে ছাত্র আন্দোলন, ব্রাজিল, গায়না, বর্মা (এখন মায়ানমার), সুদান– সর্বত্র রক্তের দামামা গোটা দশক জুড়ে। ইরান ফুঁসছে রেজা শাহ্ পহলবি-র ‘White Revolution’ নিয়ে, হল‍্যান্ডে কৃষকবিদ্রোহ, আমেরিকায় জন কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং হত‍্যা, সর্বোপরি ছ’বছর স্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৬৭-৭৩)।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে খোদ আমেরিকাতেই ‘The Days of Rage’ আয়োজিত হয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারকে দায়ী করে। ফিলিপিনসে কমিউনিস্ট আন্দোলন ও ভারতে নকশালবাড়ির অভ‍্যুদয়কেও আমাদের মনে রাখতে হবে। বিশ্বপরিস্থিতির সমান তালে এগোচ্ছিল বাংলাদেশের-ও ভাগ‍্যতরী। আর হুঁশিয়ার হয়ে তরী বাইছিলেন বাংলাদেশের সুধীজন, এবং সনজীদা খাতুন।

৩. অথ সনজীদা কথানক।।

সনজীদা বরাবরই শিল্প ও সৌন্দর্যকে পুরোধা করে এগিয়েছেন। পড়াশোনার প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহ ও ঐকান্তিকতা থেকেই বাংলা সাহিত‍্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাতে অনার্স করেছেন। অতঃপর তাঁর শান্তিনিকেতনে পড়ার সুতীব্র ইচ্ছেকে বাধা দেননি পিতামাতা। সেখান থেকে এমএ পাশ করার পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত-ও শিখেছেন খানিকটা শান্তিদেব ঘোষ ও অনেকটা কণিকা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের কাছে। গান তিনি শিখে আসছিলেন কামরুন্নেসা স্কুলে পাঠরত অবস্থা থেকেই। সঙ্গীতানুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন। এগারো ভাইবোনের সংসার হলেও পিতা কোনও ছেলেমেয়ের কারুবাসনা অপূর্ণ রাখেননি। সনজীদার রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রীতি কিন্তু বিশেষভাবে গড়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে অনার্স পড়াকালীন অধ‍্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের ‘সঞ্চয়িতা’ পাঠদানের ফলশ্রুতিতে। ওই যে রবীন্দ্রনাথকে ধরলেন, চিরসখার মতো আজীবন মূলত তাঁকে নিয়েই ছিলেন।

ফিরে এলেন শান্তিনিকেতন থেকে। যুক্ত হলেন অধ‍্যাপনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগ সে-সময়কার এক অত‍্যুজ্জ্বল বিভায় মণ্ডিত ছিল। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আনোয়ার পাশা, নীলিমা ইব্রাহিম,– এক পরিকীর্ণ সারস্বতকুঞ্জ! পরবর্তীকালে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহমদ শরীফ চেয়ার-পদে আসীন হবেন, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের অনেককেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ‍্যাপকরূপে দেখতে পাবেন।

১৯৫৬-তে বিবাহ। ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে। যোগ‍্যের সঙ্গে যোগ‍্যের মিলন। ওয়াহিদুল সাহেব সাংবাদিক ছিলেন। আর মননে-চিন্তনে-স্বপ্নে-আদর্শে-দিনযাপনে রবীন্দ্র-অন্তপ্রাণ, প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল মানুষ। স্বামী-স্ত্রী মিলে বাংলাদেশের নন্দনভুবনকে হীরকোজ্জ্বল করলেন একেবারে। ওয়াহিদুল হক (১৩/০৩/১৯৩৩-২৭/০১/২০০৭) আজ আর নেই, তবে শাশ্বত অগ্নিশিখা, আগুনের পরশমণি হয়ে জেগে, উত্তরোত্তর প্রদীপ্ত হয়েছে তাঁদের হীরকদ‍্যুতির কারুবাসনাসমূহ।

সনজীতা খানিক পরবর্তী পর্বে আবার গেলেন শান্তিনিকেতনে। গবেষণা করতে। সনজীদার অন‍্যতম পরিচয় লেখক-গবেষকরূপে। ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’ ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু। শান্তিনিকেতন তাঁর সতত শান্তির স্থান। বিশ্বভারতী-ও তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিভূষিত করে এই আশ্রমকন‍্যাকে বরণ করতে কুণ্ঠা প্রকাশ করেনি। আর কলকাতার টেগোর ইনস্টিটিউট তাঁকে যথার্থত সম্মানিত করেছে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ শিরোপা দিয়ে। তার-ও অধিক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৮৬ সালে সনজীদাকে ভূষিত করেছেন রবীন্দ্র পুরস্কারে, ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’ প্রবন্ধগ্রন্থের জন‍্য। সেবার শঙ্খ ঘোষ-ও ‘ধূম লেগেছে হৃৎকমলে’ কাব‍্যগ্রন্থের জন‍্য ওই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। মজার কথা হল, সেবার সনজীদা বিদেশি হিসেবে ওই পুরস্কার পান। এক-ই সঙ্গে কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত-ও সেবার পান, যিনি আসলে পূর্ববঙ্গ তথা ঢাকার ভূমিপুত্র!

এইসূত্রে সনজীদার লেখকসত্তা নিয়ে দু-চার কথা। নানা বিষয় নিয়েই তিনি লিখেছেন। তাঁর গ্রন্থসংখ‍্যা নিতান্ত কম নয়, কুড়িটি। এগুলোর মধ‍্যে তাঁর প্রাণের মানুষ মহা-আপন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘রবীন্দ্রনাথ বিবিধ সন্ধান’, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ’। আরও, দুখণ্ডে ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রকবিতার গহনে’, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: তার আকাশভরা কোলে’, রবীন্দ্রসঙ্গীত: মননে’। অন‍্য বিষয়গুলির মধ‍্যে ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’, ‘কবি সত‍্যেন্দ্রনাথ দত্ত’, ‘ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা’, ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’। আছে তাঁর আত্মজীবনী: অতীত দিনের স্মৃতি’। আছে তাঁর পিতাকে নিয়ে বই, ‘কাজী মোতাহার হোসেন’। এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি ফেলো সনজীদা আমাদের আশ্চর্য করেন তাঁর নিজের লেখা সৃজনশীল গ্রন্থের বই বের করে, ‘গল্পসংগ্রহ’।

৪. সনজীদা খাতুন ও ছায়ানট-কথা।।

সনজীদা খাতুন ও ছায়ানট যেন একে অপরের পরিপূরক। সারা জীবনে বহু ক্রিয়াশীলতার মধ‍্য দিয়ে গিয়েছেন তিনি, কিন্তু ছায়ানট তাঁর বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা হার। তিনি ও ছায়ানট সমার্থক আজ।

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

আজ ছায়ানট এক মহীরুহ। এর জন্ম হয়েছিল ১৯৬৭-তে, বাঙালি ও বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্যকে সাধারণের মধ‍্যে অনুস‍্যূত করার লক্ষ্য নিয়ে। সূচনাকাল ১৯৬১, যখন রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ পালন সরকারি হস্তক্ষেপে বিঘ্নিত হওয়ার উপক্রম হয়। ঢাকার নবাব তথা তথ‍্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীনের এই অপসিদ্ধান্তটি নাকচ করে দিয়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারস ইনসটিটিউটে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হয়। কলীম শরাফী, ভক্তিময় সেনগুপ্ত, আতিকুল ইসলাম প্রমুখ যেমন, তেমনই ওয়াহিদুল-সনজীদাও এখানে শামিল হন। ড্রামা সার্কেল মঞ্চস্থ করে ‘তাসের দেশ’। বাফা-র উদ‍্যোগে শান্তিনিকেতন থেকে শিল্পীরা এসে ‘শ‍্যামা’ মঞ্চস্থ করেন। হাসান ইমামদের অধ‍্যক্ষতায় অভিনীত হয় ‘রক্তকরবী’। এমনিতেই বাহান্নো-পরবর্তী একুশের প্রভাতফেরিতে সনজীদাদের কণ্ঠে থাকত রবীন্দ্রনাথের ‘সার্থক জনম আমার’ বা ‘আমার সোনার বাংলা’ গান। থাকত ‘কে এসে যায় ফিরে ফিরে’, বা ‘কোথায় আলো কোথায় ওরে আলো।’ আইয়ুব খাঁর আমলে মিলিটারি ধর্ষণ করল চট্টগ্রামের বৌদ্ধ মেয়েদের। ‘অসুন্দরের পরম বেদনায় সুন্দরের আবির্ভাব’, লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ছায়ানট সেই বৌদ্ধ মেয়েদের প্রতিবাদী হতে শেখায় ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’ তাদের কণ্ঠে এনে দিয়ে। বাহান্নোর মতো তাই একষট্টিও পূর্ববঙ্গর ইতিহাসে একটি ঘুরে দাঁড়ানোর বছর, প্রহরান্তের পাশ ফেরা।

সাতষট্টিতে রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের প্রভাতফেরি-ও প্রতিবাদ, বেতারে ও অন‍্যত্র রবীন্দ্রনাথকে বর্জনের বিরুদ্ধে। বাঙালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান কিন্তু ছায়ানট শুরু করেছিল আগেই, ছোট পরিসরে, ইংলিশ প্রিপারেটরিতে। পরে রমনায়, বৃহত্তর স্থান জুড়ে। চুরাশি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ এনে একে বর্ধিত মাত্রা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান বেতারে গাইতেন সনজীদা (যদিও এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন দিয়েই বেতারে তাঁর সঙ্গীতজীবন শুরু)। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী আবদুল আহাদের-ও ভূমিকা ছিল বেতারে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের, যেমন ছিল মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনিসুজ্জামান প্রমুখ সারস্বতচর্চাকারীদের। শেষোক্তজন বিভিন্ন বুধজনের লেখা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি প্রবন্ধসঙ্কলন সম্পাদনা করে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

ছায়ানট বাংলাদেশের এক বটবৃক্ষের নাম, যাকে অশ্রু মেধা স্বেদ রক্ত দিয়ে তৈরি করেছেন, বর্ধিতায়ন করেছেন সনজীদা খাতুন এবং ওয়াহিদুল হক। এর একাধিক ডানা,– সঙ্গীত, আবৃত্তি (‘কণ্ঠশীলন’), ব্রতচারী। ‘নালন্দা’, যা একটি ব‍্যতিক্রমী শিশুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ যখন বোমায় আক্রান্ত হয় ছায়ানট, সেসময় সনজীদার মাথায় আসে, পরিশীলিত মানুষ না তৈরি হলে সংস্কৃতিচর্চা বৃথাই কেবল। সেই ভাবনা থেকেই ‘নালন্দা’। আজ এর মডেলকে শিরোধার্য করে যশোর (‘অক্ষর’, উদীচী), খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, ঢাকার অন‍্যত্র (‘অরণি’) গড়ে উঠেছে অনুরূপ বিদ‍্যালয়।

অটিস্টিক শিশুদের ভাবনাও সনজীদার মাথায় সক্রিয়। তাই গড়ে উঠেছে ‘সুরের জাদু’। আর আছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’, নিয়ত দেশময় রবীন্দ্রনাথের গানকে বুঝবার জানবার শিখবার ও অনুপ্রেরণা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। কেবল পহেলা বৈশাখ-ই নয়, ছায়ানট বাংলার ষড়ঋতুকে আহ্বান জানায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ‍্যমে,– বসন্তোৎসব, বর্ষাবরণ, নবান্ন উৎসবের মাধ‍্যমে।

কেবল রবীন্দ্রনাথে সীমাবদ্ধ নন সনজীদা, পঞ্চকবি সহ লোকসঙ্গীত, ধ্রপদী সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত, সঙ্গীতের সামূহিক ভুবন আসন পেতেছে ছায়ানট-এ। আছে লালন, হাসন, বিজয় সরকারের গান। নিজে খুব বেশি রেকর্ড করেননি, তবে ছায়ানটের শিল্পীদের রয়েছে থরেবিথরে রেকর্ড, সিডি।

একদা সরকারের কোপে পড়ে রংপুরে নির্বাসিত হতে হয়েছিল তাঁকে অধ‍্যাপনায়। তাঁর অপরাধ, তিনি শান্তিনিকেতনী, অতএব…। আর পরবর্তীতে তাঁর পরিচয় দেশের সর্বত্র রবীন্দ্রনাথকে উজ্জ্বল, আরও উজ্জ্বল করে তুলে ধরা। বিধাতার পরিহাস!

৫. কথা কথা কথা।।

একাত্তর ও সনজীদা তো আর এক মহাপর্ব। ঢাকা ছেড়ে কলকাতা। মুক্তিযুদ্ধ তিনি করলেন গানের মাধ‍্যমে। সেই প্রথম ছায়ানট পহেলা বৈশাখ উদযাপিত করতে পারল না ঢাকায়। (পরবর্তীতে অতিমারীর জন‍্য-ও দু’বছর বন্ধ ছিল)। কলকাতা শান্তিনিকেতন দিল্লি যেতে হচ্ছে তাঁকে গান নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলা একদিকে, অন‍্যদিকে অর্থসংগ্রহ। রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গান তাৎপর্যপূর্ণভাবে চলে এল তাঁর কণ্ঠে, মাতৃবিচ্ছেদের গান,– রূপান্তরের গান! গাইলেন, ‘দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখ গান গাহিয়ে/ নগরে প্রান্তরে বনে বনে।/ অশ্রু ঝরে দু নয়নে/ পাষাণ হৃদয় কাঁপে সে কাহিনী শুনিয়ে’। গাইলেন ‘ঢাকো রে মুখ চন্দ্রমা।’ সনজীদা, আদর করে প্রিয়জনেরা যাঁকে মিনু নামে ডাকেন, এগারো ভাইবোনের ঠিক মধ‍্যবর্তী যিনি (তাঁর সবচেয়ে বড় বোনের চেয়ে দশ বছরের ছোট তিনি, আর কনিষ্ঠ বোনের চেয়ে ঠিক ওই দশ বছরের বড়), জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন পরিব্রাজক ও ভ্রাম‍্যমান, মাতৃমুক্তিপণে নিয়োজিত এক নাজুক যোদ্ধা, যাঁর অস্ত্র গান, কেবল গান! মিটল একাত্তর, স্বাধীন হল দেশ, ঢাকায় ফিরলেন তিনি। স্বাধীন দেশ, নব আনন্দে জাগবার দিন। রমনার বটমূল আরও উৎসবমুখর হবে এখন থেকে। মজার কথা হল, ওটা আদপেই বটমূল না, অশ্বত্থমূল।

তাঁকে নিয়ে কথার শেষ নেই। তাঁর পুত্রবধূ এবং ছায়াসঙ্গী লাইসা আহমেদ লিসার কথায়, শেষদিন পর্যন্ত তিনি ছায়ানট-সভাপতি হিসেবে সংস্থাটি সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশ দিয়েছেন ও সেই অনুযায়ী এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। দেশের বুদ্ধিজীবী থেকে আমজনতার কাছে এক শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় নাম সনজীদা। আগামী মাসেই (৪ এপ্রিল) ছিল তাঁর জন্মদিন। শতায়ু ছুঁতে তাঁর বাকি ছিল আর মাত্র আটটি বছর। কিন্তু কী জানি কোন বিবেচনায় ২৫ মার্চ ২০২৫-এ তিনি মহাপ্রস্থানে চলে গেলেন!

চিত্র: গুগল
4 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Sukriti Sikdar
Sukriti Sikdar
17 minutes ago

ভালো লাগলো।অনেক কিছু জানতে পারলাম।

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »