Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর একগুচ্ছ কবিতা

স্মৃতিতে অলি

ভিতরে প্রোথিত থাকি

ফটোগ্রাফ থেকে অলি মাঝে মাঝে উঠে আসে আশ্চর্য হরিণী
দুহাতে ছিল না কোনো পুষ্পশর ফুলধনু চুনি পান্না হিরে
ওভারকোটের ফাঁকে গোলাপি স্তবক চুড়ো দেখিয়ে কি ঋণী
এ অজর শিকারীকে, নিষাদ এখন এসে বুকখানি চিরে
বাহির করেছে তার শলাকা গম্বুজ আর শলাকার কোণ
শলাষড়যন্ত্র করে দেখায় রন্ধ্রের মুখ, এ পূর্ণিমা তিথি
ধূমকেতুভস্মে ধীর ভরে যাবে ভরে যাবে, পুচ্ছের গোধূলি
মস্কো নগরীর কত উলিৎসা সরণি ঘিরে মৃদু সংযোজন
এই ফটোগ্রাফময়, মৃত্তিকা শিল্পীর পটে বৃত্তের পরিধি
আশ্লেষে বন্দিনী করে কি আমার প্রতিমার দীর্ঘ করাঙ্গুলি
চোখের পিঙ্গল তারা, শ্বেত মুখমন্ডলের জ্যোৎস্নাময় দ্যুতি
সমস্ত ছাপিয়ে ওঠে গরাদ, ফাঁসের রজ্জু খড়্গ ঘাতকের
ছবির কোমল দেহে, ভিতরে প্রোথিত থাকি অমৃত কুম্ভের
আমি কি বরণডালা সাজিয়েছি ফটো ছিঁড়ে ভেঙে প্রতিশ্রুতি!

***

দুপাশে শৃঙ্খল আর কারা

তৃষিতের মতো এই চেয়ে থাকা মস্কোর রাস্তাতে
রুপোলি পরীর ঢেউ হিমভেজা বৃষ্টির সকালে
মেট্রো থেকে বেরোতেই কলস্বনা, ঝাপটা মারে, তাতে
বর্ষালি বর্ষার ফলা, অন্ধচোখ গোলাপি ও লালে
প্রভেদ বোঝে না যেন, অলি তুমি গ্রীষ্মের ছুটিতে
হিমের কয়েকটি কণা স্কার্টে মেখে সংগীত শিবিরে
শান্ত অবগাহনের স্রোতে মগ্ন, জরির বুটিতে
কলঙ্কের বিন্দুগুলি রেড স্কোয়ারের এই রক্তিম নিবিড়ে
জ্বলে জ্বলে পুঞ্জময়, গোরকি পার্কে ভীষণ আরতি
অধরে, মসৃণ ভাঁজে, চামড়ার বর্ম ঘিরে ধোঁয়া
ঘনায়, মেট্রোর চাকা ঝমঝম গভীর মন্দ্রে, জ্যোতি
ঘনিষ্ঠ উদ্ভাসে স্থির, উন্মীলিত বাহুমূল ছোঁয়া
যাবে না তোমার অলি, দুপাশে শৃঙ্খল আর কারা
ঠোঁটের পাষাণ স্পর্শে আমার দুঠোঁটে নামে শুধু রক্তধারা।

***

অলির জন্য মন্দির

অর্কেস্ট্রার সুরে বেজে যায় যে মূর্ছনা
তাতে ভেসে ওঠে শুধু বিষাদের প্রতিচ্ছবি
অতীতে আকাশে ছড়ানো সূর্যোদয়ের সোনা
এখন সেখানে রক্ত মাথায় অস্তরবি।

সে কোন ধূসর অতীতে দিয়েছি প্রতিশ্রুতি
অলির জন্য মন্দির গড়ে তার প্রতিমা
বসাব বেদিতে, প্রয়োজনে দেব আত্মাহুতি
তা শুধু ছলনা, পেরিয়েছি অপযশের সীমা।

অলির জন্য মন্দির গড়ে জ্যোৎস্নারাতে
ভেবেছি সাজাব নৈবেদ্যের বরণডালা
কবে ভুলে গেছি, এখন নিজেকে প্রশ্নাঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করেও মেটে না মনের জ্বালা।

অজান্তে কবে ঘটেছে নিজের পদচ্যুতি
দুষ্ট গ্রহের মতো আর্থিক শিথিল জটা
গ্রাস করে নেয়, স্বপ্নে কেবল লাল মারুতি
বুকে বাসা বাঁধে পাখির ধূসর বিষণ্ণতা।

শ্রাবণের উত্তাল নদী হয়ে খরস্রোতা
বয়ে যেত প্রেম বন্যার মতো গুঞ্জরনে
অলির জন্য মন্দিরে ছিল পবিত্রতা
দেখাত বিজন স্বর্গের পথ উত্তরণে।

ডিনামাইটের ধ্বংসলীলায় সে মন্দির
উড়িয়ে দিয়েছি, হয়েছি ভীষণ স্বেচ্ছাচারী
ঘরে ভেসে আসে জলজ কুমির অশান্তির
বুকের বেদিতে এখন শুধুই পণ্যা নারী।

***

অলি তুমি নেই

কতকাল যেন তোমার সঙ্গে কতটি কাল যে
দেখা সাক্ষাৎ হয়নি আমার, ওষ্ঠের মিল
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসরে কবে ওয়ালজে
ঘূর্ণনে ঘোরা চকিত নৃত্যে, রক্তপদ্ম
ঊরুর মিনারে ফুটে উঠেছিল, সরু হাইহিল
ভ্রষ্ট বুকের পাষাণে একটি কুয়াশাবিন্দু
রেখে গিয়েছিল বিষণ্ণতায়, ওই সরোবর
এখন মৃণালে হয় বহুভুজ, যুদ্ধ আঙিনা।

জঙ্গি গিটারে রণ ব্যাঞ্জোয় গীতিকা, কিন্তু
তুমি নেই বলে এই মার্বেল ভূমিতে বধ্য
জন্তুরা শোকে লুপ্তচেতন, ঐতিহাসিক
আদিমতা মাখা, ফ্লাডলাইটের আলোয় প্রখর
শবাধার এত স্বচ্ছ কাচের জানি না জানি না
দোনলা প্যান্টে বন্দুক থেকে ধাতব মাসিক
উল্কা অরণি রণে মেতে যাবে, জলাশয় ভরে
ঝলসানো হবে নিহত কুহেলি, নিষাদীরা আজ
ওড়নায় রাখে চুলকাঁটা তির, তৃতীয় প্রহরে
শিল্পীর কারুকলাতে যা হবে অস্ত্রের ভাঁজ।

অলি তুমি নেই, শঙ্কাশিহরে কখনো যাই না
নাচের ‘যুদ্ধে’, রুশ অনুবাদে যা শুধু ‘ভাইনা’।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
1 year ago

কি অসাধারণ সব পংক্তি অনায়াস ছন্দে সাজিয়ে দিয়েছেন কবি। আপ্লুত হলাম। বর্ষিয়ান কবি কি সহজে আজও যৌবনের অমল আলোকে দীপ্ত হয়ে আছেন, উজ্জীবিত হয়ে আছেন, নিমজ্জিত আছেন, সে এই কাব্যময় উৎসার থেকে সহজে অনুমেয়। ভালভাষাকে অশেষ ধন্যবাদ, এই তোষামোদ-লাঞ্ছিত কবিতা-আবহে সুজিত বসুর মতো প্রবাসী কবির লেখা নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন।

Amitava Bhattacharya
Amitava Bhattacharya
1 year ago

অমিতাভ ভট্টাচার্য
কলকাতা. আবার অনেক দিনের পরে কবি শ্রী সুজিত বসুর নতুন এই চারটি কবিতা পড়ে খুব খুব ভালো লাগলো. ওনার যৌবনের স্মৃতি থেকে মনে হয় উঠে আসা “অলি * প্রতি ভালবাসা আপনাদের ভালো ভাষা digital এ প্রকাশ করার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো. আর আশা করি এইরকম সুন্দর সুন্দর লেখা আপনাদের ভালো ভাষা তে দেখতে পাব. কবি শ্রী সুজিত বসুর জন্যে রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা.

Kishore Dutta
Kishore Dutta
1 year ago

আমার প্রিয় কবি শ্রী সুজিত বসুর লেখা প্রতিটি কবিতা পড়তে খুবই ভালো লাগে। এই চারটি কবিতাও ছন্দেভরা, আবেগ আপ্লুত, অর্থপূর্ণ পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এই ধরনের সুন্দর সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। কবির লেখা সুন্দর সুন্দর কবিতা পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ভালভাষা কে জানাই অনেক ধন্যবাদ।

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »