Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হেলেন কেলার: পুঁজিবাদী অন্ধকারের উৎস হতে

অ ভি জি ৎ  সি ন হা

‘জন্মিলে মরিতে হবে/ অমর কে কোথা কবে?’ অমোঘ উচ্চারণ মাইকেল মধুসূদনের। মরণশীল মানুষদের মধ্যে থেকেও হেলেন কেলারের মতো কিছু কিছু মানুষ তাঁদের নিজগুণে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যান। পার্থিব প্রয়াণের পরেও তাঁরা স্মরণীয় হয়ে থাকেন মানুষের মনে। এই মার্কিন মহীয়সীর সম্বন্ধেই কিছু কথা বলব আজ।

১৮৮০ সালের জন্ম তাঁর। দীর্ঘজীবী এই রমণীটির প্রয়াণ ঘটে ১৯৬৮ সালে। তার পরেও কেটে গেছে এতগুলো বছর। অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে গঙ্গা-পদ্মা-মিসিসিপি দিয়ে। পাল্টে গেছে ইতিহাস, ভূগোল। তবুও তিনি উজ্জ্বল থেকে গেছেন সারা পৃথিবীর মানুষের মনে। অথচ গুগল-গুরু বলবেন, তিনি ছিলেন এক মার্কিন গ্রন্থকার। তা মার্কিন মুলুকে তো গ্রন্থকারের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়, ভূরিভূরি। তার ওপর এটাও সত্য যে, মার্ক টোয়েনের মতো হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রম বাদে কোনও মার্কিন গ্রন্থকারই সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। কিন্তু এই গ্রন্থকারই বা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন কেন? এই বিষয়ে গুগল চুপ। বলবে, এঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১২। যার অনেকগুলিই বেস্ট সেলার। ১১টি বইয়ের কথা সে হয়তো বলবে, কিন্তু বলবে না সেই বইয়ের কথা, যেখানে ফুটে উঠেছিল তাঁর রাজনৈতিক দর্শনটি। আর আমরা সেই চেষ্টাই করব এই লেখায়।

উনবিংশ শতক ছিল আবিষ্কারের শতক। এই শতকের শুরুতে ফরাসি আবিষ্কারক লুইস ব্রেইল আবিষ্কার করেন দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য লিপি। দৃষ্টিহীনদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে যে লিপি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ও করে চলেছে।

এই শতকের শেষে টমাস আলভা এডিসন একের পর এক উদ্ভাবন করেন বিভিন্ন যন্ত্রের। বৈদ্যুতিক বাল্ব, প্রথম প্রজন্মের ব্যাটারি সহ প্রচুর প্রয়োজনীয় দ্রব্য উদ্ভাবন করেন তিনি। মোট ১০৯৩টি পেটেন্ট তাঁর নামে। এই এডিসনের হাত দিয়েই ১৮৭৭ সালে উদ্ভাবিত হয় ফোনোগ্রাফ যন্ত্র। অবশ্য সেটি একেবারে প্রাথমিক স্তরের। ১৮৮৬ সালে তার উন্নয়ন ঘটান আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। এর আগে ১৮৭৬ সালে এই মার্কিনি টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কার করে রীতিমতো খ্যাতি অর্জন করেন।

হেলেন কেলার।

হেলেন কেলারকে বুঝতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল সম্বন্ধে জানা জরুরি। এই বিখ্যাত আবিষ্কারক আমৃত্যু ছিলেন হেলেনের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। আগেই বলেছি হেলেনের জন্ম ১৮৮০ সালে। মাত্র ১৯ মাস বয়সে সেই সময়ের এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তাঁর দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। তিন বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ ঘটে হেলেনের। তাঁর বাবা আর্থার কেলার ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও ডেমোক্র‍্যাটিক পার্টির মাঝারি মাপের নেতা। একটি সাময়িকীর সম্পাদনাও করতেন তিনি। সুতরাং অতি ব্যস্ত। ফলে শৈশবে হেলেন ছিলেন একাকী। তাঁর চরিত্রে প্রকাশ পাচ্ছিল বন্যতা। ফলে হেলেনের শিক্ষার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন আর্থার।

হেলেনের যখন ছ’-সাত বছর বয়স, তখন আলবামার এক চক্ষুবিশারদের পরামর্শে সদ্য-আবিষ্কৃত ব্রেইল লিপিতে পড়াশোনা শুরু হয় তাঁর। আর্থার তাঁর কন্যার বধিরতার কারণে পরামর্শ করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সঙ্গে। এখানে উল্লেখ্য, আলেকজান্ডার গ্রাহামের মা এলিজা গ্রেস ছিলেন প্রায় বধির। যা বিরাট প্রভাব ফেলে আলেকজান্ডারের মনে। পরবর্তী জীবনে তিনি এক বধির স্কুলের শিক্ষক হন। ওই স্কুলেরই ছাত্রী মাবেল হাবোর্ডকে তিনি পরবর্তীকালে বিবাহ করেন। তিনি হেলেনকে তাঁর উদ্ভাবিত এক পকেটঘড়ি দেন। এই ঘড়িটি সময়ের জানান দিতে শুধু শব্দই করত না, তার সঙ্গে কাঁপতও। এর ফলে কম্পনানুভূতির সঙ্গে পরিচিত হলেন হেলেন। স্পর্শেন্দ্রিয়ের মাধমে শব্দ অনুভব করতেন তিনি।

পরে ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন হেলেন কেলারের সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন কবি তাঁকে শুনিয়েছিলেন ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’ গানটি। যা বধির হেলেন উপলব্ধি করেছিলেন স্রেফ কবির ঠোঁট স্পর্শ করে। তাঁর স্পর্শানুভূতি ছিল অসাধারণ। শোনা যায়, তিনি নাকি বাদ্যযন্ত্র স্রেফ ছুঁয়ে যন্ত্রসঙ্গীতের সুর হৃদয়ঙ্গম করতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন, তখন এই স্পর্শের মাধ্যমেই তাঁর কথা, তাঁর গানের স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি। স্পর্শের মাধ্যমে বাক্য অনুভবে রীতিমতো পারদর্শী ছিলেন তিনি। এই পারদর্শিতা তিনি অর্জন করেন তাঁর শিক্ষয়িত্রী ও সর্বক্ষণের সঙ্গী অ্যানি সুলিভানের কাছ থেকে। এই অ্যানিকে হেলেনের কাছে নিয়ে আসেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। এই অ্যানির প্রশিক্ষণে নিজের বিকাশ ঘটান হেলেন। ভর্তি হন র‍্যাডক্লিফ কলেজে। যেখান থেকে ১৯০৪ সালে স্নাতক হন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ও হেলেন কেলার।

অবশ্য এর আগের বছরেই সাহিত্য জগতে পা রাখা হেলেনের। প্রকাশিত হয়েছে দুটি গ্রন্থ। আত্মজৈবনিক ‘The Story of My Life’ এবং ‘Optimism’। প্রথম বইটি উৎসর্গ করা হয় আলেকজান্ডার বেলকে। তখন মার্কিন সাহিত্যজগৎ ছিল পুরুষ লেখক অধ্যুষিত। সেখানে এক ২৩ বছরের অন্ধ-বধির মহিলার প্রবেশকে ভালচোখে যে দেখা হবে না সে তো জানা কথাই। চক্ষুষ্মানদের যুক্তিহীন সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন হেলেন। বলা হয়েছিল, তিনি নাকি টুকে লেখেন। এসবের পরেও তিনি লড়াই করেছিলেন। এবং সেই অসম লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন। অর্জন করেছিলেন এক বিশ্বব্যাপী খ্যাতি।

এই লড়াই সোজা ছিল না কখনও। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। জীবনের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘Optimism’-এ বলেছেন সেই কথা। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, চূড়ান্ত আশাবাদের কথা বলা হয়েছে এই বইয়ে। পুরস্কার প্রভৃতি অনেক বহির্জাগতিক প্রেরণার কথা বলা হয় বিভিন্ন পরিচালনবিদ্যার বইয়ে। কিন্তু এইসব বহির্জাগতিক প্রেরণার থেকে যে অন্তর্নিহিত প্রেরণা অনেকগুণ দামি, সেটাই এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এই অন্তর্নিহিত প্রেরণার মাধ্যমে টপকানো যায় পৃথিবীর সকল বাধা। সত্যিই, এত বাধা অতিক্রম করেছিলেন তিনি, যা আমাদের সকলকে বিস্মিত করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তো ছিলই, ছিল পুরুষতান্ত্রিকতার বাধাও।

আজও মার্কিন দেশ পুরুষতান্ত্রিক। আমাদের দেশ ৫০ বছর আগেই মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু মহিলা প্রেসিডেন্ট পায়নি এখনও। এই চূড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক দেশে এক বিস্ময়কর লড়াই করে নিজের আসন পাকা করেছেন হেলেন। যে লড়াইয়ের কথা গুগল কোনওদিন বলবে না। অথচ যে লড়াইটা না-বুঝলে হেলেন কেলারকে কখনওই বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে না কেন এই রমণী আজও দৃষ্টি এবং অন্য প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত মানুষের কাছে এত জনপ্রিয়। এঁদের জীবনের দিশা দেখিয়েছিলেন তিনি। শুধু তা দেখানোই নয়, নিজের জীবন দিয়ে দেখিয়েছিলেন, নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকলে, ‘কেন আমি পারব না’ এই মনোভাব থাকলে, সবকিছুকেই জয় করা যায়। তাই হেলেন কেলার কোনও মার্কিন রমণী নন, এক তুলনাহীন জেদের প্রতীক। প্রতীক এক মহাকাব্যিক লড়াইয়ের।

তাঁর স্পর্শানুভূতি ছিল অসাধারণ।

এই লড়াই তিনি করে গিয়েছেন সারাজীবন ধরে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তো বটেই, সকল প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত মানুষদের জন্যই ছিল তাঁর আপসহীন সংগ্রাম। আধুনিক সমাজ এই রকম মানুষদের দূরে সরিয়ে রাখে। আর তাদের প্রতি আকর্ষণের কারণেই শিল্প অন্ধত্ব নিয়ে তাঁর আগ্রহ। আর সেই গবেষণা করতে গিয়েই তাঁর সিদ্ধান্ত, এই অন্ধত্বের পিছনে রয়েছে শিল্পপতিদের উদগ্র লোভ। সেই লোভের কারণেই তাঁরা শিল্প সুরক্ষার ব্যাপারটা উপেক্ষা করে থাকেন। বাজে খরচ মনে করেন শ্রমিকদের সুরক্ষা-খাতে খরচকে। এই উপলব্ধি থেকেই তাঁর ১৯০৮ সালে আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টিতে যোগদান। সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। মার্কিন শ্রমিকদের হয়ে আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা করেন তিনি। যা নিয়ে ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘Out of the Darkness’ বইটি।

বলা বাহুল্য, এই গ্রন্থটির পিডিএফ গুগলে পাওয়া যায় না। অথচ এই বইটি না-পড়লে বোঝা যায় না হেলেন কেলারের রাজনৈতিক ভাবাদর্শের দিকটি। তিনি ছিলেন কট্টর সমাজতান্ত্রিক। মনে করতেন এই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার কারণেই প্রান্তিকায়িত হয়ে পড়ছেন প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত মানুষেরা। তাঁরা এই ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত হচ্ছেন শোষিত। এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়েছিলেন, এই সমাজব্যবস্থার উৎপাটন ছাড়া প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তি অসম্ভব। আর ঠিক এই কারণে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবকে সমর্থন করেছিলেন তিনি।

তিনি কট্টরপন্থী সমাজতান্ত্রিক হলেও তাঁর মূল সংগ্রাম ছিল প্রতিবন্ধকতা-যুক্ত মানুষের অধিকারের জন্য। পাশাপাশি তিনি সংগ্রাম করে গেছেন মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯২৪ সালে তিনি ‘আমেরিকান ফেডারেশন ফর ব্লাইন্ড’ নামক অন্ধদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। দীর্ঘ ৪০ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। যতদিন তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, ততদিন অন্ধদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। এই কাজকে তিনি তাঁর সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা থেকে বিচ্যুত কোনও বিষয় হিসেবে দেখতেন না। প্রথম থেকেই তিনি মনে করতেন, এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্যতম কুফল হল শিক্ষার আলোক থেকে সমাজের একটি শ্রেণিকে বঞ্চিত করে রাখা। বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলেছেন এই কথা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি এই শ্রেণির মধ্যে সফলভাবে শিক্ষার আলোক ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। এ একটা বিরাট বিপ্লব। গোটা ব্যবস্থাটার গালে এক প্রবল চপেটাঘাত। যা বুঝতে পেরেছিল বলেই আমেরিকা তাঁকে উপস্থাপন করেছিল অন্যভাবে। একটা সন্তসুলভ পোশাক পরিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল শিক্ষাবিস্তারে তাঁর ভূমিকার কথা। আর তাতে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল আমেরিকান ফেডারেশন ফর ব্লাইন্ড। হেলেন কেলারের বিশ্বজনীন জনপ্রিয়তার কারণে এই সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা দিতে বাধ্য হন হেনরি ফোর্ড, রকফেলার প্রমুখ ধনকুবেররা। পাঁচের দশকে ছবি করা হয় হেলেন কেলার আর অ্যানি সুলিভানকে নিয়ে। এই ছবিতে কেলারের সমাজতান্ত্রিক দিকটি উহ্য থাকে। তাঁকে দেখানো হয় সাধ্বী রূপে। উল্লেখ্য, হিটলারের জার্মানিতেও তাঁর সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা সমন্বিত লেখাগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সংগঠনটির চাপেই (আসলে ওই বিখ্যাত দাতাদের পরোক্ষ চাপে) সমাজতান্ত্রিক কথাবার্তা একেবারে ছেড়ে দেন হেলেন। আরও বেশি করে যুক্ত হন দৃষ্টিহীনদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে। শিক্ষাব্রতী হিসেবে গোটা বিশ্বে নিজের আসনটি পাকা করে নেন তিনি।

কবি শুনিয়েছিলেন ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’ গানটি।

বস্তুত এখনও সকল মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা পারিনি। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কখনওই তা পারে না। কিউবা সহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে শিক্ষার অধিকারকে দেশবাসীর মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে নিলেও কোনও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে তা এখনও করা হয়নি। বরং এখন শিক্ষা থেকে যাতে প্রান্তিক পরিবারের সন্তানদের ব্রাত্য করে রাখা যায়, তার সবরকম চেষ্টা হচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতিতে তো আরও বেশি চাপ এসেছে। জোর দেওয়া হচ্ছে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। তুলে দেওয়া হচ্ছে সরকার পোষিত ও সরকারি বিদ্যালয়গুলি। বলতে গেলে কোনও স্কুলেই দৃষ্টিহীন ও অন্যান্য বিশেষভাবে সক্ষমদের পড়ানোর ব্যবস্থা নেই। ভাবখানা, এদের সবকিছু দেওয়া হবে শুধু শিক্ষা ছাড়া। অথচ বাস্তব হল, যতক্ষণ না সকল শিশুর শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, ততক্ষণ সমাজ পিছিয়েই থাকবে। আর হেলেনের আরব্ধ কাজ থেকে যাবে অসম্পূর্ণ।

এক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ধনী পরিবারে জন্ম হেলেনের। অথচ তাঁর কাজ সমাজের পিছিয়েপড়া শ্রেণির শিশুদের মধ্যেই। বই পড়ে তিনি সমাজতান্ত্রিক হননি। তাঁর সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রতি আস্থা বাস্তব থেকেই উৎপন্ন হয়েছিল। যা ছিল জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট। তবে গ্যালেলিও যেভাবে মেনে নিয়েছিলেন চার্চের সূর্য ঘোরার তত্ত্ব, হেলেনকেও মানতে হয়েছিল রকফেলারদের আবদার। কিন্তু তিনি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে বুঝেছিলেন, সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলোক ছড়ানো যাবে একমাত্র সমাজটার পরিবর্তন হলেই।

হেলেন কেলারের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা দেখানো হবে এই অন্ধকার সমাজটার খোলনলচে পাল্টে ফেলে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলেই।

চিত্র: গুগল
4.5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »