Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

লেবেদেফ এবং ও তাঁর সংস্কৃত শিক্ষক জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন

একজনের নাম গোলকনাথ, অন্যজনের নাম জগন্নাথ। এই দুই নাথ-এর ছত্রছায়ায় একজন রুশ পরিব্রাজক হয়ে উঠলেন ভারতচর্চার অগ্রগণ্য পথিকৃৎ। শুধু তাই নয়, সেই রুশ নাগরিক লেবেদেফের হাত ধরে বাংলা তথা ভারত পেল প্রথম ইউরোপীয় ধাঁচের প্রসেনিয়াম থিয়েটার। গোলকনাথের কথা তবুও দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসাহীজনেরা কম-বেশি জানেন। তিনি ছিলেন লেবেদেফের বাংলা শিক্ষক। অথচ লেবেদেফের সংস্কৃত শিক্ষকের কথা রয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে। কে সেই সংস্কৃত পণ্ডিত? কী তাঁর পরিচয়? কোথায় ছিল তাঁদের বাস? ‘বাংলা থিয়েটারের জনক’ লেবেদেফের সেই শিক্ষাগুরুর কথা জানার আগে সংক্ষেপে জেনে রাখা দরকার লেবেদেফের বর্ণময় জীবনের কথা।

তাঁর পুরো নাম হেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেডেফ বা গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেডেফ। তিনিই প্রথম রাশিয়ান এবং ইউরোপীয় ভারতবিদ, ভারতে ইউরোপীয় ধাঁচের প্রসেনিয়াম থিয়েটার তথা বাংলা থিয়েটারের জনক এবং পুরনো কলকাতার স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী। একাধারে অভিযাত্রী, ভাষাবিদ ও অনুবাদক লেবেদেফের জন্ম ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরের ইয়ারোস্লাভ শহরে। পরে সপরিবারে চলে আসেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। লেবেদেভ নিজের প্রচেষ্টায় ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শেখেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে লেবেদেভ প্রথমে স্থায়ী রাশিয়ান থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ফায়োদর ভলকভের সঙ্গে পরিচিত হন ও ভলকভের থিয়েটারে অভিনয়েও অংশ নেন। লেবেদেফ ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত বেহালাবাদক এবং একটি বাদ্যযন্ত্রীদলের সদস্য হিসাবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। তারপর একদিন সেই দল থেকে পালিয়ে গোটা ইউরোপ চষে বেড়ান এবং বেহালাবাদক হিসেবে কিছুকাল জীবন অতিবাহিত করেন। ইত্যবসরে বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতসাধক মোৎজার্টের সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্ব হয়।

১৭৮২-তে প্যারিস হয়ে লন্ডন চলে যান লেবেদেফ। সেখানে বছর চারেক কাটিয়ে ব্রিটিশ সামরিক ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘রডনি’ নামক জাহাজে চড়ে ১৭৮৫-র ১৫ আগস্ট মাদ্রাজে পা রাখেন। মাদ্রাজে দু’বছর কাটিয়ে ১৭৮৭-র আগস্টে আসেন কলকাতায়। পরবর্তী দশবছর কলকাতাই হয়ে ওঠে তাঁর ঘরবাড়ি। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে ভারতীয় সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। শেখেন বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষাও। তৎকালীন ডোমতলায় নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে ১৭৯৫-এর ২৭ নভেম্বর এবং ১৭৯৬-এর ২১ মার্চ দুটি বাংলা অনুবাদ নাটক পরিবেশন করেন। ১০ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা অভিনেত্রী নিয়ে মঞ্চস্থ হয় সে নাটক। এবং রচিত হয় ইতিহাস। তখন শুধুই ইংরেজি থিয়েটারের চল। চক্রান্ত করে লেবেডেফকে ভিটেছাড়া করা হয়। মামলা লড়েন। কাজ হয় না। অসুস্থ হন। ব্যবসার চেষ্টায় নানা জায়গায় দরবার করেন। ব্যর্থ হয়ে কলকাতা ছাড়েন ১৭৯৭-এর ১০ ডিসেম্বর। পাড়ি দেন লন্ডনের উদ্দেশে। মাঝপথে আফ্রিকাতেও কাটান কিছুদিন। ১৮০১-এর মে মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে উৎসর্গীকৃত তাঁর ব্যাকরণগ্রন্থটি মুদ্রিত হওয়ার আগেই তিনি লন্ডনে পৌঁছন। তারপর ফিরে যান স্বদেশে। সম্ভবত বিয়ে করেননি। ১৮১৭-র ১৫ জুলাই ৭১ বছর বয়সে প্রয়াণ ঘটে ভারতীয় সংস্কৃতির এই উৎসাহী পুরুষের।

লেবেদেফের ‘বাংলা থিয়েটারের জনক’ হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর বাংলা শিক্ষক গোলকনাথ দাসের অবদান অনস্বীকার্য। তখন কলকাতা শহরে এসে জনৈক রুশ চিকিৎসকের সাহায্যে স্থানীয় সমাজে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে সুনাম কুড়েচ্ছিলেন লেবেদেফ। কিন্তু বাঙালি সমাজের আরও গভীরে যেতে হলে, তাঁকে শিখতে হবে বাংলাভাষা। পেয়ে গেলেন স্কুলশিক্ষক গোলকনাথ দাসকে। তাঁর কাছেই শিখতে শুরু করলেন বাংলা এবং ক্রমে ব্রতী হলেন নাট্যসাধনায়। গোলকনাথের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হল, গোলক তাঁকে শেখাবেন বাংলা। বিনিময়ে লেবেদেফ তাঁকে শেখাবেন বেহালা। শেখাবেন পাশ্চাত্য সঙ্গীত। লেবেদেফ তাঁর বইতে লিখছেন: ‘‘…আমি ‘দি ডিসগাইস’ এবং ‘লাভ ইজ দ্য বেস্ট ডক্টর’ নামে দুটি ইংরেজি নাটক বাংলায় অনুবাদ করি। লক্ষ্য করি, এদেশের লোকজন উপদেশমূলক গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে হালকা ঠাট্টা-তামাশা বেশি পছন্দ করেন। তাই চৌকিদার, চোর, উকিল, গোমস্তা প্রভৃতি চরিত্রের সন্নিবেশ রয়েছে এমন দুটি নাটকই বেছে নিই। অনুবাদ শেষ করে কয়েকজন নামজাদা পণ্ডিতকে ডাকি, তাঁদের সামনে নাটকদু’টি পঠিত হয়। নাটকের কোন কোন অংশ তাঁদের মনে ধরেছে, সেসব লক্ষ্য করি খুব মন দিয়ে।… পণ্ডিতেরা যখন বলেন, কোনও অসুবিধা নেই, তখন আমার শিক্ষক গোলকনাথ দাস প্রস্তাব দেন, আমি যদি নাটকদুটি অভিনয় করানোর বিষয়ে রাজি থাকি তা হলে প্রয়োজনীয় অভিনেতা এবং অভিনেত্রী তিনি যোগাড় করে দিতে পারেন। তাঁর এই প্রস্তাবে তো আমি হাতে চাঁদ পেয়ে যাই এবং কালবিলম্ব না করে গভর্নর জেনারেল জন সোর-এর কাছে আবেদন রাখি, আমাকে নাট্যশালা খোলার লাইসেন্স মঞ্জুর করা হোক। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সে আবেদন মঞ্জুর করেন।’’

এই গোলকনাথ দাসই তাঁকে সংস্কৃত শিখতে উৎসাহ দিলেন। গোলকনাথ লেবেদেফকে পরামর্শ দিলেন: ‘‘সংস্কৃত অক্ষর পরিচয়টা সেরে ফেলুন। কারণ প্রাচ্য বিজ্ঞান ও জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবিকাঠি এর কাছেই আছে।’’ তদানীন্তন বঙ্গদেশের নামজাদা সংস্কৃত পণ্ডিত, জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্যর কাছে সংস্কৃতের পাঠ নেওয়ার জন্য গেলেন লেবেদেফ। লেবেদেফ নিজে অবশ্যও জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের নাম লিখেছেন, ‘‘জগন-মোহন-বিদ্যে পঞ্চানন ভট্টাচার্য’’। পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা-সংলগ্ন মাটিকুমড়োর বাসিন্দা। মাটিকুমড়ো তখন ছিল প্রসিদ্ধ কুশদহ অঞ্চলের অংশ। জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ছাড়াও আর-এক জগন্নাথের কাছেও অধ্যয়ন করেন লেবেদেফ। এই জগন্নাথ হুগলির ত্রিবেণীর লোক। তাঁর নাম জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন। তাঁকে লেবেদেফ উল্লেখ করেছেন ‘‘জগন্নাথ তর্ক’’ নামে। জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের জন্ম ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে। তিনি প্রয়াত হন ১৮০৭-এর ১৯ অক্টোবর। প্রখ্যাত ইংরেজ ভাষাতাত্ত্বিক স্যার উইলিয়াম জোন্সও জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের সান্নিধ্যে এসেছেন। গভর্নর জেনারেল জন সোর এবং লেবেদেফের অন্যান্য বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকরা তাঁকে উৎসাহিত করলেন বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি প্রভৃতি ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে। লেবেদেফ সেই সময়কার চালু রীতি অনুযায়ী দুই জগন্নাথের মতো বিখ্যাত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের কাছেই শিখলেন ‘‘ব্রাহ্মণীয় রীতি, অভিধান, ব্যাকরণ, পাটিগণিত, ক্যালেন্ডার ও অন্যান্য বিষয়’’।

জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের পুরো নাম জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্য। তিনি তৎকালীন বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত কুশদহের মাটিকোমড়া গ্রামের বিখ্যাত পণ্ডিত রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের বংশধর তথা প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রামশরণ ন্যায়বাচস্পতির দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। স্মৃতিশাস্ত্রে জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। এবং ধর্মশাস্ত্র সম্বন্ধে তাঁর ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিল অকাট্য। জগন্নাথের চার পুত্রও ছিলেন, এঁরা হলেন রামচন্দ্র শিরোমণি, অমৃতলাল ভট্টাচার্য, রামকমল চূড়ামণি এবং তারিণীচরণ ভট্টাচার্য। এখানে বলা ভাল, জগন্নাথের পূর্বপুরুষ রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের পিতামহ প্রথম শ্রীকর আচার্য ছিলেন নবদ্বীপের স্মৃতিশাস্ত্রের পণ্ডিত। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের পিতা শ্রীনাথ আচার্য ছিলেন ষোড়শ শতকের প্রখ্যাত পণ্ডিত শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক স্মার্ত রঘুনন্দনের গুরু। অনেকগুলি স্মৃতি ও টীকার বই লিখে খুবই যশস্বী হয়েছিলেন শ্রীনাথ আচার্য। বাবার মতো রামভদ্রও বিপুল পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বিখ্যাত নৈয়ায়িক রামভদ্র জীমূতবাহনকৃত দায়ভাগের টীকাকারও ছিলেন। সতেরো শতকের কুশদহ বা কুশদ্বীপ পরগনায় তিনটি প্রধান পণ্ডিত-স্থান ছিল— মাটিকুমড়া, গৈপুর ও খাঁটুরা। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার মাটিকুমড়ার পুতিটুণ্ড-বংশীয় ছিলেন। খাঁটুরার পণ্ডিতদের মধ্যে রামরুদ্র ন্যায়বাচস্পতি ও গৌরমণি ন্যায়ালঙ্কারের নামও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে রামভদ্র নদীয়ার নৈয়ায়িক গদাধর ভট্টাচার্যের সমকালীন ছিলেন। তখন তাঁদের নামে জনশ্রুতি ছিল— ‘‘নদের গদা, কুশদহের ভদা’’।

শিক্ষাগুরুদের প্রতি লেবেদেফের ছিল অটুট শ্রদ্ধা এবং পরবর্তীতে তিনি লিখলেন: ‘‘আমি সংস্কৃত বা দেবনাগরী যাই বলুন, সেসব ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করলাম, এই সংস্কৃত বা দেবনগরীর হাত ধরেই বাংলা ভাষা ও ক্রিয়া ও একই সঙ্গে চালু ভাষা ‘মুরিশ’ যা শুধু সমগ্র ভারতেই নয়— এমনকি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া যাযাবররাও— ভারতীয় উপজাতি থেকেই যাদের সৃষ্টি— তারাও ব্যবহার করে— তাও শিখতে পারলাম। এমনকি ব্রাহ্মণদের সুপ্রাচীন ক্রিয়াপদ্ধতি তাদের পূজার্চনা ও চালু অভ্যাসগুলির ওপরেও আমার এক বোধ তৈরি হল।’’ আসলে, শুধু সংস্কৃত পাঠই নয়, ভারত সম্পর্কে লেবেদেফের চোখ খুলে দিয়েছিলেন জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন। লেবেদেফ ভারতকে ভুলে যাননি কোনওদিন। ভারত থেকে ফেরার সময় লেবেদেফের সঙ্গে থাকা পাণ্ডুলিপিগুলির সন্ধান পাওয়া যায়, তাঁর মৃত্যুর প্রায় উনিশ বছর পর। সেগুলি হল— সংস্কৃত অভিধান ‘অমরকোষ’, সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘হিতোপদেশ’, হিন্দিতে রচিত ‘মধুমালতীজৈত প্রসঙ্গকথা’ এবং নিজের হাতে লেখা চারটি পঞ্জিকা ও আরও কিছু বই। এছাড়াও তিনি প্রচুর খসড়া পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তার মধ্যে ছিল, ‘বাংলা–রুশ শব্দকোষ’ (অসম্পূর্ণ), ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ (অসম্পূর্ণ), ‘‘ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর কাব্য’-র প্রথম অংশের রুশ অনুবাদ’’, ‘আফ্রিকার দিনপঞ্জী’ ‘কলকাতায় ১৭৯৭-তে লেখা আত্মজীবনীমূলক রচনা’, ‘ভারতীয় পাটিগণিতের ওপর লেখা বই’ ইত্যাদি।

ভারত-প্রেমিক লেবেদেফ স্মরণীয়, তাঁর কীর্তিসমূহ রাশিয়ায় সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ লেবেদেফের ভারত-বিদ্যার সোপান বাঙালি পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননকেই ভুলে গিয়েছে তাঁর স্বদেশ ও স্বজাতি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

দেখুন, সংস্কৃত পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রথম ও একমাত্র তথ্যচিত্র।

5 3 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Rishi Ghosh
Rishi Ghosh
2 years ago

লেবেদেফ চর্চার একেবারে অনালোচিত দিকগুলি উঠে এলো।তথ্যচিত্রটি উপরি পাওনা।লেখকের জন্য কোন ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়!

Rupanjan Goswami
2 years ago

অসাধারণ লেখা শ্যামলেশ, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আরও লেখা পড়তে চাই।

Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
2 years ago

তথ্যসমৃদ্ধ রচনা। অজানা বিষয়। উপস্থাপনা চমৎকার।

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »