Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ভ্রমণ লেখার অ-শরীরী সারজল

ভ্রমণ সম্পর্কে সবচেয়ে রোমান্টিক ও সংক্ষিপ্ত সংলাপটি শতবর্ষ পেরিয়ে গড়িয়ে গেল আরও দুটো বছর।
‘‘বিকজ ইট’স দেয়ার।’’— তিনটি শব্দের সমাহারে গড়ে ওঠা আপাতনিরীহ বাক্যটি তার অতলান্তিক রোমান্টিকতার ধার ও ভার উত্তরোত্তর বাড়িয়েই চলেছে।
১৯২৩-এর মার্চ মাসের এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রিটিশ পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরিকে প্রশ্ন করেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক— ‘‘কী জন্য হিমালয়ে উঠবেন?’’ এর আগে তো তিনবার এভারেস্টে পা রেখেছেন তিনি। চূড়ায় হয়তো পৌঁছননি, কিন্তু ইস্ট রংবুক হিমবাহ, নর্থ কল হয়ে নতুন রাস্তা আবিষ্কার ইত্যাদির সুবাদে অনেকটা সু আর অল্প কিছু দুর্নাম অর্জন করে ম্যালোরি তো পর্বতারোহণের ইতিহাসে ততদিনে খ্যাতকীর্তি পুরুষ। নতুন আর কী পাবার আছে হিমালয়ের কাছে? সে প্রশ্নের উত্তরে ম্যালোরি ওই তিনটি শব্দের বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, সময়ের সঙ্গে যার উচ্চতা ছাড়িয়ে গেল ম্যালোরিকেও।
কারণ এই সাংবাদিক সম্মেলনের এক বছর তিনমাস পরে জুন মাসে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করবেন বন্ধু আরভিনকে সঙ্গে নিয়ে। সামিট থেকে কমবেশি আটশো ফুট নিচে তাঁদের শেষ দেখা যাবে, যেহেতু এরপর তাঁরা মিশে যাবেন, মিলে যাবেন হিমালয়ের শরীরে। ঠিক যেমন নীলাচলে বিলীন হয়েছিলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য। বাকি পৃথিবী একজন মানুষের কিংবদন্তি হয়ে যাবার গল্পের সাক্ষী হয়ে অপেক্ষা করবে পঁচাত্তর বছর। কারণ ঠিক এই ক’বছর পর তাঁর দেহ উদ্ধার করবেন এক দল অভিযাত্রী— দিনটা ১৯৯৯-এর পয়লা মে। হয়তো ক্লান্ত ছিলেন, তাই পঁচাত্তর বছর বরফের বিছানায় টানা ঘুমিয়ে থাকা তাঁর দেহটা যখন প্রায় অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার হবে, তখন মনে হবে এক শিশু যেন মায়ের কোলে গুটিসুটি শুয়ে।
কী জানি, ওই সাংবাদিক সম্মেলনে হিমালয় স্বয়ং উপস্থিত ছিল কি না!

*

‘‘এখন দেখি, এ বেগ আমার একার নহে। যে সময়ে উঠোনে ছায়া পড়ে, নিত্য সে সময়ে কুলবধূর মন মাতিয়া উঠে, জল আনিতে যাইবে; জলে যে যাইতে পারিল না, সে অভাগিনী। সে গৃহে বসিয়া দেখে উঠানে ছায়া পড়িতেছে, আকাশে ছায়া পড়িতেছে, পৃথিবীর রং ফিরিতেছে, বাহির হইয়া সে তাহা দেখিতে পাইল না, তাহার কত দুঃখ। বোধ হয়, আমিও পৃথিবীর রং ফেরা দেখিতে যাইতাম।’’
‘পালামৌ’ ভ্রমণবৃত্তান্তে লাতেহার পাহাড়ের বর্ণনা প্রসঙ্গে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখছেন, বিকেল চারটে বাজলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ওই পাহাড়ের কাছে যাওয়ার এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করতেন তিনি। কোনও অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্পদ যে ছিল সে পাহাড়ের, তা নয়। কিন্তু সেই সাধারণ-দর্শন পাহাড়ের রূপ বৈকালিক রোদের তেরছা আভায় এক মাতাল করা উচ্চতায় পৌঁছে যেত। আর সেই হাতছানিতে তার কাছে ছুটে যাওয়ার পাগলামোয় পেত তাঁকে। পাহাড় তো এক মৃত ফসিলমাত্র। মাঝেমধ্যে তার গা ফুঁড়ে বেরোনো গাছের ফাঁকে বয়ে চলা বাতাসের শিস্‌ডাক কানে আসে, কখনও তার মাথায় জমা মেঘের গুমগুম বুকে বাজে। পাখির ডাক, উড়তে থাকা মৌমাছির ডানার বোঁ-ও-ও আওয়াজ, শুকনো পাতায় কাঠবিড়ালির দৌড়ে যাবার খস্‌খস্‌ মাঝেমধ্যে তার বুকচাপা নৈঃশব্দ্যের নিস্তরঙ্গ জলস্তরে স্বল্পস্থায়ী ঢেউ তোলে। তবে এরা তো পার্শ্বচরিত্র। নায়কের শরীরে প্রাণের কোনও আপাতলক্ষণ তো মেলে না সেখানে। তবু তার সেই সাদামাটা নিষ্প্রাণ সৌন্দর্য বিকেলের আলোয় এক অন্য মাত্রায় জেগে উঠত। আর তার অবলম্বনেই সঞ্জীবচন্দ্রের জীবনবোধ এক নতুন মাত্রা পেত, লাতেহারের ধূসর ক্যানভাসে পৃথিবীর রং ফেরার সন্ধান পেতেন তিনি। আকর্ষণের এই বলবিদ্যার রহস্যের অনেকটাই থেকে যেত লেখকের জানাশোনার গণ্ডির বাইরে। তাঁর ভাষায়, ‘‘পাহাড়ে কিছুই নতুন নাই; কাহার সহিত সাক্ষাৎ হইবে না, কোন গল্প হইবে না, তথাপি কেন আমায় সেখানে যাইতে হইত জানি না।’’ রোমান্সের রসায়ন কে কবেই বা বুঝেছে!
আর শুধু কি তিনি? পাহাড় সংলগ্ন গ্রামের মেয়েবউরাও যে সে ডাকে সাড়া দিতে উদগ্রীব হয়ে উঠত, শুরুর কথাগুলো তারই সাক্ষী। লেখকের শিক্ষিত পরিশীলিত মনের তারের যে পর্দায় ঘাই মারত সে ডাক, তা হয়তো ওই মেয়েবউদের তুলনায় ভিন্ন। সে আহ্বানের উত্তরে পাওয়া সুরের পর্দারা লেখকের মনে যদি তুলত দরবারি কানাড়ার গভীর ঘন বোধ, গৃহবধূদের মনে তা হয়তো চলত পাহাড়ি ধুনের হালকা চলনে। কিন্তু উত্তর দিতে হত দুজনকেই, নিজের মতো করে।
রোমাঞ্চ যে নিত্যকর্মেরও সাথি।

*

১৭২৪ সাল। রাশিয়ায় এবছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিনগুলো যেন অসম্ভব ঠান্ডায় মোড়া। সেন্ট পিটার্সবার্গের রাজপ্রাসাদেও সিঁদ কেটেছে শীত। প্রায় সন্ত্রাসবাদীর কুশলতায় ছড়িয়ে পড়েছে ঘর দুয়ারের আনাচেকানাচে। ফায়ারপ্লেসের মোটা লগে আগুন জ্বলছে বটে, কিন্তু তার তাপ দু’ফুটের বেশি দূরে পৌঁছচ্ছে না। পাশের জানালায় কাচের পাল্লার শার্শির মধ্যে দিয়ে বাইরে রাস্তার ওপর আকাশ থেকে পড়া তুলোর মতো বরফকুচির শব্দহীন অবতরণ দেখছেন বিছানায় শুয়ে থাকা সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট। ঝাউ গাছগুলোর দুলতে থাকা মাথারা বয়ে চলা ঝোড়ো হাওয়ার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, তবে ঘরের ভেতরে তাকে অনুভব করা যাচ্ছে না। শরীরটা আজকাল ভাল যাচ্ছে না সম্রাটের। রাশিয়ার আমূল পরিবর্তনে যে ভূমিকা তাঁকে পালন করতে হয়েছে, তাতে মনের সঙ্গে শরীরেও চাপ কম পড়েনি। মাত্র পঁচিশ বছরেই তাঁর হাত ধরে রাশিয়া মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিনগুলো অতিক্রম করে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই সাফল্যের মূল্য চোকাতেই যেন এই বাহান্ন বছর বয়সেই শরীরে বাসা বেঁধেছে কঠিন অসুখ। শরীর অশক্ত, কিন্তু মনে যৌবনের প্রবল উপস্থিতি। রোগশয্যায় শুয়েই পাল্টে যাওয়া রাশিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে তাঁর মনে হল রাশিয়ার পরে কী? ইতিহাসচর্চায় উৎসাহী সম্রাট শুনেছিলেন সিমিওন দেজনেভের কথা, যিনি দুবার চেষ্টা করেছিলেন রাশিয়ার পূর্বপারে এক স্বপ্নের ভূমিতে পৌঁছোতে। তাঁর মন চাইল সেই পথে যেতে। শেষে ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ তাঁর নৌবাহিনীর কমান্ডার ভিটাস জোনাসেন বেরিং-কে ডেকে আদেশ দিলেন এক অভিযান সংগঠনের, যা খুঁজে দেখবে রাশিয়ার পূর্বপারে কী আছে!
এর ফলশ্রুতিতে জন্ম নিয়েছিল দুটি দুনিয়াকাঁপানো অভিযান। দ্বিতীয়টি পরিচিত হয়েছিল ‘দ্য গ্রেট নরডিক এক্সপেডিসন’ নামে, আর আলাস্কা নামের ভূভাগ মুখ দেখেছিল বাকি পৃথিবীর।
অভিযানের শুরু বা শেষ কোনওটাই দেখে যেতে পারেননি পিটার দ্য গ্রেট। ফলাফল বিচার তো অনেক পরের ব্যাপার। মাত্র দেড় মাস পরে কিডনির অসুখ কেড়ে নেয় পিটারের জীবন। ১৭২৫-এর ৮ ফেব্রুয়ারি ইউরিমিয়ায় আক্রান্ত পিটার মৃত্যুর আগে শেষ উচ্চারণ করেছিলেন একটি অসম্পূর্ণ সংলাপ— ‘Give everything…’। অসম্পূর্ণ বাক্যটি তার শেষ কথাগুলো খুঁজে পেলে কোন সম্পদ কার কাছে যাবার নির্দেশ থাকত, তা এখন একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। কিন্তু রোমান্টিক সম্রাট তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছাকে এক রোমান্টিক ভ্রমণের গর্ভেই সঁপে দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন— এর থেকে আর বেশি ঘন রোমান্সের গল্প একজন ভ্রামণিক কীই বা ভাবতে পারেন।

*

ভ্রমণের গল্পের শরীরকে রোমান্টিকতার মলাট পরিয়ে পুজোর ঘটের তিরকাঠিতে সুতো বাঁধার কাজটি করেন লেখক। আদালতের বিচারে তাতে মিথ্যের মিশেল থাকে অনেক। কল্পনা শব্দের আড়ালে দাঁড়িয়ে কিছুটা ছাড় হয়তো আদায় করা যায়। যুক্তিবাদীর আক্রমণ তাতে কমে না। মিথ্যে আদতে নিশ্চয়ই মিথ্যে। কিন্তু ওই মিথ্যে প্রতিমার পুজোতেই তো গড়ে ওঠে আচার, বিশ্বাস, পরম্পরা— এককথায় জীবন। তার মাটির চিবুকেই গচ্ছিত থাকে আমাদের অনন্ত আদর, সোহাগ।
ম্যালোরি কি সত্যিই ওই তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন? নীরস তথ্য বলছে, তার অকাট্য প্রমাণ নেই। সবটাই নাকি সাংবাদিকের কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু এই ‘নেই’-এর ভজনায় যদি মাতি, জীবন থেকে নাটক চলে গেল অনেকটাই। জীবন যেন ডিজাইনার পোশাক ছেড়ে গাছের ছাল পড়ে ফেলল। তাতে লজ্জানিবারণ হল বটে, কিন্তু স্টাইল স্টেটমেন্টটা হারিয়ে গেল। ছবির ভাষায়, পোরট্রেট হল না, পাসপোর্ট ফটোতে আটকে গেল ছবিটা।
লাতেহার পাহাড়ের সানুদেশের গ্রামের মেয়েবউরা নিছক জল আনার মতো প্রাত্যহিক কাজের প্রয়োজনেই যেত পাহাড়ের খাঁজে বয়ে চলা ঝর্নার জলে। বেলা গড়িয়ে রং পাল্টানো সূর্যের প্ররোচনায় পাহাড়ের প্রহরে প্রহরে পাল্টে যাওয়া রূপ দেখার সময় বা মানসিকতা তাদের ছিল কি না সেটা যথেষ্টই সন্দেহের বিষয়। বরং ব্যস্ত গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে এই যাওয়াটুকু ইস্কুলের পড়ার পিরিয়ডের মাঝখানে গুঁজে দেওয়া টিফিন পিরিয়ডের অবকাশের মতো স্বস্তি বয়ে নিয়ে আসত, এটাই মনে করা স্বাভাবিক। সেখানে পতিনিন্দা, পাশের বাড়ির উদ্ভিন্নযৌবনা মেয়েটির গোপন প্রণয়ের চর্চা, কিংবা সংসার প্রতিপালনের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ভার লাঘবের কৌশল নিয়ে আলোচনা সূচিপত্রের সবটুকুর দখল নেবে, তার সম্ভাবনাই প্রবল। যে ছবি তাদের নিয়ে আঁকলেন সঞ্জীবচন্দ্র, তাকে এক আটপৌরে সংসারসংবাদের রোমান্টিক ভার্সান বললে ভুল হবে না। ঘটনার ঘনঘটা এখানে যতটা, লেখকের ইচ্ছাপূরণ তার থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সাদামাটা ক্যানভাসের গায়ে রঙের পোঁচ পড়লে তবেই না ছবির শুরু!
অশক্ত শরীরে শয্যার আরামে ফায়ারপ্লেসের আগুনের ওম নিতে নিতে যে অভিযানের কল্পনায় মশগুল পিটার, তাতে নিত্যসঙ্গী অনিশ্চয়তা, নিদারুণ শারীরিক কষ্ট, এমনকি জীবনহানির আশংকা। কিন্তু তাতে কী? ওই যে রহস্যময়তার হাতছানি, তাকে উপেক্ষা কি সম্ভব? তাই মনে মনেই তিনি বেরিং-এর সঙ্গে ভেসে গেছেন কূলহীন সাগরের বুকে এমন এক অনির্দেশ্য গন্তব্যের উদ্দেশে, যা আছে কী নেই তাই-ই অনিশ্চিত। নিশ্চিত শুধু যাত্রার কষ্ট। তবু মন যে ওই কাঁটাবিছানো রাস্তাতেই হাঁটতে চায়। আত্মনিপীড়ন— সেও যে রোমাঞ্চের রকমফের মাত্র!

Advertisement

*

রোমান্টিক ভ্রমণ আলেখ্য, এই নিয়ে একটু উল্টোতে পাল্টাতে গিয়ে জানতে পারছি যে, পণ্ডিতদের মতে, এটি নাকি সাহিত্যের এক বিশেষ ‘জঁর’। তার নাকি পাঁচটি চরিত্রলক্ষণ।
১। প্রকৃতির শক্তি ও মাহাত্ম্যের অনুভব
২। সে বিশালত্বের প্রেক্ষিতে নিজের ক্ষুদ্রতার উপলব্ধি, ফলশ্রুতিতে মানুষের অন্তর্নিহিত সন্ন্যাসের উদ্বোধন
৩। জীবনে পবিত্রতা ও মূল্যবোধের শিক্ষাকে বহন
৪। অজানাকে জানার প্রচেষ্টায়, প্রয়োজনে আত্মপীড়নের বিনিময়েও অপরিচিত রাস্তায় যাত্রার সঙ্কল্প
৫। কোনও জায়গার ইতিহাস বর্ণনার প্রয়োজনে সেই সময়ের চরিত্র, সংলাপ ও ঘটনার কাল্পনিক কিন্তু বাস্তবানুগ বর্ণনার মাধ্যমে সেই সময়ের চিত্রটি বিনির্মাণ।
পড়তে পড়তে আমার অপণ্ডিত মন কেন জানি কেঁদে উঠল— হায়রে! রোমান্টিক লেখাকেও এমন অ-রোমান্টিক ‘কব, কিউ, কাঁহা’-র প্রশ্নমালায় যারা বেঁধে ফেলতে চায়, তারা পণ্ডিত বটে, কিন্তু অ-রসিক। জীবনের ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ চেহারাটাকে যারা তালিকার খাঁচায় আটকে ফেলে, তাদের গলায় নিশ্চয়ই আটকে গেছে পুথির খসখসে পাতা। মনে পড়ল, কোথাও না গিয়ে ভ্রমণের অনন্ত রোমান্সে ডুবে গিয়ে যে কবি লিখলেন—
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,’’— তাঁর কথা।
আর মনে হল সবার জন্য ছুড়ে দিই একটা প্রশ্ন— ‘ও মশাই, একটাও ভ্রমণের লেখা দেখান তো যাতে রোমান্স নেই!’

চিত্র: বিজন সাহা, রাশিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »