তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।
আমি এখনও বলছি ।। আবদুল বশির এব্রাত
মোমের মতো, আমি হাসছি চোখের সামনে, কাঁদি আড়ালে। যে পাখি চেঁচিয়ে ডাকে, তার মতো গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে হারিয়ে যাই।
ধরো সেই শত্রু ছুটে পালাচ্ছে, আমার চোখ এড়িয়ে
সেও এমনি ডাক ছেড়ে পালাবে, আমার কবরে ঢোকার সময়।
শোনো, আমার কথা শোনো, বোঝো,
আমি কিন্তু দাঁড়িয়ে রয়েছি, মৃত্যুর পরেও।
যদি দেখো আমি চোখের সামনে নেই
আমি তোমার মনের কাছে উঁকি দেব।
আমি ফুরিবে যাব না, শুকনো তুচ্ছ ঘাসের মতো
আমি বলেই যাচ্ছি, আমার কলমের জিভ
এখনও শব্দদাত্রী
আমি তোমায় কিছু বলব, ধরো
সেটা একটা উপমা মাত্র।
ঈশ্বর চান, তুমি যা কখনও ভুলবে না।
[লেখা ১৯৯০]
»
প্রার্থনা ।। আবদুল গফফার বারিইয়ালাই
প্রার্থনায় মুখর হয়েছি
তুমি আশীর্বাদ বর্ষণ করো
আমার দেহ পবিত্র করো
যাতে, সব বাধা দূরে যায়।
আমার হৃদয়ের গভীরে একটি মোম
সূর্যের মতো
তাকিয়ে দেখে এই পৃথিবী ও আকাশের রূপ
ফুল ফোটে তোমার স্পর্শে, ও তো আমারই
আকাঙ্ক্ষা
আকাঙ্ক্ষার সুবাস ছড়িয়ে যাক দিগন্তে
আমাকে এই কুহকবৃত্তের ব্যাখ্যাকার করে তোলো
আমার ভাষায় দাও অপার রহস্য
মনকে গড়ে দাও শব্দাতীত
মনকে এমন গড়ো, যাতে এই বারিইয়ালাই
আমর্ম আশায় মুছে ফেলতে পারে, অধিক ভয়
সে নিয়ে এসেছে প্রীত হতে চেয়ে এক
অনন্ত উপহার
[১৯৯০ কাছাকাছি সময়ে লেখা। এখানে লক্ষণীয়, আফগান কবিরাও ঈশ্বরের স্তোত্রে নিজের পদবি বা নাম উল্লেখ করছেন। যেমনটা, আমাদের অনেক প্রাচীন কবিই (কহে চণ্ডীদাস ইত্যাদি) লিখে গিয়েছেন।]
»
সেই প্রাচীন মরুমিছিল ।। আব্দুল বশির এব্রাত
দেখুন, আমাদের কন্দহর এখন কেমন অন্ধ আঘাতে জীর্ণ, গর্তের মতো
লোকজনগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়েই চলে জাবুলের মাটিতে। গজনীতে যুদ্ধের ডাক
মানুষ দগ্ধ হয় ওয়রডাকের প্রান্তরে
লগারে দেখি শত্রুর পথগুলো শিকড় ছড়িয়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়েছে
পকটিয়ার তারুণ্য আজ কিছু ঘটাবেই, বুঝতে পারছি। সেখানে সন্দেহের কতজন রক্ত মিশেছে, টুকরো করা হয়েছে শত্রুর আগাগোড়া।
ওই যে, নায়ক যোদ্ধারা দল বেঁধে গেল কাবুলের দিকে।
হেলমান্দ থেকে কী যেন ডাক শুনতে পাই
আশায় ভরা হৃদয় আজ নেচে উঠেছে
ঊরুজগানের কাথে জমা থাকছে যত শুভেচ্ছা।
ফারাহ থেকে বয়ে আসছে মলয় বাতাসে
শুনছ, কাঁটা বিছানো পথ দূরে গেছে, এখন
আমার উপত্যকায় হাজার ফুলের হিল্লোল।
শিনদাদ, নিমরুঝ, হেরাত
শত্রু নেই, ওসব অর্ধেক এখন। ট্রেঞ্চগুলো গুঁড়িয়ে গেছে সব, আহা, হেরাতের গলায় দুলছে সুখের হীরক মাল্যগুলি।
যারা ভাবেওনি কোনওদিন, এখন ফিরে ফিরে চায়। গোটা দুনিয়া চক্কর দেবে আমাদের মিছিল।
তাঝিক, উজবেক, মোঙ্গল, কোথায় কী!
এখন সুরেলা পাখি ডেকেই চলেছে
এখন শাদা পতাকা হয়তো
তুমি চিনবে ঈশ্বর
এই তো এব্রাত একদিন চেয়েছিল।
[এই কবিতায় কন্দহর, গজনী, ফারাহ, হেরাত, পকটিয়া– এই সমস্ত অঞ্চলের নাম রয়েছে। আসলে, আব্দুল বশির এব্রাত তখন যোদ্ধা। তাঁর চোখে যুদ্ধপীড়িত, যুদ্ধদীর্ণ আফগানিস্তানের নানা প্রদেশ।]





