Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

আমি এখনও বলছি ।। আবদুল বশির এব্রাত

মোমের মতো, আমি হাসছি চোখের সামনে, কাঁদি আড়ালে। যে পাখি চেঁচিয়ে ডাকে, তার মতো গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে হারিয়ে যাই।

ধরো সেই শত্রু ছুটে পালাচ্ছে, আমার চোখ এড়িয়ে
সেও এমনি ডাক ছেড়ে পালাবে, আমার কবরে ঢোকার সময়।

শোনো, আমার কথা শোনো, বোঝো,
আমি কিন্তু দাঁড়িয়ে রয়েছি, মৃত্যুর পরেও।

যদি দেখো আমি চোখের সামনে নেই
আমি তোমার মনের কাছে উঁকি দেব।

আমি ফুরিবে যাব না, শুকনো তুচ্ছ ঘাসের মতো
আমি বলেই যাচ্ছি, আমার কলমের জিভ
এখনও শব্দদাত্রী

আমি তোমায় কিছু বলব, ধরো
সেটা একটা উপমা মাত্র।
ঈশ্বর চান, তুমি যা কখনও ভুলবে না।

[লেখা ১৯৯০]

»

প্রার্থনা ।। আবদুল গফফার বারিইয়ালাই

প্রার্থনায় মুখর হয়েছি
তুমি আশীর্বাদ বর্ষণ করো
আমার দেহ পবিত্র করো
যাতে, সব বাধা দূরে যায়।

আমার হৃদয়ের গভীরে একটি মোম
সূর্যের মতো
তাকিয়ে দেখে এই পৃথিবী ও আকাশের রূপ
ফুল ফোটে তোমার স্পর্শে, ও তো আমারই
আকাঙ্ক্ষা
আকাঙ্ক্ষার সুবাস ছড়িয়ে যাক দিগন্তে

আমাকে এই কুহকবৃত্তের ব্যাখ্যাকার করে তোলো
আমার ভাষায় দাও অপার রহস্য
মনকে গড়ে দাও শব্দাতীত

মনকে এমন গড়ো, যাতে এই বারিইয়ালাই

আমর্ম আশায় মুছে ফেলতে পারে, অধিক ভয়
সে নিয়ে এসেছে প্রীত হতে চেয়ে এক
অনন্ত উপহার

[১৯৯০ কাছাকাছি সময়ে লেখা। এখানে লক্ষণীয়, আফগান কবিরাও ঈশ্বরের স্তোত্রে নিজের পদবি বা নাম উল্লেখ করছেন। যেমনটা, আমাদের অনেক প্রাচীন কবিই (কহে চণ্ডীদাস ইত্যাদি) লিখে গিয়েছেন।]

»

সেই প্রাচীন মরুমিছিল ।। আব্দুল বশির এব্রাত

দেখুন, আমাদের কন্দহর এখন কেমন অন্ধ আঘাতে জীর্ণ, গর্তের মতো
লোকজনগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়েই চলে জাবুলের মাটিতে। গজনীতে যুদ্ধের ডাক
মানুষ দগ্ধ হয় ওয়রডাকের প্রান্তরে

লগারে দেখি শত্রুর পথগুলো শিকড় ছড়িয়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়েছে
পকটিয়ার তারুণ্য আজ কিছু ঘটাবেই, বুঝতে পারছি। সেখানে সন্দেহের কতজন রক্ত মিশেছে, টুকরো করা হয়েছে শত্রুর আগাগোড়া।
ওই যে, নায়ক যোদ্ধারা দল বেঁধে গেল কাবুলের দিকে।

হেলমান্দ থেকে কী যেন ডাক শুনতে পাই
আশায় ভরা হৃদয় আজ নেচে উঠেছে
ঊরুজগানের কাথে জমা থাকছে যত শুভেচ্ছা।

ফারাহ থেকে বয়ে আসছে মলয় বাতাসে
শুনছ, কাঁটা বিছানো পথ দূরে গেছে, এখন
আমার উপত্যকায় হাজার ফুলের হিল্লোল।

শিনদাদ, নিমরুঝ, হেরাত
শত্রু নেই, ওসব অর্ধেক এখন। ট্রেঞ্চগুলো গুঁড়িয়ে গেছে সব, আহা, হেরাতের গলায় দুলছে সুখের হীরক মাল্যগুলি।

যারা ভাবেওনি কোনওদিন, এখন ফিরে ফিরে চায়। গোটা দুনিয়া চক্কর দেবে আমাদের মিছিল।

তাঝিক, উজবেক, মোঙ্গল, কোথায় কী!
এখন সুরেলা পাখি ডেকেই চলেছে
এখন শাদা পতাকা হয়তো
তুমি চিনবে ঈশ্বর
এই তো এব্রাত একদিন চেয়েছিল।

[এই কবিতায় কন্দহর, গজনী, ফারাহ, হেরাত, পকটিয়া– এই সমস্ত অঞ্চলের নাম রয়েছে। আসলে, আব্দুল বশির এব্রাত তখন যোদ্ধা। তাঁর চোখে যুদ্ধপীড়িত, যুদ্ধদীর্ণ আফগানিস্তানের নানা প্রদেশ।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 3 =

Recent Posts

দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »