Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রোজগেরে ছেলে

চুনিলাল কে মাড়িয়া

ভাষান্তর: শুভঙ্কর সাহা

গালা শেঠ খুব খুশি হল যখন সে শুনল যে তার মোষটা খুব তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চার জন্ম দেবে। সে তার চাকরবাকরদের নির্দেশ দিল ভাগরিকে ভাল ভাল খাদ্যখাবার খাওয়াতে। নিজের গো-খাদ্যের ব্যবসা, ফলে ভাগরির জন্য সেরা বীজটা, খোলটার অভাব ছিল না।
শেঠের খুব উচ্চাশা ছিল এই মোষটার কাছ থেকে। খুব শীঘ্রই এমন একটা বাচ্চা পাওয়া যাবে যে বড় হলে প্রচুর দুধ দেবে। বীজটা, খোলটা, মাখনটা বরাদ্দ হল ভাগরির জন্য। এ আর এমনকী! পরে এর শতগুণ উঠে আসবে দুধ বিক্রি থেকে। কিন্তু হায়! মোষটা কিনা তার মালিককে ঠকিয়ে দিল! শেষে কিনা একটা এঁড়ের জন্ম দিল, এত খরচের পর এই! গালা শেঠ সত্যিই আঘাত পেল। দোকানের খাতা লেখার ছেলেটাও গালা শেঠের মত খরচের খোঁটা দিল ভাগরিকে।
গ্রামবাসীরাও একমত হল এই এঁড়েটাকে নিয়ে শেঠ একটা পয়সাও খরচা করবে না। নির্ঘাৎ গ্রামের ওই খোঁয়াড়টায় পাঠিয়ে দেবে। ওর জায়গা হবে বুড়ো, পঙ্গু, অকাজের সব গোরু-ছাগলের সঙ্গে। খোঁয়াড়টা গ্রামে মানুষের দানধ্যানের ওপরেই চলত।
কিন্তু শেঠের এই পরিকল্পনাটা ভাল লাগল না— বাড়ির পোষ্যটাকে ওই খোঁয়াড়ে দিয়ে দিলে ভাল দেখায় না। যতই অকাজের হোক ছেড়ে দিলে ব্যাপারটা খুব স্বার্থপরের মত হবে। যাইহোক কিছুদিন এইভাবে চলল। কিন্তু পরিবারের অন্যান্যরা বলতে লাগল একে বসিয়ে বসিয়ে খাইয়ে পয়সা ধ্বংস করে লাভ কী? তারা শেঠকে জোর করতে লাগল এঁড়েটাকে ওই খোঁয়াড়ে পাঠিয়ে দিতে। অবশেষে শেঠও হার মানল। একদিন সকালে ওই খোঁয়াড়ে নিয়ে যাবার পথে শেঠের সঙ্গে লাখুর দেখা হল। লাখু ছিল পেশাদার রাখাল। বংশ পরম্পরায় ওরা এই কাজই করে আসছে। সেই সকালে লাখু বেশ অল্পবয়স্ক নধর একটা মোষ নিয়ে চলেছিল পুকুরপাড়ে। এঁড়ে সেটাকে দেখে স্থির দাঁড়িয়ে পড়ল। অনেক বকাঝকা, মারের পরও এঁড়েকে এক ইঞ্চিও নড়ানো গেল না।
লাখু মজা করে বলল, দুষ্টু কোথাকার! আমার মোষের দিকে তাকিয়ে থাকতে তোর লজ্জা হয় না?
কিন্তু এঁড়েটার কোনও বিকার নেই।
গালা শেঠও দেখল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এ তো বেশ অসুবিধায় ফেলল। ফলে লাঠি দিয়ে আবার মার। কিন্তু তাকে নড়ানো গেল না। বিরক্ত শেঠ মধুবর্ষণ করতে লাগল! এঁড়ের চোখে যেন ঘোর লেগেছে!
লাখুর অভিজ্ঞ চোখ বুঝে নিল, এঁড়ে পরে ভাল ষাঁড় হয়ে উঠবে। সে শেঠকে বলল, ‘শেঠ, একে আমার কাছে দিয়ে দাও। গ্রামের ওই খোঁয়াড়ে পাঠাতে হবে না। ওকে খাবারদাবার খাইয়ে ঠিক মানুষ করে নেব। ও কখনওই আমার কাছে বোঝা হয়ে উঠবে না।’
‘এই অকাজের এঁড়েকে নিয়ে তুই কী করবি?’
‘আমি ওকে ট্রেনিং দিয়ে রোজগেরে করে তুলব। কয়েক বছরের মধ্যেই এ ভাল ষাঁড় হয়ে উঠবে। তারপর গোরু, মোষ ডাকলে ওকে কাজে লাগাব।’
‘ঠিক আছে, যা ভাল বুঝিস কর। তোর যদি দুটো পয়সা আয় হয় আমি কিছু ভাবব না।’
‘কি বললে, পয়সা? কে জানে বড় হয়ে কী হবে? তবে ওর পিছনে এখন আমার অনেক খরচা আছে।’
শেঠ খুশি হল দুটো কারণে। প্রথমত সামাজিক লজ্জার হাত থেকে বাঁচবে আর দ্বিতীয়ত বাড়ির প্রাণীটা চোখের সামনে সামনে থাকবে। আসলে শেঠের কেমন যেন একটা মায়া পড়ে গেছে এই অবোধ প্রাণীটার প্রতি। গালা শেঠ আবার ভাবল একেবারে মাগনা দিয়ে দেব? লাখু তো পরে টাকা কামাবে। চিন্তাটা শেঠের মত ব্যবসায়ীর বেশ মনে ধরে গেল।
পরেক্ষণেই শেঠ দরদাম করতে শুরু করে দিল, ‘শোন, এঁড়োকে বড় হয়ে যখন কাজে লাগাবি তখন প্রত্যেকটা গোরু দেখালে আমাতে কত দিবি? তুই তো পয়সা নিবি।’
সহজ সরল লাখু তো ব্যবসায়ী নয়, তাই সে সঙ্গে সঙ্গেই বলল, ‘ঠিক আছে আধাআধি দেব।’
শেঠ খুশি হয়ে চুক্তিটা পাকা করে ফেলল।
লাখু তার দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পারল এঁড়েটা পরে যথেষ্ট কাজে আসবে। তার সমস্ত পরিশ্রম, ভালবাসা দিয়ে লাখু একে বড় করে তুলতে লাগল। লাখুর বাবাও তো তাকে এই অবলা প্রাণীদের মধ্যে বড় করে তুলেছে, তাই এদের প্রতি লাখুর দয়ামায়াটাও একটু বেশি। এদেরকে শুধু পয়সা আয়ের যন্ত্র মনে করে না, প্রত্যেই তার কাছে নানান অর্থে হাজির হয়, যেন সবাই আপনজন।
বছর খানেক আগে তার ছেলে রানা কলেরায় মারা গেল। সে দুঃখ এখনও ভোলেনি লাখু। পার্থিব হিসেবনিকেশের প্রতি তার আর তেমন টান ছিল না। কিন্তু এই ছোট্ট এঁড়েটা তার গোয়ালে ঢোকার পর থেকেই লাখুর ভিতরে ভিতরেও বদল এল। ওকে দেখলেই রানার কথা মনে পড়ে।
একদিন রাত্রে এঁড়েটাকে খাওয়ানোর সময় লাখু কান্নায় ভেঙে পড়ল। মনে মনে ভাবল যদি রানাটা বেঁচে থাকত তাহলে বুড়ো বয়সে নিশ্চয় দুটো ভাত-রুটি দিত। যা হোক উপরওয়ালা আছেন। এই এঁড়েটাই ছেলের কাজ করবে। রানার মত এও আয় করে খাওয়াবে। সেই থেকে এর নাম রাখল রানা।
রানার মধ্যে খুব শীঘ্রই পরিবর্তন এল। মুখের ভাবভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে গলার স্বর। লাখু তার অভ্যস্ত ও অভিজ্ঞ কান দিয়ে বুঝতে পারল, এবার থেকে রানার জন্য পাহারা আরও জোরদার করতে হবে।
পরদিন সকালে জঙ্গল থেকে শক্তপোক্ত একটা বাবলা গাছের ডাল কেটে নিয়ে এল। ছুতোরের কাছে নিয়ে গিয়ে এক মাথায় হুক তৈরি করিয়ে গোয়ালঘরের মেঝেতে পুঁতে দিল গোঁজ হিসেবে। আর রানার গলার চেনটা আটকে দিল এর সঙ্গে।
রানা এখন বড় হয়ে উঠেছে। লাখু ওর জন্য সব সেরা খাবারটা বরাদ্দ করে রাখে। একদিন রাত্রে রানার ঘড়ঘড়ানি শুনে লাখু উঠে গিয়ে দেখে এল সব ঠিক আছে কিনা। গলার চেনটা আর একটু শক্ত করে দিয়ে এল। ভোরের দিকে রানার তীব্র ঘড়ঘড়ানিতে আবার ঘুম ভেঙে গেল। এবার গিয়ে দেখল রানাও নেই আর খুঁটিটাও নেই। তেলের বাতিটা আর একটু উস্কে দিয়ে খুঁজতে লাগল রানাকে। লাখু দেখল দূরে অন্ধকারে রানা, পরম তৃপ্তিতে এক মোষের সঙ্গে তার শরীর ঘষে চলেছে। গলায় ঝুলছে চেনটা।
শক্ত গোঁজটা উপড়ে ফেলে দিল রানা! লাখু অবাক হল কিন্তু ধৈর্য্য হারাল না। জীবনে এর চেয়ে আরও শক্তপোক্ত ষাঁড় সামলেছে সে। কাছাকাছি আর একটা হুকে রানাকে বুদ্ধি করে বেঁধে ফেলল সে। চালাকি করে মোষটাকে সরিয়ে নিল পাশের ঘরে। এতে রানা রেগে গিয়ে তার মালিকের দিকে চেয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। আরও একটা চেন দিয়ে রানাকে কব্জা করে নিল।
এটা লাখুর কাছে পরিষ্কার একটা সতর্কবাণী। সে ভাবল এবার রানার নাক ফুটিয়ে একটা বালা পরিয়ে দিতে হবে। ওই বালার সঙ্গে একটা চেন বেঁধে দিলে একে পোষ মানানো সহজ হবে। গ্রামের দক্ষ নাপিতকে ডেকে কাজটা সেরে ফেলল লাখু। রানার সামনের হাঁটুতে রুপোর পাত লাগানো আছে। তার সঙ্গে নাকের বালাটা চেন দিয়ে বেঁধে দিল। এবার থেকে সহজেই রানার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে।
রানা ক্রমে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠল। লাখু মনে মনে ভাবল এবার থেকে একে কাজে লাগানো যাবে আর মাদি-প্রতি চার্জ নেবে এক টাকা। গালা শেঠও এরকমটা ভাবছিল কিন্তু তার মতে চার্জটা বাজার অনুযায়ী কম। সে দু’টাকার কথা বলল। লাখুরও রাজি না হয়ে উপায় নেই। খবরটা পাশের সব গ্রামে রাষ্ট্র হতে দেরি হল না।
চারপাশে গোরু দেখানোর মত মাত্র একটাই ষাঁড় ছিল। তার চার্জ মাত্র এক টাকা। কিন্তু রানার মত সে বলশালী নয়। ফলে রানার এই বাড়তি টাকাটা সবাই মেনেই নিল। অনেক দূর দূর থেকে মানুষ তাদের গোরু-মোষ রানার কাছে আনতে লাগল। লাখুর ভাগ্যও খুলে গেল। যদিও এক টাকা করে শেঠকে দিতে হয়, তবুও লাখুর ভাগ্যে যা জুটছে তা কম কীসে! সে রানাকে একটা সোনার পাত গড়িয়ে দিল।
লাখুর আনন্দ যেন উপচে পড়ছে। রানা সত্যি সত্যিই তার উপায়ী ছেলে হয়ে উঠেছে। লাখুও তার প্রতি পিতার স্নেহ ও যত্ন ফিরিয়ে দিতে কসুর করে না। কিন্তু গালা শেঠ এতে খুশি নয়। রানা তো আসলে ওর। ফলে ও মতলব ভাজে কী করে চার্জটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়।
একদিন সকালে দূর দেশ থেকে এক কৃষক এল তার গোরু নিয়ে। গ্রামের কুয়োতলার কাছে দাঁড়িয়ে লাখুকে খবর পাঠাল। লাখুও রাজকীয়ভাবে রানাকে নিয়ে এল। রানা ছুটে যাবার চেষ্টা করতেই লাখু তাকে চেন দিয়ে আটকে দিল। এমন সময় শেঠ সেখানে এসে হাজির হল। সে বলল, এই কৃষকের কাছ থেকে তিন টাকা নেওয়া হোক। শেষমুহূর্তে এই বেশি পয়সার কথা শুনে কৃষকও যেমন সংকটে পড়ল, তেমনই লাখুও শেঠের প্রতি অসন্তুষ্ট হল। রানা কিন্তু ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে লাগল। এদিকে কৃষকও বেশি পয়সা দেবে না। শেঠও নাছোড়।
রানার অবস্থা দেখে লাখু শেঠকে অনুনয়-বিনয় করতে লাগল আর কৃষকও বেশি পয়সা না দিয়ে অন্য ষাঁড়ের সন্ধানে চলল। রানাকে ধরে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল। শেঠ শুধু পয়সা বোঝে। আর কিছু নয়। শেঠ লাখুকে বলল, ‘ষাঁড়টাকে বেঁধে ফেল।’
‘এটা কিছুতেই সম্ভব নয় আর।’
‘আমি বলছি, বাঁধ।’
‘এটা খুব বিপজ্জনক ব্যাপার এখন।’
‘আমি তোকে আদেশ করছি লাখু, বাঁধ।’
নিরুপায় লাখু বালার মধ্যে চেন ঢোকানোর চেষ্টা করতেই উপস্থিত জনতা চেঁচিয়ে উঠল, ‘নাকের বালা বাঁধতে যাস না, রানা কিন্তু তোকেও মানবে না…।’
মন্দিরের চাতালে দাঁড়ানো মানুষজনও বুঝতে পেরেছে রানার চোখের ভাষা। কিন্তু শেঠ পারেনি। জনতা নিষেধ করলেও শেঠ চায় লাখু তার আদেশ পালন করুক। সে কারও কাছে মাথা নোয়াতে চায় না।
লাখু আদেশ পালন করার চেষ্টা করল। নাকের বালার মধ্যে যেই না চেনটা ঢুকিয়েছে, রানা তার মনিবকে অস্বীকার করতে এক হ্যাঁচকায় মাথা তুলে ধরল। এই টানে তার নাক গেল ছিঁড়ে। বালা বেরিয়ে এল আর অঝোরধারায় রক্ত ঝরতে লাগল। কিন্তু রাগে হিংস্র হয়ে ওঠা রানার কছে ব্যথাযন্ত্রণার চেয়ে তার অতৃপ্তির দাম বেশি। তাই সে ক্রোধান্ধ হয়ে তার মনিবের দিকে ছুটে গেল প্রতিশোধ নিতে।
লাখুও প্রাণভয়ে ছুটতে লাগল। শেঠ আর সবাই মন্দিরে আশ্রয় নিল। লাখু জঙ্গলের পথে ছুট লাগাল। রানাও তার পিছু নিল। যেন হত্যা না করতে পারলে ওর শান্তি নেই। মানুষজন চিৎকার করে সবাইকে সাবধান করে দিতে লাগল। ‘পালাও পালাও, রানা পাগল হয়ে গেছে।’
লাখুও বাঁচার জন্য জঙ্গলের মধ্যে শুধু আঁকাবাঁকা পথ নিতে লাগল। কিন্তু রানাও তাকে অনুসরণ করে চলেছে। লাখু তার গতি বাড়িয়ে দিল। ও বুঝতে পারল অতৃপ্ত রানার হাত থেকে আর নিস্তার নেই। লাখুর বয়স হয়েছে, যুবক রানার সঙ্গে পারবে কী করে! ভাগ্যের কী পরিহাস, যাকে পুত্রস্নেহে গড়ে তুলল সেই কিনা তার প্রাণ নেবার জন্য ছুটছে! সমস্ত ভালবাসা, স্নেহ অসার প্রতিপন্ন হল। লাখু আর দৌড়তে পারছে না। তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। মরিয়া লাখু্ মাথার লাল পাগড়িটা ফেলে দিয়ে রানাকে বিভ্রান্ত করতে চাইল। সেটা শিংয়ে তুলে নিয়ে রানা তাড়া করতেই লাগল।
লাখু শেষ আশ্রয় হিসাবে একটা বড় ক্যাকটাসের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ল। এক মুহূর্তের জন্য ভাবল, ‘বোধহয় বেঁচে গেলাম।’ কিন্তু না, রানা ওকে দেখে ফেলেছে। তার সোনার পাত মোড়া সামনের পা দুটো তুলে রানা বৃদ্ধ লাখুর পাঁজরে সজোরে লাথি মারল। দু’পা দিয়ে হাড়পাঁজরা পিষে দিল। লাখু মরল। রক্তের স্রোতের মধ্যে তার নিঃসাড় শরীরটার ওপরে দাঁড়িয়ে রানা প্রস্রাব করল। প্রতিশোধ নেবার পাশাপাশি তার শারীরিক চাহিদার অতৃপ্ত বাসনা যেন পূর্ণ হল।

[মূল গল্পের নাম The earning son। চুনিলাল কে. মাড়িয়া গুজরাতি আধুনিক ছোটগল্পের রূপকার। ছোটগল্পের পাশাপাশি উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধেও সমান স্বচ্ছন্দ তিনি।]

চিত্রণ : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »