Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

শশীবাবু

অবসর নেওয়ার পর মাঝেমাঝেই পুরনো অফিসের দিনগুলোর স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে। কমদিন তো চাকরি করলুম না। প্রায় ৪৪ বছর। বয়সার্ভিস থেকে শুরু। সেই ষোলো বছর বয়েস থেকেই ঢুকে গেলুম কর্পোরেশনের কাজে। রাস্তায় ময়লা পরিষ্কার তদারকির কাজ। বাহারি ইংরিজি নাম কনজারভেন্সি ডিপার্টমেন্ট। ভোরবেলা থেকে আউটডোর ডিউটি। দুপুর পর্যন্ত। রাস্তার কাজ সেরে অফিসে এসে কিছু খাতাপত্তরের কাজ করে নিতে হত। আর চাকরিতে ঢুকেই পেলুম শশীকান্তবাবুর মত বসকে। তার পদের নাম ওভারসিয়র। ঢুকেই শুনলুম ভয়ংকর জাঁদরেল অফিসার। ওপরমহলের সকলে একডাকে চেনেন। কয়েকজন বিশেষ বদনামও করলেন।

শশীকান্তবাবুকে প্রথমদিন দেখে আমার কিন্তু খারাপ লাগল না। মাঝারি উচ্চতা, টাক মাথা, খাকি শার্ট হাফপ্যান্ট আর মাথায় হ্যাট পরে ডিউটিতে আসতেন। সর্বক্ষণের বাহন সাইকেল। একটু নাকি গলা। তবে মেজাজি মানুষ। যাকে ভাল লাগল তাকে শশীবাবু মাথায় করে রাখেন। কিন্তু গুডবুক থেকে নাম বাদ গেল যার, কপালে তার অশেষ দুর্ভোগ। ব্রাহ্মণ সন্তান, ভক্তমানুষ। আজীবন কলকাতার রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়েই প্রাণপাত করে ফেললেন। অনেকক’টি ছেলেমেয়ে। ওর ইংরিজিতে খানিক দুর্বলতা ছিল। ফাইলটাইল লেখাতে হলে বরো অফিসের কেরানিদের ধরতে হত আর কর্পোরেশনের দস্তুরই হল ফেলো কড়ি আর মাখো তেল। কিন্তু ফাইল লেখাতেই হয়, আর শশীবাবুর বড্ড বাজে খরচও হয়।

আমি খানিক ইংরিজি লিখতে পারি শুনে শশীবাবু আমাকে ভালবেসে ফেললেন। একদিন লেখালেন আমাকে দিয়ে ড্রাফট। লেখা শশীবাবুর পছন্দ হল। আর শশীবাবু আমাকে করে ফেললেন তার ছায়াসঙ্গী। আমার কোনও নির্দিষ্ট কাজ আর থাকল না। ভোরবেলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখতাম আমার আগেই শশীবাবু সাইকেল নিয়ে হাজির। তুমি অমুক রাস্তায় এসো বলে সাইকেল নিয়ে তিনি এগোতেন। আমি হেঁটে পৌঁছতাম সেখানে খানিক বাদেই। শশীবাবু কাজ তদারকি করতেন, সঙ্গে আমি। শশীবাবুর হয়ে আমাকেই শ্রমিকদের হাজিরা নেওয়া, ছুটি ছাড়া, বদলি যোগাড় এইসব কাজ করতে হত।

শশীকান্তবাবুকে আমারও ভাল লেগে গেল। আমাদের বাড়ির কয়েকটি পাড়া পরেই তার বাড়ি। দুজনে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতাম দুপুরে, শশীবাবু আমার সঙ্গে সাইকেল হাঁটাতে হাঁটাতে চলতেন। প্রথমেই তেরো মিনিটের হল্ট শনিমন্দিরে। শশীবাবু ফুটপাথে চটি খুলতেন। তারপর খালিপায়ে চটি থেকে ছ’ফুট দূরে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেন। চোখ বুজে প্রথম মিনিট পাঁচেক পাথরের মূর্তির মত হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর জোড়হাতেই মাথা নাড়া শুরু দু’দিকে। তারপর মাথা নাড়তে নাড়তেই মা মা বলে অস্ফুট চিৎকার। শনিদেবকে তিনি কেন মা বলতেন আমি জানি না। তারপর ভেউভেউ করে কান্না শুরু আর বেশ জোরে মা মা বলে আর্তনাদ। চোখ দিয়ে রাস্তার টাইমকলের মত জল বেরচ্ছে। বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে শশীবাবু মা-কে ডাকছেন। তারপর পকেট থেকে মোটা দক্ষিণা কাচের বাক্সে ফেলে চটি পরে আবার হাঁটা শুরু। তখন দেখে কে বলবে খানিক আগেই ভদ্রলোক ভক্তিরসের অশ্রুসাগরে ভেসে যাচ্ছিলেন।

শশীবাবু ৩৬৫ দিন দুপুরে বাড়িতে ডাঁটাচচ্চরি খেতেন। সজনে ডাঁটা হোক বা পুঁই ডাঁটা কিংবা কাটোয়ার ডাঁটা— ডাঁটা তিনি খেতে বসে চিবোবেনই। ওতে দাঁত শক্ত হয়। শুনেছি শশীবাবু দুপুরে খেতে বসে ডাঁটা চিবোতে চিবোতে একখেপ ঘুমিয়ে নিতেন। সাইকেল চালাতে চালাতে ঘুমোতে তো আমি তাকে নিজের চোখেই দেখেছি। তখন এক জাঁদরেল অল্ডারম্যান ছিলেন। শুনলুম কনজারভেন্সির কাজে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি একটি মিটিং ডেকেছেন। শশীবাবুরও ডাক পড়েছে। শশীবাবু আমাকে ট্যাঁকে গুঁজে চললেন সেই মিটিংয়ে। আমার মিটিংয়ে থাকার কথাই নয়, কিন্তু শশীবাবু নাছোড়। বুঝলুম আজই চাকরির শেষদিন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

মিটিংয়ে গিয়ে পেছনের দিকে দুটি চেয়ারে আমি আর শশীবাবু বসলাম। আমি তো মনে মনে ইষ্টনাম জপছি। কী আছে কপালে কে জানে? শুনছি অল্ডারম্যান কনজারভেন্সির বাঘা বাঘা চিফ ইঞ্জিনিয়র আর ইঞ্জিনিয়রদের একেবারে ধুনে দিচ্ছেন। ভয় ক্রমশ বাড়ছে। হঠাৎ শুনি ঘড়ঘড় আওয়াজ। শশীবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন আর দিব্বি নাক ডাকছেন। আমি যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। দু-একবার কনুই দিয়ে ধাক্কা দিলুম, লাভ হল না, নাক ডাকা বেড়েই গেল। শেষে সেই নাকডাকার আওয়াজ পৌঁছল সেই জাঁদরেল অল্ডারম্যানের কানে। তিনি মিটিং থামিয়ে আশ্চর্য হয়ে দেখলেন ঘুমন্ত শশীবাবুর দিকে। আমার দম তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগাড়। তার পরেই অল্ডারম্যান সাহেব একেবারে রাগে ফেটে পড়লেন। চিৎকার করে চিফ ইঞ্জিনিয়রকে বললেন, ‘দেখুন দেখুন শশীবাবুর মত বৃদ্ধ একজন কর্মচারী এত পরিশ্রম করছেন যে ক্লান্ত হয়ে মিটিংয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ছেন। আর আপনারা, আপনারা কী করছেন?’ সেই চিৎকারে শশীবাবুর ঘুম ভাঙল। তিনি মুখের নালটাল মুছে দিব্বি বিগলিত বদনে বাকি মিটিংটা জেগে রইলেন।

শশীবাবু আর আমার ঘনিষ্ঠতা যথারীতি অন্য সহকর্মীরা ভাল মনে নেননি। তারা আমাকে বলতেন শশীবাবুর সিগনি-মোছা রুমাল। সবসময় বুকপকেটে রেখে দেন। কিন্তু আমি ওসবে পাত্তা দিতাম না। দুপুরের পর আর শশীবাবুর ছায়াও মাড়াতাম না। কারণ জানা ছিল, বিকেল হলেই শশীবাবু সাইকেল নিয়ে চলে আসতেন বরো অফিসে। তার ডিউটি নেই। তবু আসতেন আর এসে আড্ডা জমাতেন কন্ট্রোলরুমে। কন্ট্রোলরুমে তখন একটিই টেলিফোন। বিকেলে যত টেলিফোন আসত শশীবাবুই শশব্যস্ত হয়ে ধরতেন। মূলত বড়কর্তাদের টেলিফোনই আসত। তাঁরা জানতেন ডিউটির পরেও শশী কন্ট্রোলরুম সামলাচ্ছেন। আসলে শশীবাবু যেতেন আড্ডা মারতে। নানান সাধকদের নানান আশ্চর্য গল্প জানতেন তিনি। সেগুলি শোনাতেন সকলকে। আমি কোনওদিনই বিকেলে যেতুম না তার সঙ্গে।

একবার কী একটা কারণে গেছি। বসেছি কন্ট্রোলরুমে। এমন সময় টেলিফোন বাজল। শশীবাবু ফোনটা ধরিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন, জ্বলন্ত সিগারেট হাতে লুকিয়ে ফোনে বিনয়ের অবতার হয়ে কথা বললেন। ফোন ছাড়তে আবার চেয়ারে বসে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘চিফ ইঞ্জিনিয়র সাহেবের ফোন ছিল। ভবনাথ সেন স্ট্রিটের মুখে একটা কুকুর গাড়ি চাপা পড়েছে। এখনই পরিষ্কার করার কথা বললেন।’ আমি তখন তিতিবিরক্ত। কেন যে বিকেলে এখানে আসতে গেলুম। বুঝলুম এই কাজ আমার ঘাড়েই চাপবে এখন। এই সন্ধেবেলায় মরা কুকুর তোলানোর বন্দোবস্ত করতে হবে।

আমি বললাম, ‘তাহলে আমি একবার গোখানায় যাই, দেখি ওখানে কাকে পাই এখন।’ শশীবাবু বললেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘ওই যে চিফ ইঞ্জিনিয়র বললেন, রাস্তায় কুকুর মরে পড়ে আছে না।’ শশীবাবু একগাল হাসলেন, ‘রাস্তায় কুকুর মরেছে গাড়ি চাপা পড়ে। চিফ ইঞ্জিনিয়র ফোন করে কন্ট্রোলে জানিয়েছেন সেটা। জেনেছেন শশী কন্ট্রোলে আছে। তিনি নিশ্চিন্ত। চিফ ইঞ্জিনিয়র ফোনে আমাকে পেলেন। আমিও নিশ্চিন্ত। এখন চিফ ইঞ্জিনিয়রেরও দায় পড়েনি কুকুর পরিষ্কার হল কি না তার খোঁজ নেওয়ার আর আমারও দায় পড়েনি এই সন্ধেবেলা কুকুর তোলাবার। যা হওয়ার কালকে দেখা যাবে।’ আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে।

কিছুদিন পরেই আমার বদলি হল নিয়ম মেনে। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ফলে শশীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হল। শশীবাবুর বয়েসে প্রচুর জল ছিল, ফলে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেন। কিন্তু যতদিন যেতে লাগল, নতুন ইয়ং বড়কর্তাদের সঙ্গে শশীবাবুর বনিবনা তেমন হল না। শেষমেশ এক পুরনো বড়কত্তাকে ধরে শশীবাবু আউটডোর ডিউটি থেকে ইনডোর ডিউটিতে ট্রান্সফার হলেন। কর্পোরেশনে এইরকম বদলি সাধারণত হয় না। কিন্তু শশীবাবু কোনওরকমে ম্যানেজ করেছিলেন।

রিটায়ারের আগে শশীবাবু ছিলেন একটি দপ্তরের ক্যাশের চার্জে। নিয়ম যাই হোক ক্যাশ দীর্ঘদিন দপ্তরেই পড়ে থাকে। অনেকেই সেই পয়সা সহকর্মীদের ধারটার দেন। করিৎকর্মারা সুদের কারবার করেন। ক্যাশের চার্জ নিয়ে শশীবাবু কিন্তু কাউকে এক নয়া পয়সা ধারও দেননি। এমনকি বিশেষ প্রয়োজনে অ্যাডভান্সের টাকাও তিনি আইন দেখিয়ে দেননি। শশীবাবুর ইমিডিয়েট ওপরওয়ালা এইসব কারণে একটু চটে ছিলেন। শশীবাবুর রিটায়ারের দিন তিনি শশীবাবুর কাছে ক্যাশের সিন্দুকের চাবি চাইলেন আর বললেন হিসেব বুঝিয়ে দিতে। শশীবাবু চাবি দিলেন আর ওপরওয়ালা সিন্দুক খুলে দেখলেন সেই সিন্দুক প্রায় ফাঁকা। কাজ চালানোর মত ক্যাশ ছাড়া আর কিছুই সেখানে নেই।

অফিসে যেন বাজ পড়ল। কেবল শশীবাবু ভাবলেশহীন। ওপরওয়ালাকে তিনি আশ্বাস দিলেন, আজ ছুটির আগেই তিনি সব মিলিয়ে দেবেন। ওপরওয়ালা পড়লেন ফাঁপরে, ক্যাশ না মিললে তাকেও দায় নিতে হবে। সময় সময় ক্যাশ চেক করা তার কাজ। কোনওদিনই করেননি। ফলে ঝঞ্ঝাট তারও কপালে আছে। দুপুর দুটো। এখনও সিন্দুক খালি। শশীবাবু নিশ্চিন্ত মনে ছানা রুটি আর আলুসেদ্ধ দিয়ে টিফিন খাচ্ছেন। খবরটা তখন আশপাশের দপ্তরেও ছড়িয়েছে। এ ও এসে উঁকি মেরে যাচ্ছে।

দুটো চল্লিশ নাগাদ শশীবাবুর বউ আর বড়ছেলে অফিসে ঢুকলেন। একটা ব্যাগ থেকে অনেকগুলো টাকার বান্ডিল বার করলেন তারা। সাড়ে তিনটের মধ্যে পাই-পয়সার হিসেব মিলিয়ে শশীবাবু ডিপারচারে সই করে অবসর নিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে বাড়ির দিকে চললেন সপরিবারে। দপ্তরে পড়ে থাকা কর্পোরেশনের ক্যাশ দিয়ে শশীবাবু দিব্বি বউয়ের নামে জিপিওতে একটা ফিক্সড ডিপোজিট খুলেছিলেন। রিটায়ারের দিন ম্যাচুইরিটি। তখন পাঁচ বছরে টাকা ডবল। শশীবাবু দু’বছরের মোটা সুদ কামিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »