Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ভ্রমণ: বসন্ত সিংহ রায়

কোয়ারাঙ-২ অভিযানে

প্রশাসনিক বাধায় জুলাই মাসের ২ তারিখে ফিরতে হচ্ছিল লাদাখের চুমুর গ্রাম থেকে। আমরা মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগরের ১০ জন সদস্য গিয়েছিলাম হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি জেলার ৬৭৯৪ মি. উচ্চতার গ্যা শৃঙ্গ আরোহণ করতে। শৃঙ্গটি হিমাচলের লাহুল-স্পিতি জেলাতে হলেও আমরা বেছে নিয়েছিলাম লাদাখের রুপসু উপত্যকার পথ। কারণ লাহুল-স্পিতি জেলার লিংতি উপত্যকা দিয়ে এই গ্যা শৃঙ্গের পাদদেশে পৌঁছাতে দীর্ঘ এবং দুর্গম পথ অতিক্রম করতে হয়। যা খরচ আর সময় সাপেক্ষ। অপর দিকে লাদাখের চুমুর গ্রাম থেকে মাত্র দুদিনে এই শৃঙ্গের মূল শিবিরে পৌঁছে যাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন-এর অনুমতি আমরা অনেক আগেই পেয়ে গিয়েছিলাম। শেষ মুহূর্তে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেরও অনুমতি পেয়েছিলাম এই শৃঙ্গে অভিযান করার। শৃঙ্গটা ভারত আর তিব্বতের সীমানাতে অবস্থিত বলে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। অনুমতি থাকা সত্ত্বেও চুমুর গ্রামে অবস্থিত ITBP নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কিছুতেই অভিযানের অনুমতি দিল না।
মনখারাপ নিয়ে ডিবরিং (মানালি আর লেহ্ শহরের যোগাযোগকারী রাস্তার যেখান থেকে চুমুর গ্রামে যাবার রাস্তা আলাদা হয়েছে) ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। ভাবছি বাড়ি ফিরে যেতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের সাথে থাকা শেরপাদের নিয়ে। ১ জন রান্নার লোক সমেত ৫ জন শেরপা আছে আমাদের সাথে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ফেলেছি গাড়ি ভাড়া বাবদ। ফিরে যেতেই পারি কিন্তু এই শেরপাদের কী হবে। এরা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। এই অভিযান ছিল প্রায় ৩০ দিনের। এই অভিযান শেষ করে ওদের যাবার কথা অন্য একটা অভিযানে। তখন দলের সদস্য পার্থসারথি লায়ক বলল যে, আমরা ফিরে না গিয়ে লাহুল-স্পিতি জেলারই কোয়ারাঙ-৩ (৬১৫৪ মি.) আর কোয়ারাঙ-২ (৬১৮৭ মি.) এই দুটি শৃঙ্গে অভিযান করতে পারি। ও আরও জানাল যে, এর আগে ও ওই অঞ্চলে অভিযান করেছে। আমাদের শেরপা সরদার পেম্বা ছিরিংও বলল যে, এর আগে ওই শৃঙ্গে অভিযান করেছে। তবে ও কোয়ারাঙ-৩ শৃঙ্গে যাবে না। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে বলল, এর আগের কোয়ারাঙ-৩ অভিযানে ও ক্রিভাসে ঢুকে গিয়েছিল।

ঊর্গূস লেকের পাশে বেস ক্যাম্প (৪৬৯৪ মিটার) – কোয়ারাঙ-২ (৬১৮৭ মিটার) পিছন দিকে।

ভাবতে থাকি কী করা উচিত। দুটি বিকল্প আছে– এক ফিরে যাওয়া, নচেৎ অন্য কোনও শৃঙ্গে অভিযান করা। যে শৃঙ্গের সম্বন্ধে কিছু জানি না সেখানে না যাওয়াই ভাল। তবে এখানে ভরসা হচ্ছে পার্থ আর ছিরিং। এরপরেও থাকছে ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন (IMF)-এর অনুমতি। অবশ্য এটা নিয়ে ভাবছি না। কারণ চুমুর গ্রাম থেকে আমি IMF-এর Director-এর সাথে কথা বলেছিলাম। উনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন যাতে আমরা অভিযান করতে পারি। তাই আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, IMF-এর অনুমতি পেয়ে যাব। কারণ গ্যা শৃঙ্গে অভিযান করতে না পারার জন্যে আমরা কোনওভাবেই দায়ী নই। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে, ওই শৃঙ্গদুটিতেই অভিযান করব। সদস্যদের জানানোতে ওদের মুখগুলো আনন্দে ভরে গেল।
৩ জুলাই ডিবরিং থেকে সকাল ৮টার সময় মানালি ফেরার পথ ধরলাম। ক্লাবের সম্পাদক অসীমকে বললাম, IMF-এর সাথে যোগাযোগ করে আমাদের নতুন অভিযানের অনুমতি নেবার ব্যবস্থা করতে। সন্ধেবেলা ফিরে আসলাম বরলাচা আর দারচার মাঝে প্যাটসিওতে। এখানে ফোনের টাওয়ার পাওয়া বেশ মুশকিল। লেহ্-মানালি হাইওয়ের ধারে এই প্যাটসিওতে পর পর ৪টে অস্থায়ী হোটেল আছে। ওই হোটেলের শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই ফোনের কানেকশন পাওয়া যায়। ক্লাবের সম্পাদক অসীম জানাল যে, IMF আমাদের প্রস্তাবিত কোয়ারাঙ-৩ আর কোয়ারাঙ-২ অভিযানের প্রাথমিক অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। আরও জানাল যে, চুমুরের ভারপ্রাপ্ত সামরিক আধিকারিককে নিদ্দিষ্টভাবে আদেশ দেওয়া হয়েছে, আমাদের গ্যা অভিযানের। ওই আদেশের কপিও আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি জানতাম যে, এটা হবে। কারণ বলতে দ্বিধা নেই যে, ITBP গাজোয়ারি করে আমাদের আটকে দিয়েছে। ভাবলাম আবার ফিরে যাবার কোনও মানে হয় না কারণ সামরিক বাহিনী অনুমতি দিলেও ITBP নাও দিতে পারে। যারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দেওয়া অনুমতি অমান্য করতে পারে, তাদের বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। পার্থ যোগাযোগ করল মানালিতে ওর পরিচিত প্রতাপ সিংয়ের সাথে। উনি কথা দিলেন যে, পরদিন সকালে ১৫ জন পোর্টার প্যাটসিওতে পৌঁছে যাবে। প্যাটসিওর উচ্চতা ৩৮২০ মি.। প্যাটসিওতে আমরা রাস্তার ধারে ওই অস্থায়ী হোটেলের পাশে তাঁবু লাগালাম। লীলা ব্যস্ত হয়ে পড়ল রান্না করতে। শেরপারা একটা হোটেলের মালিককে বলে আমাদের অতিরিক্ত সামগ্রী অভিযান করে ফিরে আসা পর্যন্ত রেখে দেবার ব্যবস্থা করল। গ্যা শৃঙ্গে অভিযান ছিল বেশি দিনের। সেই তুলনায় কোয়ারাঙ-৩ আর কোয়ারাঙ-২ শৃঙ্গে অভিযান কম সময়ের। তাই অতিরিক্ত রেশন আর সরঞ্জাম এখানে রেখে যেতে হবে। এদিকে বিজয় ওর বাড়ির গাছের কাঁঠাল নিয়ে এসেছে। কিন্তু তখনও পাকেনি। ছিরিং বলল যে ওই কাঁঠালটা ওদের দিয়ে দিতে। বিজয়ের অনুমতি নিয়ে আমরা ভারমুক্ত হলাম।

ক্যাম্প ১-এর দিকে এগনো – নিচে ঊর্গূস লেক এবং বেস ক্যাম্প।

৪ জুলাই সকাল ১১.১৫-তে আমরা রওনা হলাম খুব সুন্দর আবহাওয়ায়। পূর্ব দিক বরাবর পান্ছি নালার পাশ দিয়ে পথ। গতকাল থেকে বুকের মধ্যে চেপে বসা কষ্টটা আর নেই। গ্যা শৃঙ্গ আরোহণ করতে যেতে না পারার আক্ষেপের থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে, আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়ে গেল গাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ বাবদ। অনেক কষ্ট করে আমরা অভিযানের অর্থ জোগাড় করি আর খরচও করি খুবই হিসাব করে। তার পরেও ভাবতে থাকি অর্থ যাবে-আসবে। আমরা যে সময় নষ্ট না করে আর একটা ৬০০০মি.-এর বেশি উচ্চতার শৃঙ্গে অভিযানে যেতে পারছি, এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমার থেকেও অনেক বেশি পাওয়া কম অভিজ্ঞ সদস্যদের। প্রথমে কিছুটা পথ সবুজ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে যাবার পর শুরু হয় পান্ছি নালার দক্ষিণ পার ধরে এগিয়ে চলা। ১৫ জন পোর্টার আমাদের জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দুপুর ২ টোর সময় আমরা সেদিনের মতন যাত্রাবিরতি করি। পাহাড়ের গা থেকে বয়ে আসা নালা দেখে সবুজ ঘাসের ওপর তাঁবু টাঙিয়ে রাত্রিবাস। নালার জল দেখা যাচ্ছে না। তাই শেরপারা পাথর সরিয়ে দুটো গর্ত তৈরি করে ফেলল। একটা খাবারের আর একটা ধোয়াধুয়ির জন্যে। আমরা হয়তো আরও এগিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু পোর্টারদের বিশ্রামের প্রয়োজন। ওদের প্রত্যেকের পিঠে ৪০ কিলোগ্রামের বোঝা। প্রথমে যখন শুনি যে, পোর্টাররা ৪০ কিলোগ্রাম করে ওজন নেবে, প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ সাধারণত ২৫ কিলোগ্রাম করেই নেয়। তবে স্থানীয়রা এত ওজন নেবে না। এরা সবাই নেপালি পোর্টার। ভাবি, জীবিকার জন্য মানুষকে কতই না কষ্ট করতে হয়।
পরের দিন তাঁবু গুটিয়ে সকাল ৮টার সময় পথচলা শুরু করি। ঝকঝকে আবহাওয়া। ঘণ্টা দুয়েক পাহাড়ের ঢাল ধরে এগিয়ে যাবার পর তীব্র বেগে বয়ে চলা পান্ছি নালা পার হই। তার পর মোরেন রিজের ওপর দিয়ে আরও এগিয়ে দুপুর ১২টার সময় পৌঁছাই মূল শিবিরে। ঊর্গূস লেকের ধারে অসাধারণ সুন্দর চারিদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা ফুলে ভরা এক ছোট্ট সবুজ উপত্যকায় হয়েছে আমাদের বেস ক্যাম্প। লেকের উল্টো দিকেই মানে দক্ষিণ দিকে দেখা যাচ্ছে ৬১৮৭ মি. উচ্চতা বিশিষ্ট কোয়ারঙ-২ শিখর। মাঝেমাঝেই শুনতে এবং দেখতে পাচ্ছি কোয়ারঙ-২-এর উত্তর গাত্র থেকে নেমে আসছে তুষার ধস। মূল শিবিরের উচ্চতা ৪৬৯৫ মি.। আমি পৌঁছানোর আগেই শেরপারা পৌঁছে কিচেন টেন্ট লাগিয়ে ফেলেছে। স্টোভ জ্বালিয়ে লীলা চাও তৈরি করে ফেলেছে। চা পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে গেল। অপেক্ষা করছি কখন বাকি সদস্যরা এসে উপস্থিত হবে। সত্যি কথা বলতে, আমার দীর্ঘ ৩৬ বছরের পর্বত অভিযানে এত সুন্দর মূল শিবির আর দেখিনি। পোর্টারদের চা খাইয়ে বিদায় জানালাম। শেরপারা ৫ জন নতুন কেনা কিচেন টেন্টে থাকবে আর ১০ জন সদস্যের জন্য আমরা আরও ৪টে তাঁবু লাগিয়ে ফেললাম। আমরা এখন অনেক নিশ্চিন্ত। মানে স্বাধীন। অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে না। নিজেদের মতন অভিযান পরিচালনা করতে পারব।
৬ জুলাই। আগের দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আবহাওয়া ভাল থাকলে আজকে আমরা প্রথম শিবিরে আরোহণের সরঞ্জাম আর খাবারদাবার রেখে আসব। সেইমতো বিজয় আর লীলাকে মূল শিবিরে রেখে আমরা রওনা হই সকাল ৮টার সময়। প্রথম শিবিরে যাবার পথ কঠিন নয়। ৫০০ মিটারের কম আরোহণ করতে হবে। ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম প্রথম শিবিরে। প্রথম শিবিরে জিনিসপত্র রেখে দুপুরের মধ্যেই ফিরে আসলাম মূল শিবিরে।

কোয়ারাঙ-২ পিকের ক্যাম্প-১ (৫১৮১ মি.) – ক্যাম্প ২-এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে দেখা।

৭ জুলাই আমাদের বিশ্রামের দিন। বিশ্রাম মানে শুয়েবসে থাকা নয়। মানে মুক্ত। ভাল খাওয়াদাওয়া, এদিক-ওদিক ইচ্ছামতন ঘুরে বেড়ানো। আজ সকালের খাবার হচ্ছে গরম গরম লুচি আর আলুর তরকারি আর তার সাথে সোনপাপড়ি। বিজয় ম্যাকের সাথে অনেক দিন অভিযানে অংশগ্রহণ করছে। ও এখন প্রচুর রিল বানায়। তবে ইউটিউবের জন্যে নয়। শুধুমাত্র নিজেদের জন্যে। আসলে ও এই রকম জায়গার সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে চায়। ও দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে কলাকুশলী জোগাড় করে নেয়। অল্প হলেও এর জন্যে পোশাক নিয়ে আসে। আজ কয়েক দিন ধরেই আবহাওয়া বেশ ভাল। আমি নিশ্চিত ওরা আজকে প্রচুর আনন্দ করবে। তবে আমার সামনে ওরা কিচ্ছুটি করবে না। আমি ওদের দলে নেই। থাকলে ওদের অসুবিধা। তাই আমার বেশি সময় কাটে তাঁবুর মধ্যে পেশেন্স খেলে। তাঁবু থেকে মুখ বের করে দেখতে পাই, ওরা ঊর্গূস লেকের ধার ধরে পরিক্রমা করছে। সদস্যদের মধ্যে ৩ জনের প্রথম অভিযান। স্বাভাবিকভাবেই ওদের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। মোবাইলের ক্যামেরাতে যে কত ছবি উঠেছে, তার হিসাব রাখা কঠিন। আর হবে নাই বা কেন। হিমালয়ের এই রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য ক’জন পায়! আমাদের হিমালয় প্রকৃতির এক অপরূপ দান। শৃঙ্গ আরোহণ আমাদের উদ্দেশ্য হলেও আসল আনন্দ তো এই অপরূপ প্রকৃতির মাঝে কোলাহলহীন জায়গায় কয়েকটা দিন কাটানো। তাও তাঁবুর মধ্যে। আর আমাদের এই সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই নিবিড়। এই তালমিলটা অবশ্য একদিনে তৈরি হয় না। আর আমাদের শেরপাদের কথা আলাদাভাবে কী বলব। দীর্ঘদিন ধরে ওরা আমাদের পর্বত অভিযানের সঙ্গী। আর মানুষ হিসেবে ওদের তুলনা শুধুমাত্র ওরাই। আমার কথা বলতে পারি যে, আমার পাহাড়ে আসার একটা কারণ হচ্ছে এই মানুষগুলির সান্নিধ্য পাওয়া। আমি এখনও ২৫ বছর আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া দার্জিলিং-এর আঙ্ তেন্ডি শেরপাকে মিস করি। আর পেম্বা ছুটি শেরপার কথা মনে পড়লেই বুকের মধ্যে কষ্ট হয়।
আমরা বিশ্রাম নিলেও আজ ৫ জন শেরপাই গেল তাঁবু আর প্রয়োজনীয় জিনিস প্রথম শিবিরে রেখে আসতে। মূল শিবির থেকে প্রথম শিবিরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই ওরা ফিরে আসে।

৮ জুলাই– আমরা ৬ জন সদস্য আর ৫ জন শেরপা প্রথম শিবিরের দখল নেব। প্রথম শিবিরে থেকে যাবে বিজয়, সঙ্গা, অলোক আর পঙ্কজ। বর্ষীয়ান বিজয় ছাড়া বাকি ৩ জনেরই প্রথম অভিযান। রওনা হবার আগে আমরা ভক্তিভরে আমাদের বানানো মন্দিরে পুজো দিলাম। প্রথম দিন প্রথম শিবিরে আসতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগলেও আজ আমরা আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম। ৫৩২০ মি. উচ্চতায় গ্লেসিয়াল মোরেনের ওপর আমাদের তাঁবু লাগানো হল। একটু নিচেই একটা বড় গ্লেসিয়াল লেক আমাদের প্রয়োজনীয় খাবার জলের উৎস। সঙ্গে করে আনা খাবার খেয়ে পেম্বা ছিরিং, মিঙমা দোরজে আর মিঙমা তেনজিং বের হল দ্বিতীয় শিবিরের পথ তৈরি করতে। আমরা ব্যস্ত থাকলাম তাঁবু লাগাতে। ৩ ঘণ্টা পরে ওরা ফিরে এল। এখানে বলে নিই যে, মিঙমা আর তেনজিং হচ্ছে যমজ ভাই। আর ওরা বিয়ে করেছে যমজ দুই বোনকে। আরও বলি। ওই যমজ বোনের বাবা থুপকা শেরপা আমাদের সাথে ১৯৯৭ সাল থেকে অনেক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। দুঃখের বিষয় এই থুপকাও কয়েক বছর আগে অন্য দলের সাথে অভিযানে গিয়ে মারা গিয়েছে।
পরের দিন পরিষ্কার আবহাওয়ায় আমরা সবাই রওনা হলাম দ্বিতীয় শিবিরের পথে। ক্লাইম্বিং বুট, ক্র্যাম্পন পরে আরোহণ শুরু করলাম। পুরো পথটাই বরফের ওপর দিয়ে। তবে পথ ততটা কঠিন নয়। দড়ি লাগানোর প্রয়োজন হয়নি। আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম দ্বিতীয় শিবিরের (৫৬১৮ মি.) নির্দিষ্ট জায়গায়। কিছুক্ষণ থেকে ফিরে আসলাম প্রথম শিবিরে। মেঘলা থাকায় কোনও শৃঙ্গ দেখতে পেলাম না।

Advertisement
কোয়ারাঙ-২ পিক এক্সপিডিশনের ক্যাম্প-২-এর দিকে খাড়া দেয়ালে ওঠা।

প্রসূনের এটা দ্বিতীয় অভিযান। ও এখান থেকে ফিরে যাবে মূল শিবিরে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম শিবিরে সকালেই হাজির সঙ্গা আর অলক। ওরা এসেছে প্রসূনকে নিয়ে যেতে। সকাল ৯টার সময় আমরা রওনা হলাম দ্বিতীয় শিবিরের দখল নিতে আর প্রসূনরা ফিরে গেল মূল শিবিরে। ১১টার সময় আমরা পৌঁছে গেলাম দ্বিতীয় শিবিরে। কিছুক্ষণ পরে আমাদের কুক লীলা রাজ রাই ছাড়া বাকি ৪ জন শেরপা রওনা হয়ে গেল তৃতীয় শিবিরের পথ তৈরি করতে। আমরা ওদের অনেকক্ষণ ধরে দেখতে পাচ্ছিলাম। তারপর ওরা ঢাকা পড়ে গেল মেঘের আড়ালে। ৩ ঘণ্টা পরে ওরা ফিরে এল। এরপরে বিকাল থেকেই শুরু হল তুষারপাত। সারারাত চলল অবিরাম তুষারপাত। সকালবেলা জায়গাটা আর চেনা যাচ্ছে না। তুষারপাত বন্ধ হবার পর ৯টা নাগাদ শেরপারা আবার রওনা হল তৃতীয় শিবিরে সরঞ্জাম আর রেশন রেখে আসতে। ফিরে এসে ওরা জানাল যে, কোয়ারাঙ-৩ শৃঙ্গ আরোহণ সম্ভব হবে না, কারণ ওই পথে অনেক হিডেন ক্রিভাস। কী করে ভুলি যে, এই হিডেন ক্রিভাসে পড়েই পেম্বা ছিরিং-এর মামা আমাদের অতি প্রিয় পেম্বা ছুটি শেরপা ওর চোখের সামনে হিডেন ক্রিভাসের অতলে হারিয়ে যায় ২০১৮ সালে আমাদের সাসের কাঙরী-৪ শৃঙ্গ আরোহণ করে নামার সময়। তাই পেম্বা ছিরিং-এর ক্রিভাসের কারণে অতি সাবধান হওয়াটা খুবই প্রাসঙ্গিক। আগেই লিখেছি যে, এই কোয়ারাঙ-৩ শৃঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগে অভিযানের সময় ও ক্রিভাসে ঢুকে গিয়েছিল।
১২ জুলাই আমরা সবাই সামিট ক্যাম্পের দখল নেব। তাঁবু গুটিয়ে শুরু করলাম আরোহণ। একটা তাঁবু এখানেই টাঙানো অবস্থায় রেখে গেলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবহাওয়া ভাল থাকলে আমরা কালকেই সামিট করে এখানে নেমে আসব। ১০ জনে অসুবিধা হলেও দুটো তাঁবুতে থেকে যাব। আমরা রোপআপ করে এগোচ্ছি কারণ এই পথে বরফে ঢাকা ক্রিভাস আছে। তাই সাবধানে এগিয়ে চলা। একটি দড়িতে সকলে পরস্পরে বাঁধা। উদ্দেশ্য হল, যদি কেউ ক্রিভাসে ঢুকে যায় তা হলে যাতে অন্যরা তাকে বাঁচাতে পারে। দেড় ঘণ্টা এইভাবে যাবার পরে শুরু করলাম শেরপাদের লাগানো দড়িতে জুমার লাগিয়ে পাথরের দেওয়াল আরোহণ। খুবই সাবধানে এগোচ্ছিলাম যাতে উপর থেকে পাথর গড়িয়ে না পড়ে। মেঘলা আবহাওয়ায় সাড়ে ১২টার সময় পৌঁছে গেলাম শীর্ষ শিবিরে (৫৯২০ মি.)। এখানে পাথরের ওপর ছোট্ট জায়গায় দুটি তাঁবু লাগালাম। চারিদিক মেঘে ঢাকা থাকার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। পেম্বা আর দোর্জে চলে গেল কোয়ারাঙ-২ শৃঙ্গের শীর্ষ পর্যন্ত দড়ি লাগাতে। পেম্বা ছিরিং এর আগে এই শৃঙ্গে আরোহণ করেছে, তাই রাস্তা ওর চেনা। ৫৫০ মি. দড়ি লাগিয়ে ওরা বিকালেই ফিরে এল। আবহাওয়া কিন্তু তখনও ভাল নয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হল তুষারপাত আর তার সাথে হাওয়া।

কোয়ারাঙ-২ পিকে।

১৩ তারিখ সকালেও একই অবস্থা। এবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। আবহাওয়া ভাল না হলে আবারও বিফল হয়ে ফিরে যেতে হবে। ৯টা নাগাদ তেনজিং এসে বলল যে, কাল সকালেও যদি তুষারপাত বন্ধ না হয় তা হলে ফিরে যেতে হবে এখান থেকে। কারণ রেশন কম পড়ে যাবে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। তা হলে কি খালি হাতে ফিরতে হবে! একটা মজার ঘটনা এখানে বলি, তাঁবুতে ৫ জন অনেক কষ্টে শুয়েবসে আছি। বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না অনবরত তুষারপাতের জন্য। হঠাৎ প্রশান্ত বলল যে, ছোটবেলায় এই রকম ঝড়বৃষ্টি হলে ঠাকুমা একটা কাঠের পিঁড়ি উঠোনে ছুড়ে দিয়ে বলত, “বরুণদেব এই পিঁড়িতে বসো, শান্ত হও”। এর পরে ঝড়বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যেত। আমি এইসবে বিশ্বাস করি না। অলসভাবে তাঁবুতে শুয়েবসে আছি। কী মনে হল, কিছুক্ষণ পরে আমি পিঁড়ি তো পাওয়া যাবে না, তাই তাঁবুর গেটের বাইরে পড়ে থাকা একটা ছোট স্লেট পাথর ছুড়ে বরুণদেবকে শান্ত হতে বললাম। তারপর ঘটনাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ১.৩০ মিনিটে হঠাৎ পাসাঙ শেরপা তাঁবুর মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে আমাকে বলল যে, স্যার, তুষারপাত বন্ধ হয়েছে আর হাওয়াও নেই, সামিট করতে হলে এক্ষুনি বের হতে হবে। আমি জানি যে, এখান থেকে সামিটে পৌঁছতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাই বলা মাত্র আমি রাজি হয়ে গেলাম। মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুতই ছিলাম। তাই মাত্র ৪০ মিনিট সময় নিয়ে তৈরি হয়ে রওনা হলাম সামিট করতে। সঙ্গে চলল তেনজিং আর পাসাঙ। আগের দিন ছিরিং আর দোর্জে সামিট পর্যন্ত দড়ি লাগিয়ে এসেছে। পথ অত দুর্গম নয়। তাই ওদের দুজনের আর উপরে যাবার প্রয়োজন নেই। সত্যি কথা বলতে, কোয়ারাঙ-২ শৃঙ্গ আরোহণ করার জন্যে আমাদের দুজন শেরপাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা তো এসেছিলাম গ্যা শৃঙ্গ আরোহণের প্রস্ততি নিয়ে। আমি শৃঙ্গ আরোহণ নিয়ে একদমই ভাবছি না। কারণ আজ আমাদের মাত্র ৩১১ মি. উচ্চতা আরোহণ করতে হবে। বেশি সময় লাগার কথা নয়। তাই এই অবেলায় আরোহণ করতে হবে বলে দ্বিতীয় বার ভাবিনি। মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যে মাত্র ২ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম কোয়ারাঙ-২ শৃঙ্গের শীর্ষে। শীর্ষে পৌঁছানোর আগে সনাতনকে অনেক বকতে হল। ও খুবই ধীরে আরোহণ করছিল। শেষ দিকে এক পা এগিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ছিল। শীর্ষের চারিদিকের কিছু দেখতে পেলাম না। তাই আক্ষেপ থেকে গেল। ছবি তুলে, GPS-এর রিডিং রেকর্ড করে এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে মাত্র ১ ঘণ্টায় ফিরে আসলাম সামিট ক্যাম্পে। খুব দ্রুত ঘটনাটা ঘটে গেল। আমরা ৫ জন সদস্য কোয়ারাঙ-২ শিখর আরোহণ করলাম। সনাতনের এটা প্রথম আরোহণ। ও সবার থেকে বেশি খুশি। অবশ্য তার বিনিময়ে ওকে আমার কাছে আরোহণ কালে অনেক বকা খেতে হয়েছে ধীর গতির জন্য। তাঁবুতে ফিরে মনে পড়ল বরুণদেবকে শান্ত হতে বলার কথা। সকলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম। রাত্রিটা আমরা তৃতীয় শিবিরেই কাটিয়ে দিলাম।

ক্যাম্প ২-এর দিকে এগিয়ে আসা – পিছনে কোয়ারাঙ-২ পিক।

১৪ তারিখে সকালেই মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেই নীচে নামা শুরু করলাম। একটু পরেই দেখি আকাশ পরিষ্কার। আক্ষেপ থেকে গেল। দ্বিতীয় শিবিরের তাঁবু গুটিয়ে ১১টার সময় নেমে এলাম প্রথম শিবিরে। একটু পরেই দেখতে পেলাম সঙ্গা, অলোক আর পঙ্কজ নীচ থেকে উঠে আসছে। ওদের পেয়ে এবার সবাই আনন্দে সামিল হল। ১২টার সময় রওনা হয়ে আমরা সবাই দুপুর ২টোর আগেই নেমে এলাম মূল শিবিরে। আর একপ্রস্থ আনন্দে ভেসে যাওয়া।
আগে থেকে হিসাব করে বলে রাখার জন্যে ১৫ তারিখ বিকালে ৯ জন পোর্টার এসে হাজির। আজ শেরপারা আমাদের জন্য কেক বানিয়েছে। কেকের ওপর সুন্দর করে নির্ভুল ইংরেজিতে ম্যাক-কে সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানানো। আমি নিশ্চিত এটা আমাদের পেম্বা ছুটির উপরের দাদা মিঙমার ছেলে পাসাঙ রিটার লেখা। তা না হলে এত সুন্দর অন্য কেউ লিখতে পারত না। প্রসঙ্গত বলি যে, পাসাঙ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ভাবতে ভাল লাগে যে, শেরপাদের পরের প্রজন্ম উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে। আর কেক নিশ্চিত বানিয়েছে লীলা। আমাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের সময় দুমাস ধরে ও যে কত রকমের খাবার আমাদের বানিয়ে দিত, তা কী করে ভুলি।
১৬ জুলাই সকাল ৮টার সময় মূল শিবির থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় পৌঁছে গেলাম রোড হেডে, মানে প্যাটসিওতে। একটু পরেই দেখি বলা না সত্ত্বেও প্রতাপ সিং মানালি ফেরার একটা টেম্পো ট্রাভেলার পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিকাল ৫টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম মানালি।

চিত্র: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »