Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: ইন্দু

দী প ক  সা হা

গাঢ় অন্ধকারে কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না। কালো মেঘের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা বিদ্যুতের আলোয় পদ্মার ভয়ংকর রূপ ঠিকরে আসছে। শান্ত জল অশান্ত হয়ে উঠেছে। সহস্র ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করতে করতে এগিয়ে আসছে। সাদা ফেনায় ফুলে উঠেছে। রাগে ফুঁসছে। গগনবিদারী তর্জন গর্জন। ‌বারবার নৌকার ওপর আছড়ে পড়ছে। নৌকা টালমাটাল। নাসির প্রাণপণ দাঁড় বাইছে। কিন্তু প্রকৃতির এই রুদ্রমূর্তির পাশে সবকিছু তুচ্ছ। আচমকা নৌকায় জল ঢুকছে। নৌকার তলা ফেটে গেছে। তলিয়ে যাচ্ছে নৌকা। আর নাসির জলের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।

মাথায় নরম স্পর্শে নাসির ধড়মড় করে চৌকির ওপর উঠে বসল। স্ত্রী মল্লিকাও জেগে গিয়েছে, ‘কী গো, এমন করছ কেন? স্বপ্ন দেখছ নাকি?’
দরদর করে নাসির ঘামছে। বুকের কলিজা ঘনঘন ওঠানামা করছে। এক গ্লাস জল মল্লিকা নাসিরের হাতে তুলে দিল। ঢকঢক করে জল খেয়ে কিছুক্ষণ পরে নাসির ধাতস্থ হ‌ল। সে দেখল, পাশে ছেলে-মেয়ে দু’টি অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে উঠোনে রাখা মাছ ধরার বড় জাল আর বৈঠা হাতে বেরিয়ে পড়ল সে।

জোছনা রাতের পদ্মা অপরূপা। পদ্মার এ দিকটায় দিনের বেলায় লোকজনের আনাগোনা। কিন্তু গভীর রাতে একেবারে নিঝুম। এই সময়টা নাসিরের বেশ লাগে। প্রকৃতিকে একান্তে পায়। সে পদ্মার পাড় ধরে তরতরিয়ে নামছে। মাথার উপর চাঁদ দেখে বুঝল, রাত এখনও ঢের বাকি। এখনও আকাশের চাঁদ, তারারাই নাসিরদের জানান দেয় রাতের মুহূর্তগুলো।

নাসির সাদা বালির ওপর বসে পড়ল। এখনও মলয়, সহিদুল আসেনি। ওরা নাসিরের মাছ ধরার সঙ্গী। কাছেই তার মাছ ধরার নৌকো উপুড় হয়ে শুয়ে। পাটাতনের গায়ে লেখা ‘ইন্দু’ নামটা চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে। বড় আদর করে এই নাম রাখা। তার প্রথম ভাললাগা, ভালবাসাকে মনে রেখেই। নৌকোটিকে ঢেউয়ের ছন্দে চালনা করতে করতে নাসির খুঁজে ফেরে তার ইন্দুকে। তারপরে যখন খোল জুড়ে রুপোলি মাছে ভরে যায় তখন নাসির নিশ্চিন্তে গা বিছিয়ে দেয় ইন্দুর কোলে।

অন্যদিন এই সময় বালির ওপরেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। আজ ঘুম আসছে না। দুঃস্বপ্নটা বারবার ভিড় করছে মনে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল নাসির বালির পিঠে শুয়ে আছে। চাঁদটা সবে পদ্মায় স্নান সেরে আকাশে উঠেছে। তার রূপের আলো বিস্তীর্ণ পদ্মার পাড় ছুঁয়ে, পদ্মায় ঝরে পড়ছে অবিরত। চাঁদের আলোয় মলয় আর সহিদুলের অস্পষ্ট মুখ দেখে নাসির উঠে পড়ে। এ বার ভাসাবে তরী। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে যায়। রাতভর জেগে মাছ ধরতে হয়। তারপরে বাছাই করা। আড়তদারের সঙ্গে দর কষাকষি। অনেক ধকল।

সময়ের ভেলায় নাসির ফিরে যাচ্ছে সেই প্রথম প্রেমে। ইন্দু দাঁড়িয়ে আছে নৌকার পাটাতনে। মেয়েটির রোজ বায়না, বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে যাবে পদ্মায়। সময় সুযোগে স্টোভে চা, ভাত ফুটিয়ে পদ্মায় বাবার মুখে তুলে দেবে। মা-মরা মেয়েটি বাবাকে কাছছাড়া করতে চায় না। বাবা পরান গাইন মেয়ে-অন্ত প্রাণ। তাই মেয়ের আবদার মেনে নেয়। নাসিরও কিশোরী ইন্দুর মিষ্টি কথা, চপলতা আর সরলতায় হাবুডুবু খায়। মনে মনে ভালবাসে।

নাসির তখন কৈশোর পেরোনো সদ্য যুবক। বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরার খুঁটিনাটি কৌশল রপ্ত করতে। পরান আর নাসিরের বাবা দুই বন্ধু একসঙ্গে মাছ ধরতে যায় পদ্মায়। কিন্তু সেদিন নাসিরের বাবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসায় পরান একাই পদ্মায় নাও ভাসিয়েছিল মেয়েকে সঙ্গে করে। আর ফেরেনি। মাঝরাতে হঠাৎ তুমুল ঝড়ে নৌকা-সহ বাপ-বেটি পদ্মায় তলিয়ে যায়।

তারপরে পদ্মা দিয়ে ঢের জল গড়িয়েছে। নাসিরের লুকোনো কান্নার নোনাজল মিশে গেছে পদ্মার ঢেউয়ে। বউ ও দু’টি ছেলে নিয়ে সে এখন সংসারী। পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে জীবনতরীর হাল বাইতে সে এখন ব্যস্ত। পদ্মার বুকেই তার জীবন সংগ্রাম।

কোনও এক গাংচিলের তীক্ষ্ণ চিৎকারে নাসিরের ঘোর কাটে। চোখ মেলে বালির ওপরে উঠে বসল সে। মলয়, সহিদুল এখনও আসেনি। আজ বোধহয় আসবেও না আর। জেলে নৌকার ছইয়ের ভেতর লণ্ঠনের আলোগুলো জোনাকির মতো টিমটিম করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ পূর্ণিমা। ভরা কোটাল। নাসির এগিয়ে গেল নৌকার দিকে। বিড়বিড় করল, ‘চল ইন্দু, মাঝদরিয়ায়।’

উঠোনে হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছে নাসির। আকাশের অবস্থা ভাল নয়। দুপুরেই রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। কে যেন কালো রং গুলে দিয়েছে খোলা আকাশে। সকাল থেকেই কিছু সময় অন্তর ঘোষণা হচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই ঘণ্টায় দুশো কিমি বেগে বয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়। আমফান। একটা চিন্তার মেঘ ঘোরাফেরা করছে নাসিরের মুখেও। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে স্কুল বিল্ডিংয়ে সকলের থাকার ব্যবস্থা করেছে। পরিবারকে নিয়ে আজ রাতটা ওখানেই কাটাবে নাসির। কিন্তু নাসিরের ভাবনা তার নৌকাটা নিয়ে। আজ তার যা কিছু, সব ওই নৌকার দৌলতে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, সংসারের খরচ সব কিছুই নৌকাটাই যোগাড় করে।

নাসির উঠে পড়ল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পদ্মার দিকে এগিয়ে গেল। মল্লিকা সতর্ক করল, ‘আজ যাওনি। বিপদ আসতেছে।’

নাসির ভ্রূক্ষেপ করে না। এগিয়ে যায় নৌকার দিকে। নৌকাটা বালির চড়ায় পড়ে আছে অভিমানী প্রেমিকার মতো। আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো মেঘ জড়ো হচ্ছে। পদ্মার ঘোলাটে ধূসর জল ফুলে ফুলে উঠে ক্রুদ্ধ নাগিনীর মতো এগিয়ে এসে বিষাক্ত ছোবল মারছে তটে। আর সাদা ফেনায় উগরে দিচ্ছে তার বিষ। দু’-একটা বক দমকা হাওয়ায় বেসামাল হয়ে উড়ে যাচ্ছে বাসায়। নাসির হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে নৌকার পাশে। আস্তে আস্তে পরম মমতায় নৌকার গায়ে হাত বোলায়। উঠে গিয়ে নোঙরটা মোটা গাছের সঙ্গে ভাল করে বেঁধে দেয়। আরও দু’-একটা গাছের সঙ্গে বাঁধা কাছিগুলোর বাঁধন পরীক্ষা করতে করতে নাসির মনে মনে ভাবে, পৃথিবীতে প্রেমের বাঁধনই সবচেয়ে শক্ত বাঁধন। সেই বাঁধনেই যখন ইন্দুকে আগলে রাখতে পারল না, এই কাছি আর কী করবে! একটা করুণ হাসি ঠোঁটের পাশে বেরিয়ে এসে চোখের জলের সঙ্গে মিশে গেল।

নাসির বহুবার ঝড়ের তাণ্ডবের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু আজ রাতের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা। গত বছর ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার মন পড়ে আছে নৌকাটির দিকে। সারারাত কাটল উদ্বেগ নিয়ে। ঝড়ের তাণ্ডবলীলা আর মুষলধারে বৃষ্টির উচ্চস্বরে মানুষদের হাহাকার চাপা পড়ে যাচ্ছে। মল্লিকা ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে স্কুলের হলঘরে বসে আছে। নাসির অধৈর্য হয়ে উঠছে। কতক্ষণে সকাল হবে…

শেষ রাতে ঝড়ের বেগ কমে আসে। ভোর হয়েছে অনেকক্ষণ। কিন্তু সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কাল রাতের রেশ টেনে আজও প্রকৃতি ভারাক্রান্ত। ঝড় থেমে গেছে। কিন্তু বৃষ্টির বিরাম নেই। নাসির বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই ছুটছে নৌকার কাছে। দৌড়ে গেল নৌকা বাঁধার জায়গায়। নাহ্, কোনও চিহ্ন নেই তার। নোঙর লাগানো গাছটা ভেঙে পড়েছে পদ্মার গভীরে। কাছির ছেঁড়া অংশ ঝুলছে গাছের গায়ে। পদ্মাতটে ভাঙা কাঠ, ভাঙা ঘরের চাল, ভাঙা নৌকার টুকরোর ভিড়ে ইন্দুকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে নাসির। পায় না।

নাসির হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে পদ্মায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর্তনাদ করে বলে, ‘আর কতবার ইন্দুকে লইবি রাক্ষুসি।’ ঢেউয়ের ঝাপটায় একটা ভাঙা তক্তা নাসিরের বুকের কাছে ফিরে আসে। নাসির কোনও রকমে জাপটে ধরে দেখে, তক্তার গায়ে জ্বলজ্বল করছে লাল রঙে লেখা— ইন্দু।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
3 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »