Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ

অভিসার

জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল
নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে
শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল
লজ্জা আমার আবির হয়ে ছড়িয়ে আছে জলে

লজ্জাহীনা বলুক লোকে, বলুক কটু কথা
মিথ্যে মিথ্যি জল আনতে যাওয়ার নামে ছল
উত্তেজনায় শিউরে উঠি লজ্জাবতী লতা
গোপন অভিসারের জ্বালায় জ্বলছি অবিরল

গোধূলির এই লগ্নে আমি বিবশ ও বিমনা
প্রত্যেক দিন হই রে সখী, বিষাদে বিকল
জল আনতে যাওয়ার নামে তাই তো প্রতারণা
জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল

আকাশ ডোবে অন্ধকারে, তারারা উজ্জ্বল
এখন সময় অভিসারের, শান্ত প্রেমিকেরা
ভিড় করেছে আমায় ঘিরে, বেঁধেছে সব দল
উচ্ছলতার শেষে অবসন্ন ঘরে ফেরা

জানতে চাস কি সখী আমার প্রণয়ীদের নাম?
চাঁদ তারা আর নদীর তীরে নাম না-জানা ফুল
নরম বালির আদর স্নেহে জড়ানো বিশ্রাম
পাখির ডাকে প্রেমের চিহ্ন চিনতে না হয় ভুল

ফিরলে ঘরে আবার তো সেই রোজের ঘানি টানা
গোপন প্রেমের স্বাদ ছাড়া কি বাঁচতে পারি বল!
তুই ছাড়া আর সবার কাছে থাক এরা অজানা
জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল।

*

পাপ করেছি

পাপ করেছি জানিস সখী পাপ করেছি পাপ
গভীর রাতের অতিথিরা ঘাঁটছে এসে আমার শরীর
বাধা যে দিই বললে হবে সত্য অপলাপ
তলিয়ে যাচ্ছি গহীন হ্রদে, জল এখানে অনেক গভীর

আসছে যে কেউ জানতে পারি কলিংবেলের আর্তনাদে
লোলুপ চোখে ফসফরাসের দীপ্তি জ্বেলে ডাকছে তারা
ডুব দিতে চায় দেহের হ্রদে, কোমল মধুর বিছানাতে
আমার শরীর আহ্বানে দেয় অভিনয়ের নকল সাড়া

সব প্রেমেরই বিয়ে তো নয় বেলাশেষের পরিণতি
শরীর তবু শরীর খোঁজে, ঘি পেতে চায় আগুন আভা
ভালোবেসে শরীর দিলে কীইবা এমন ভীষণ ক্ষতি
শরীর শুচি না অশুচি এসব নিয়ে মিথ্যে ভাবা

শুচিতা তো লুকিয়ে আছে মনের কোনো গহিন কোণে
পাপ করেছি বলে কেন বিলাপ করে মরছি তবে
আমার এটা অন্য ব্যাপার, শরীর খুলি প্রয়োজনে
আস্তে আস্তে বলছি সবই, ধৈর্য ধরে শুনতে হবে

গরিব হয়ে বাঁচার থেকে মুক্তি চাওয়া অন্যায় নয়
বেকার প্রেমিক, মাতাল স্বামীর সঙ্গে করি প্রতারণা
হোক না শরীর স্বেচ্ছাচারী, ঘুচিয়ে ফেলি মন থেকে ভয়
একটু একটু বিষাদ থাকুক, মেঘলা দিনে হই বিমনা

উঁচিয়ে আছে সঙিন হয়ে সমুন্নত শঙ্খগিরি
স্তম্ভযুগল, পরিখা আর অরণ্যরা সেজেই থাকে
অন্যভাবে দেখলে শিখরচূড়ায় ওঠার এরাই সিঁড়ি
ঘষে মেজে যত্নে রাখি, ভুলেই থাকি সব ব্যথাকে

গরম সমাজ কন্যা বলে আজ আমাকে সবাই চেনে
এই তো আমি চেয়েছিলাম, চাইনি হতে নিষ্ঠাবতী
বিজ্ঞাপনে মুখ দেখালে সব ক্রেতারাই পণ্য কেনে
মন্থরতা ঝেড়ে ফেলে জীবনকে দিই জেটের গতি

যশ খ্যাতি আর অর্থ সবই আজ এই দুই হাতের মুঠোয়
আমার দেহে ডুবল যারা সবাই সম্মানিত পুরুষ
আমিই একা কলঙ্কিনী, কাদা আমার জামায় জুতোয়
টাকার যজ্ঞে শুদ্ধ হব, বল না কাকে দিই কত ঘুষ!

*

আমি যাই

জঙ্গলে চিৎকার করে ডাকে ধূধূ হাওয়া
আমি যাই
ঝরা ফুলে ছেয়ে আছে স্বপ্নের বাগান
আমি যাই
নিষিদ্ধ নারীর গালে কোমল শিশির
আমি যাই
জ্যোৎস্নার পালকে মোড়া আদুরি পৃথিবী
আমি যাই
আকাশে তারারা যায় শবানুগমনে
আমি যাই
উদাস সঙ্গম বাকি, তবু যেতে হবে
আমি যাই
ফেরির জাহাজে চড়ে গোধূলি এসেছে
আমি যাই
আকাশের নিচে খেলা ভেঙেছে তুফান
আমি যাই

*

মাধুকরী

আকাশে জ্বলে দারুণ রোদ, বাতাসে খরতাপ
ভিখারী কাঁটা ছড়ানো পথে, পুরুষ বা সে নারী
শরীরে তার দারিদ্র্যের একই মলিন ছাপ
হাতছানিতে পণ্য ডাকে দোকানে মনোহারী

রাজপ্রাসাদে সুসজ্জিত রাজা ও প্রজা দল
মিনতি ঢেলে বলেন রাজা, ‘আমাকে দিন ভোট
নির্বাচনে’, প্রজারা জানে রাজার যত ছল
সকলে বলে, ‘ডিএ বাড়ান’, সকলে একজোট।

চিত্র: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
2 months ago

এই গুচ্ছে কবির নিমগ্ন রোমান্টিকতা আমাদের স্পর্শ করেছে যেই, তখনি শেষ লেখাটিতে তিনি বুঝিয়ে দিলেন দিনাতিপাতের চাওয়া-পাওয়াও তাকে স্পর্শ করে। এই অকস্মাৎ বিনির্মাণ এক আশ্চর্য অনুভুতির মধ্যে পাঠককে দাঁড় করায়। কবি কখনো তাঁর কবিতায় যৌবনের উজ্জ্বল আলোকিত সময়টিকে দূরে রাখেন না; ছুঁয়ে আছেন আছেন বলেই গত শতকের সাতের দশকের উজ্জ্বলতা ঝলসে ওঠে আজও তাঁর পংক্তিতে। কোথায় যেন কে আবার নতুন করে বলে ওঠে, “তোমার সঙ্গে পাপ করেছি সেই তো আমার পুণ্য”

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »