Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ইরানের হিজাব বিতর্ক : অন্যচোখে

প্রথমত হিজাব বা অন্য কোনও ধর্মীয় চিহ্নর সঙ্গে নারী স্বাধীনতা বা প্রগতিশীলতার কী সম্পর্ক তা আমি সত্যই বুঝি না। আমার মতে, প্রগতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক শুধুমাত্র মননের। অন্য কিছুর নয়। আমি আমার মা-কে দেখেছি। যিনি শাঁখা-সিঁদুরের মত হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন পরিধান করলেও ছিলেন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির সমর্থক। মনে করতেন পুজোয় ব্রাহ্মণ ডাকা নিষ্প্রয়োজন। বিশেষত যে ব্রাহ্মণ শুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণ করতে পারেন না। মায়ের মতে, তাদের প্রণামী দেওয়া মিছিমিছি অর্থদণ্ড মাত্র। অনেক সময়েই বলতে শুনেছি, ‘ওইসব বিটকেল বামনাগুলোকে না ডেকে আমাকে দিয়ে পুজো করাও। আমিই ভাল মন্ত্র পড়তে পারব।’ এমন একজনকে কী বলব? প্রগতিশীল না প্রগতিবিরোধী? কর্মস্থলেও দেখেছি, অনেক শিখ, মুসলমান বা খ্রিস্টান পুরুষ ধর্মীয় চিহ্ন ব্যবহার করলেও চিন্তা-চেতনায় যথেষ্ট আধুনিক। আর হিন্দু সধবা নারীদের প্রায় সবাই শাঁখা-সিঁদুর পরেন। শহরে না হোক, গ্রামের প্রায় সকল হিন্দু মহিলাই ঘোমটা টানেন। উল্লেখ্য, আমার মা আমার বা আমার ভাইয়ের সামনে ঘোমটা না টানলেও স্বামী, ভাসুর, দেবর, ননদ এমনকি নিজের বাবার সামনেও ঘোমটা টানতেন।

সুতরাং, প্রগতিশীলতা বা আধুনিকতার সঙ্গে ধর্মীয় চিহ্ন বহনের যে কোনওরকম সম্পর্ক নেই, তা সকলেই স্বীকার করবেন। তাই হিজাব নিয়ে বর্তমানে যে বিতর্ক উঠেছে তা পুরোপুরি অনর্থক। আমি সেই অনর্থক বিতর্কে যাব না। বরং উল্লেখ করব এমন একটি বিষয়ের যা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায় অনুচ্চারিত।

সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যে খবরটি প্রাধান্য পেয়ে আসছে তা হল, হিজাব পরিধান না করায় ইরানে ২২ বছরের যুবতী মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু। ১৯৭৯ সালের অর্থাৎ, ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান চালু, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মতে অতিশয় নিন্দনীয়। একমাত্র ইরানের মত এক ‘বর্বর’ দেশেই চালু থাকতে পারে এমন ‘বর্বর’ প্রথা।

কিন্তু সত্যিই কি তাই? না। ইরান ছাড়াও বাধ্যতামূলক হিজাব চালু রয়েছে ইরাক, সৌদি আরব, ইয়েমেন আর ইন্দোনেশিয়ায়। তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানের অবস্থাটা আরও ভয়াবহ। সেখানে বাধ্যতামূলক হিজাব চালু না-থাকলেও, বেশ কিছু জায়গায় মাথা ঢাকা আবশ্যক। উন্মুক্ত জায়গায় মুখ খুলে রেখে ঘোরা চলবে না। মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই ২০২২ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট মোতাবেক ১৪৬টি দেশের মধ্যে ১৪৬তম স্থানটি আফগানিস্তানের দখলে। কিন্তু এইসব দেশে মেয়েদের অধিকার নিয়ে কোনও হইচই দেখেছেন কি? তালিবান জমানায় আফগান মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কিছু প্রতিবেদন হয়তো দেখেছেন। কিন্তু তা নিঃসন্দেহে এই হিজাব বিতর্কের মত আলোড়ন যে ফেলেনি তা বলাই বাহুল্য।

এখানেই অন্য রকম গন্ধ টের পাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, আমেরিকা তথা পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সাংঘর্ষিক সম্পর্কের বিষফল এটি। এই সম্পর্ক সেই ১৯৭৯ সাল থেকে বিদ্যমান।

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন ইরানের প্রধান রেজা শাহ পহলভীকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন রহুল্লা খোমেনি। এই পরিবর্তন আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি মেনে নিতে পারেনি। কারণটা সহজবোধ্য। ১৯২১ সালে এই রেজা শাহ পহলভীর বাবা রেজা শাহকে ক্ষমতায় বসায় তারা। ইরানে শুরু হয় পহলভী আমল। এই আমলে বেশ কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পহলভীদের স্বৈরাচার মেনে নিতে পারেননি ইরানের সাধারণ মানুষ থেকে ধর্মীয় নেতা, ভূস্বামী, ব্যবসাদার ও বিদ্বজ্জনেরা। তারা প্রথমে জাতীয়তাবাদী নেতা মহম্মদ মোসাদ্দেঘ ও পরে রহুল্লা খোমেনির নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে রেজা শাহকে উৎখাত করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন মোসাদ্দেঘ। তিনি তৈলকূপগুলির জাতীয়করণ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ ও মার্কিনি পুঁজিপতিরা। ১৯৫৩ সালে সিআইএ-র সহযোগিতায় মোসাদ্দেঘকে সরিয়ে পহলভী শাসন পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়।

কিন্তু ১৯৭৯-র পর আর পহলভী আমল ফিরিয়ে আনা যায়নি। যদিও আমেরিকার তরফ থেকে চেষ্টার কোনওরকম ত্রুটি রাখা হয়নি। এই ২০১৮ সালেও রেজা শাহ পহলভীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সাত কেন আঠাশ মণ তেল পুড়িয়েও রাধাকে নাচানো যায়নি। মার্কিন বিরোধিতায় ইরানের মানুষ এককাট্টা। এতে খোঁচা খাওয়া বাঘের মত আরও তেড়েফুঁড়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এখন তারা ইরানের ভেতরেই অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনস্থ করেছে। চলমান হিজাব বিতর্ককে তারই অঙ্গ বলে মনে করছেন এই অংশটি।

[মতামত লেখকের নিজস্ব]

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
kaamal
kaamal
2 years ago

দুঃখিত আপনার পন্ডিতি বিশ্লেষণ সম্পূর্ণটা মানতে পারছিনা।সরল সমীকরনা ।পারস্য দেশে কোন সামাজিক আন্দোলন হলেই ব্যাখ্যা আসবে আপনার মত করে বিশ্লেষন। এটা ঘা খাওয়া সাম্রাজ্যবাদের প্রতিশোধের ছোবল দেয়ার অপচেষ্টা। সত্য। কোন ভুল নেই ।কিন্তু কোন ঘটনা তা সে ক্ষুদ্র,মাঝারী,বড় যাই হোক না কেন দ্বান্দ্বিক ভাবেন না দেখলে শ্রেনী সংগ্রামের পর্বগুলো,পর্যায়গুলো নিবিড়ভাবে দেখায় ভুল হবেই।

Kallol Guha
2 years ago

আমার নাম কল্লোল গুহ। আমি একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি http://www.sjsm.org এখানে আমেরিকা এবং কানাডা থেকে ছাত্র ছাত্রীরা পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে নিজ দেশে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। বিগত ২২ বৎসরে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ (আট শত) স্নাতক আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসকের পেশায় সাফল্যের সাথে নিযুক্ত আছে । শিকাগো শহরের সন্নিকটে আমাদের সদর দপ্তর। Now i would like to switch over to English since- by design- it is made so much easier to write in this language. The site VALO VASHA- has been referred to me by Pradip Baksi who responded to one of my posting in the forum run by SHRI SAMAR BAGCHI. Now let me come to the point: I am committed to promote Independent Media Channel(s) to counter mis/dis information of so called “main stream media”. My special interest is to promote ideas of Scientist Satyen Bose, Rabindra Nath Thakur, Scientist JC. Bose. Novelist Sarat Chandra who passionately advocated use of mother tongue as the basis for education at all level. In addition to that- can we initiate a discussion on- Bengali used to be 8th largest language only a decade or two ago today it is fourth largest language in terms of the number of people who speak this language. Yet it is considered an “Endangered” language ! If VALOVASHA would like to consider promoting such topics through this platform along with a plan of increasing its viewers and subscribers, we are willing to consider financial support for such a project. Feel free to get in touch with me through kg@l.sjsm.org
mai

Last edited 2 years ago by Kallol Guha

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »