কাশফুল শরতের অন্যতম অনুষঙ্গ
শরৎকালে নদীর তীরে কাশফুল ফোটে, আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা, সাদা বকের সারি দেখা যায় আকাশে। প্রকৃতি ঘোষণা করে মা দুর্গার আগমনী-বার্তা। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ যারা দেখেছেন তাঁরা দেখে থাকবেন ধোঁয়া উড়িয়ে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে। অপু আর দুর্গা দৌড়ে চলেছে কাশবনের মধ্য দিয়ে। বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘের সঙ্গে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়।
আমরা রবি ঠাকুরের লেখায় পড়েছি– ‘চিকচিক করে বালি কোথা নেই কাদা/ দুইধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।’
কাশফুল একধরনের ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum, এটি Poaceae পরিবারের উদ্ভিদ। কাশফুল ইংরেজিতে wild sugarcane নামে পরিচিত। এরা উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নদীর তীরে ফুলফোটা শ্বেতশুভ্র কাশবন দেখতে খুবই সুন্দর। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনও উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। এর কারণ হল নদীর তীরে পলিমাটির আস্তরণ থাকে এবং এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে। ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এর ভূস্থিত রাইজোম তন্ত্র মাটির ক্ষয়রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শরৎ ঋতুতে সাদা ধবধবে কাশফুল ফোটে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। কাশফুল পালকের মতো নরম এবং রং ধবধবে সাদা। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ খুবই ধারালো।
কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন, পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূল-সহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।
সাহিত্যে কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক কাহিনি অবলম্বন করে ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন। কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। শুভ্রতা অর্থে ভয় দূর করে শান্তির বার্তা বয়ে আনে। শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়।
কাশগাছ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, মাদুর তৈরি করে থাকেন। ঘরের চাল, বাড়ির সীমানার বেড়া ও কৃষকের মাথাল তৈরিতেও কাশগাছ ব্যবহার করা হয়।
কাশফুলের আদি নিবাস রোমানিয়া। তবে প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কাশফুল ছিল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, পুরাণে কুশের স্থান খুব উঁচুতে। গ্রামের বাড়ি বা পুকুরপাড়ে ইচ্ছা করলে কাশফুল লাগানো যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে কিছুটা ঠান্ডা ও বালু মিশ্রিত স্থান বেছে নিতে হবে।
চিত্র: বিজন সাহা







