Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

জারজ তুমি প্রতিমা

আমার এই মৃগয়াবেশ, এরূপ রণসজ্জা
কেন তা তুমি জানো না অলি, অথচ ধীরেসুস্থে
মরাল গ্রীবা আনত করো, যদি বা তাতে খুঁজতে
কিছুটা গাঢ় শলাকাছাপ, ধোঁয়ানো বনভূমিতে
নিহত কারো ময়াল দেহ, ভয়াল ক্রূর শয্যা
নির্লিপ্ত জড়ানো পড়ে, পুরোনো কালে স্বর্গে
যেভাবে কোনো অশ্বমেধে ধারালো ধাতু খড়্গে
দেহচ্যুত দীপ্তি স্রোত উজান বয়ে মিশত
ততটা শুভাকাঙ্ক্ষী তুমি, নিভনো শিখা ধুনিতে
ঝরনা হয়ে সারাটি বেলা কেবল পরিশিষ্ট
তামাটে খর রৌদ্রদাহে, রশ্মিতেজে দহনে
শিকারী মুখে বিধুরছায়া, মোহিনী এই নগরী
নিবিড় করে বিছোনো জালে, মৃগয়া তার গহনে
ঝলকে বাজে বেদনা ছুঁয়ে, বিশাল তার গতি, মা
নিমেষে বাঁধে শিশুকে এক ধূসর শৃঙ্খলিত
মমতা প্রীতি মৃগয়া স্নেহে, যাতে সে যাবে স্খলিত
চরণে, ভীরু শিথিল ক্ষেপে, নম্র এক জোছনা
ছড়ালে অলি মৃগয়াকালে, শিকারী তার ধনুকে
দেখেছে শুধু কুয়াশা মিহি, না করে অনুশোচনা
তোমাকে কেন আঘাতে ঋজু, জারজ তুমি প্রতিমা!

*

সাবধান তো করোনি তাকে

দিদিমা বুড়ি পানের রসে রাঙিয়ে নিয়ে ঠোঁট
রোজ সন্ধেয় সেই যে কত বলতে রূপকথা
দত্যিদানো রাজপুত্র সেসব কথকতা
কোথায় কবে ফুরিয়ে গেছে, গায়ে ওভারকোট
চাপিয়ে রাজার পুত্তুর তো ভর দুপ্পুরবেলা
ভূতের ঢেলা খেয়ে শিবের মত ত্রিনয়নে
ভস্মটুকু ছড়িয়ে নিল, বহ্নিটুকু জানো
বরফচাপা, রাজকন্যা ঘুমের ঘোরে ঢুলে
স্বপ্ন দেখে কবে যে সেই গোধূলিটুকু ম্লান
আসবে এই হিম পেরিয়ে, তার তো সন্ধানও
ছিল না জানা লক্ষ্মীছাড়ির, শুধু শুধুই চুলে
গুঁজলো কত ফুলের গোছা, মুখ্যু বোকা মেয়ে
জানত না তো ওদিকে কেউ প্রদীপ ঘষে ঘষে
শূন্যে তুলে জ্বরের ঘোরে মিথ্যে কী সব বকে
একরাজ্যি শাপশাপান্তে ধুঁয়োর থেকে কত
শতশত মূর্তি গড়ে বাজের মত স্বরে
বলল ‘এবার ছড়িয়ে পড়ো, ছড়াও অবিরত
সব দুয়ারে, সব আঙিনায়, সবার ঘরে ঘরে’
কোথার থেকে হতচ্ছাড়া আপদগুলো যত
খুলছে খিল গারদঘরের, রাজকন্যে নেয়ে
ধুয়ে উঠে চুল ছড়িয়ে টেলিফোনের পরে
হেলান দিয়ে শুয়ে বসে ঘুমিয়ে শেষে কাদা
সাবধান তো করোনি তাকে, তুমি একটা যা-তা।

*

সে নৌকো আজ সাতনরী ডিঙা

‘তীব্র গতিতে নীলাঞ্জনার শাড়ির আঁচলে মেঘ’
একটি লাইন লিখেছি মাত্র, হঠাৎ গর্জে ওঠো,
অলীক ওসব রূপকথা ছাড়ো, অসহ্য গতিবেগ
স্পিডোমিটারের কাঁটা মাপে শুধু, ঘরের দুয়ারে ছোট
শিশির বিন্দু কেঁপেছে বাতাসে, যেই নিতে যাব চোখে
অমনি বজ্রপাতের শব্দে কাঁপিয়ে সারাটি ঘর
বেজে ওঠে কারো গম্ভীর স্বর, কী বলবে বলো লোকে
শ্মশানে নিষেধ জলের প্রবেশ, রূপকথাগুলো জ্বর
দগ্ধ শরীরে উঁকিঝুঁকি দেয়, হারানো ছোট্ট নীল
পাখিটা এভাবে আসবে যে ফিরে কখনো ভাবিনি আগে,

কোথা দিয়ে এল লোহার দুর্গে, কে যে খুলে দিল খিল
বুঝতে পারি না, বিপথে ভুলিয়ে ঝুটঝামেলায় পাকে
চক্রে বন্দি যদি করে দেয়, রূপকথাগুলো যত
মিথ্যেয় ভরা আমি তো জেনেছি, (বিজ্ঞানও তাই বলে)
জলার আলেয়া ফালতু গল্প, তবু কেন অবিরত
হিম বৃষ্টিতে পপলার গাছে রাজকন্যার শ্বেত
মুখের আদল, রোদ্দুরে মোড়া হিমের নগরী ছলে
মাথায় পরেছে রশ্মিমুকুট, কিশোরী কৌতূহলে
নিষ্পাপ চোখে ভাসাভাসা চায়, দত্যিদানব প্রেত
শিশুর খেলনা নৌকোর কাছে নত মস্তক রাখে

সে নৌকো আজ সাতনরী ডিঙা, অনুকূল বাতাসের
স্পর্শে মাতাল, সুন্দরী রাজকুমারীও এই ফাঁকে
জাহাজে উঠেই, নীলাঞ্জনাটি, রূপকথাতে কি ছেদ
পড়েছে কখনো, খিড়কির পথে ঘরে ঢুকে আসে ফের।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
1 year ago

আহা! কী অসাধারণ তিনটি কবিতা উপহার পেলাম। ধন্যবাদ ভালভাষা, কবিকেও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। মনের গোপনে কবি তাঁর কবিতার জন্য এমন অনুকরণীয় ভাষাভঙ্গী ও ছন্দের চলন বাঁচিয়ে রেখেছেন; বর্ষীয়ান এই কবি তাই আজও এমন সতেজ সুন্দর সাবলীল

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »