Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

অনুপম ঘোষালের কবিতাগুচ্ছ

জীবনের ডায়েরি

কেন যে মিথ্যা কথা বলেছ ইন্দ্রাণী
কেন এ শুকনো ঘাসে ফুটিয়েছ ফুল?
মৌসুমী বায়ু সে তো যাওয়া আসা করে,
কিছু ফুল ফোটে, কিছু কুঁড়িতেই ঝরে
বাতাসের দোষ নেই, সে তো বড় ভাল
বসন্তের হাত ধরে তাই সে হারাল—

কেন তুমি ইন্দ্রাণী স্বপ্ন দেখাও?
কবিকে কবর থেকে উঠিয়ে লেখাও!
সেই মেয়ে যার মুখে প্রথম পুরুষ—
ইস্কুলে যেতে যেতে কত কথা বলে,
দিদি তো তোমার প্রিয়, তাই বুঝি তুমি
কবিকে একলা পেয়ে সবই যে উগরালে!

কবিরও বুকের মাঝে চোরাস্রোত ছিল—
সেই স্রোতে দিদিমণি স্নান সেরে নিল!
কবি যে মুগ্ধ! নদী পুনরায় বয়,
মাছরাঙা ডুব দেয় নদীর তলায়—
মৌসুমী বায়ু পেয়ে দোলে কাশফুল—
বায়ু নাকি নদী— কে যে করেছিল ভুল!

বাতাসের দোষ নেই সে তো বড় ভাল—
প্রকৃতির নিয়মেই নদীকে ফেরাল।

***

শুধুই তুমি

অভিমানী নদী হয়ে তুমি বয়ে গেলে
শ্মশান হয়ে উঠি তোমার এ পাড়ে
যত কাঁদো, তত পড়ে শত শত লাশ
ডোম হয়ে স্নান সারি, তোমার ওই জলে।

মন দেওয়া মন নেওয়া ভীষণ কঠিন
প্রেম যদি মোহ হয়, ছেড়ে চলে যাবে
বলেছে দোয়েল পাখি আমার কানে
বুঁদ হয়ে থাকি আমি তোমার গানে

তুমি যবে হেসে ওঠো, রাধাচূড়া হাসে
কৃষ্ণচূড়া যে দেখি, বড় ভালবাসে
কখন কৃষ্ণ হই সময় জানে!
ভক্তের ঢল দেখি সমানে নামে।

জীবনটা অঙ্ক বুঝিনি তখন
আফসোস করে আর হবে কী এখন
খাদ থেকে পড়ে যাই, ধরে ফেলো তুমি—

তোমার উপমা দেখি, শুধুই তুমি

***

দর্শন

সেদিন সূর্য যখন পাটে যেতে বসেছে
সিমলিপালের জঙ্গলের রাস্তায়
‘নো এন্ট্রি জোন’ ক্রস করে হাঁটার সময়—
শাল গাছের মগডাল থেকে সেগুনের মগডালে ত্রিশ ফুট লাফ দিতে দিতে উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি বলেছিল,—
জীবনটা অঙ্ক হতে পারে অবিনাশ, কিন্তু জঙ্গলটা শুধুই দর্শন!
‘যেমন খুশি ভাবতে পারো
দরাজ গলায় গাইতে পারো
ভালবাসাকে ডাকতে পারো
প্রাণের মায়া ছাড়তে পারো!’

রাত্রি নামার একটু পরে
জোরান্ডার বনবাংলোয় যাওয়ার পথে, মাথা ভর্তি তারা আর জোনাকির মিটিমিটি আলোয় আমাকে সুদূর কলকাতা থেকে সুনন্দা, গোলাম আলীর সেই বিখ্যাত গজল
‘চুপকে চুপকে রাত দিন আঁশু বাহানা…’
মনে করানোর পর, বরাইপানির ঝর্নার জলে আমার কয়েক ফোঁটা চোখের জল মিশে যাওয়ার পর বুঝেছি; কাঠবেড়ালিটা হককথা বুঝিয়ে গেছে গোধূলিবেলায়।

সত্যি অবিনাশ, অঙ্কতে ভিত কাঁচা থাকলে, জীবন জাহান্নামে যেতে পারে! তবে—
দর্শনে যদি নিদেনপক্ষে চল্লিশ শতাংশ নম্বরও পাওয়া যায়, তাহলে স্বর্গের অনেক কাছাকাছি পৌঁছতে পারো তুমি!

***

জন্মান্তরের কবিতা

গভীর রাতে সারা শহর ঘুমিয়ে পড়লে, রাতের আকাশে পেঁচারা গল্প বলে।
ছাদে একাকী সেই গল্প শুনি, গ্রাম থেকে মেট্রো সিটি হওয়ার গল্প!
পেঁচারা তখনও ছিল, এখনও আছে, শুধু রাতের বেলায় এলাকা বদলায়।

আকাশে একঝাঁক বক বলে,
জেগে থাকো কবি, কবিতার খোরাক পাবে!

চুপ করে চোখ বুঝি!
ঝাপসা চোখ খুলতেই দেখি
নদী থেকে কেশবতি কন্যা
কলস হাতে উঠে আসছে!

আহা কী রূপ! ঘন চুল, এলোকেশ, কাটা কাটা চোখ,
আমি ডেকে উঠি অনিন্দিতা!
সে মুচকি হেসে চলে যায়—

যাওয়ার আগে কাছে এসে বলে যায়, ওগো শহুরে বাবু হয়ে তোমার বউ অনিকে এত বড় নাম দিয়ে ফেললে;
লজ্জায় দুটো হাত চেপে ধরি!

বকের ঝাঁকের আওয়াজের সঙ্গে গত জন্মকে পিছনে ফেলে আসি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
1 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »