চামড়া, আঠা আর ঝাঁঝালো বার্নিশ গন্ধ, আছে
মেশিন-চলা, পাতা-ওল্টানো
মলাট-চেটানোর যান্ত্রিক আর
বিদঘুটে সব শব্দ…
তবে, সবকিছু সয়ে গেছে এখন…
এখানেই কেটে গেছে পাঁচটা বছর
র্যান্ড ফোর্ড স্ট্রিটে রিবাও’য়ের
বইয়ের দোকানে।
ঘর থেকে দূরে… ঘরের মতন
উনিশের ছেলেটির রুগণ কপালে আজও
অপুষ্টির ধূসর…
শেলফ, মাটি বা জানালার ফ্রেমে—
সর্বত্র ছড়ানো শুধু বই আর বই…
আলো যে-ভাবে লেপ্টে থাকে পাতার সবুজে,
ঘুমিয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত, ছেলেটিও
সেইভাবে থাকে বইয়ের সঙ্গে।
বই-বাঁধাই করে আর পড়ে। এভাবেই
বহুদূর তারাদের বর্ণমালা শিখে নেয় সে,
আকাশ আর হাওয়ার সঙ্গে কথা হয়,
ছায়াপথের-রশ্মি সরিয়ে, চিনে নেয়—
নিউটন, গ্যালিলিও,
ভোল্টা ও গ্যালভ্যানি…
রাতের খাওয়া শেষে ওয়াটসের লেখা বইটি
পড়তে-পড়তে ফ্যারাডের দু’চোখে যখন
ঘুমের তানপুরা বেজে ওঠে,
বালিশের পাশে রেখে দেয় ক্লান্তি আর বই।
ঠিক তখন-ই বেজে ওঠে অন্ধকার দরজায় কড়া নাড়া
ফ্যারাডের নাম ধরে কেউ হাঁকডাক করছে…
দরজা খুলতেই হাঁ হয়ে যায়
থতমত-চোখে দেখে উর্দি-পরা কেউ একজন
দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে
তার নাম লেখা একটি মুখবন্ধ খাম
হাতে ধরিয়ে বলে—
‘আমি বিজ্ঞানী হামফ্রি ডেভির গাড়ির চালক,
এই চিঠি তিনি আপনার হাতে দিতে বলেছেন।’
ভ্যাবাচ্যাকা-খাওয়া ফ্যারাডে দেখে
অদূরে দাঁড়ানো পেল্লায় একটি গাড়ি
হুস করে চলে গেল।
স্কুল না-পেরোনো মাইকেল ফ্যারাডের
চোখে তখনও ভিরমি লেগে আছে…
খাম খুলতেই, আলোয়-আলোয়
আকাশ জুড়ে জ্বলে উঠল সব নক্ষত্র
গাছের পাতা আর ফুলে, ছুঁয়ে গেল
সেই অপরূপ আলোর ঢেউ
সেই রাত থেকেই শুরু হয়ে গেল দীপাবলি, আর
বইয়ের দোকানের সেই ছেলেটি হল আলোকশিল্পী!
মাঝের একটি ও শেষ স্তবকটি কাব্যিক সুষমায় উদ্ভাসিত ফ্যারাডে, ভালো লাগলো