Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নোবেল বিজয়িনীদের কথা ও সাহিত্য

পার্ল এস বাক

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ ১৯৯৮ সালে একবার চিনে ভ্রমণ করতে গিয়ে বলেন— পার্ল এস বাক না থাকলে আমরা কি চিনকে এত বেশি জানতাম? আসলেই, বাক নিজের ভাষা শেখার আগে শিখেছিলেন চিনের ভাষা। ফলে তাঁর লেখায় চিন এত বেশি জীবন্ত ও জ্বলন্ত। তিনি তাঁর নোবেল বক্তৃতায় বলেছেন কীভাবে চিনের উপন্যাস ও উপন্যাসের ঐতিহ্য তাঁর উপন্যাস নির্মাণে সাহায্য করেছে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হিলসবোরেতে পার্ল সিডনেসস্টিকার বারের জন্ম ২৬ জুন, ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর বাবা-মা ছিলেন প্রেসবিটারিয়ান মিশনারি। একসময় চিনের নানা আন্দোলনে বাক বেশ ঝুঁকির মুখে পড়েন। বেশ কিছু বিদেশি মানুষকে মেরেও ফেলা হয়। তখন চিয়াং কাইশেকের দল, কমিউনিস্ট দল এবং কিছু যুদ্ধবাদী মানুষের সংঘর্ষে বাক ও তাঁর মত বিদেশি মানুষজনের সেদেশে থাকা রীতিমত কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। বাক কখনও পালিয়ে জাপান যান, কখনও আমেরিকায়।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে মিশনারি জন এল বাককে বিয়ে করেন। তাঁদের সে বিয়ে ভেঙেও যায়। পরে বিয়ে করেন রিচার্ড ওয়ালশ নামে একজনকে, যিনি ছিলেন তাঁর প্রকাশক।
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বাক প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম আন্তর্জাতিক সন্তান পালক সংস্থা। প্রতিষ্ঠা করেন ‘ওয়েলকাম হাউস’, যেখানে পাঁচ হাজার নিঃস্ব অভিভাবকহীন সন্তান স্থান পায়। এরপর তিনি অন্যান্য আরও সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমেরিকার বর্ণবাদ প্রথা নিয়েও সোচ্চার ছিলেন। নারীর অধিকারেও মুখর ছিল তাঁর চিন্তা। বিভিন্ন জায়গায় আমেরিকান সৈন্যদের অবাঞ্ছিত সন্তান ও তাদের অধিকার নিয়েও ছিল তাঁর মাথাব্যথা।
তাঁকে শুধু লেখক বললে খুব ভুল ভাবা হবে। লেখক ছাড়াও ছিলেন সম্পাদক, প্রতিষ্ঠাপক এবং সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি। আংচি মিন নামে তাঁর একজন জীবনীকার বলেন— তাঁর লেখায় চিন বড় বেশি ভালবাসায় ও শ্রদ্ধায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। চিনের চাষাভুষোকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁকে যেভাবে পরে চিনে আসতে দেওয়া হয়নি, সেটা অন্যায়।
বিভিন্ন নামকরা পত্রপত্রিকায় অসংখ্য নিবন্ধও লিখেছেন বাক। ‘Good Earth’ (১৯৩১), ‘Sons’ (১৯৩২) ও ‘A House Divided’ (১৯৩৫) এই ট্রিলজি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ‘East Wind, West Wind’ (১৯৩০), ‘The Dragon Seed’ (১৯৪২), ‘Come My Beloved’ (১৯৫৩), ‘Satan Never Sleeps’ (১৯৬২)। এই নিয়ে উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় চল্লিশটি।
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ: ‘My Several Worlds’ (১৯৫৪), ‘A Bridge for Passing’ (১৯৬২)। এ ছাড়াও আগে লিখেছেন আরও দু’টি এমনই গ্রন্থ— মা ক্যারোলিনকে নিয়ে লেখা : ‘Exile’ (১৯৩৬) এবং ‘Fighting Angels’ (১৯৩৬)। নন-ফিকশন গ্রন্থও লিখেছেন, যার সংখ্যা বারোটি। যেমন, ‘The Children Who Never Grew’ (১৯৫০), নিজের প্রতিবন্ধী কন্যা যেখানে প্রধান। শিশুদের জন্যও অনেক বই লিখেছেন। ছোটগল্প গ্রন্থ একুশটি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘The First Wife and Other Stories’ (১৯৩৯), ‘Far and Near’ (১৯৪৯), ‘The Good Dead’ (১৯৬৯)।
আশি বছর বয়সে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ৬ তারিখ তাঁর জীবনাবসান হয়। পুলিৎজার প্রাইজ (১৯৩২), উইলিয়ম ডিন হাওয়েলস মেডেল (১৯৩৫) ছাড়াও ১৯৩৮ সালে ‘লেখিকার ঐশ্বর্যশালী এবং সত্যিকারের মহাকাব্যিক মাত্রায় চিনের কৃষকদের জীবনযাপন বর্ণনা ও জীবনীমূলক সেরা সাহিত্যকর্মের জন্য’ তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

চিত্র : গুগল

ফাদার আন্দ্রিয়া


পার্ল এস বাক

অনুবাদ : অসীম কর্মকার

ফাদার আন্দ্রিয়া সারা দিনমান রাতের অপেক্ষা নিয়ে থাকেন। রাতে শুরু হয় তাঁর খুঁটিয়ে নক্ষত্র দেখার কাজ। চিন নগরীতে দিন লম্বায় বড় আর মানুষজনের কোলাহলে উচ্চকিত, অভাব-অভিযোগ ও বিভিন্ন দাবিদাওয়ায় সোচ্চার। রাত অবশ্য খাটো, নির্ঝঞ্ঝাট। শান্ত নক্ষত্রে রঞ্জিত। টর্চের আলোর মত ওই অন্ধকার আকাশ থেকে বিচ্ছুরিত। দূরবিনে নক্ষত্র দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনভাবে তিনি মশগুল হয়ে থাকেন যে যখন ঘুমোবার কথা মনে পড়ে, পুবের আকাশ তখন ফর্সা হয়ে নক্ষত্রগুলি সব মিলিয়ে যায় ভোরের আলোয়। কিন্তু তাঁর ঘুমের দরকার হয় না। রাতের রুপোলি তারাদের নিয়ে তাঁর দিন চলে গবেষণায়। স্কুলঘরের ছাদে ছোট্ট একটা মানমন্দির তিনি বসিয়েছেন সেই কবে।
ছোটখাটো শক্তসমর্থ হাসিখুশি স্বভাবের এই মানুষটিকে বাইরে থেকে দেখলে তাঁর ভিতরে সুপ্ত শান্ত এক মরমিয়া জ্ঞানের পরিচয় ভুলে যেতে হয়। কেউ যদি খালি তাঁর আপেলের মতো গাল, ঘন কুচকুচে কালো দাড়ি আর রক্তাভ সদাহাস্যময় মুখ দেখে থাকেন তবে নির্ঘাৎ তিনি বলবেন যে, তিনি বোধকরি এই দৃশ্যমান জীবন নাট্যমঞ্চের একজন প্রেমিক। কেউ হয়তো তাঁকে অদৃশ্য বস্তুপিণ্ডের গোপন প্রেমিক হিসাবে আবিষ্কার করে থাকলেও তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। ঠোঁটে তাঁর হাসি লেগেই থাকে। সেটা মিলায় না কখনওই, এমনকি কোনও কুষ্ঠরুগি তাঁর পা জড়িয়ে ধরে করুণাভিক্ষা করলেও বা কোনও হতভাগী দুস্থ ক্রীতদাসী মিশনের ফটক পেরিয়ে সকরুণ কান্না জুড়ে দিলেও, কিন্তু তাঁর গহন গভীর ও সমুখঠেলা চোখ দুটি প্রায়শই অশ্রুপ্লুত।
দিনের বেলায় তিনি কুষ্ঠরুগিদের নিজের হাতে তুলে তাদের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে তাদের খাইয়েদাইয়ে সেই ক্ষতস্থানে তেল মাখিয়ে দিতেন। আবার কখনও ক্রীতদাসী মেয়েটি আর তার ক্রুদ্ধা কর্ত্রীর মাঝখানে সদাহাস্যময় তিনি দাঁড়িয়ে শান্ত সমাহিত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। কর্ত্রীর গগনবিদারী চিৎকার ছোট নদীতে ঝড়ের দমকের মত বাজতে থাকলেও শীঘ্রই তাঁর সুবিনয়ী বাচনভঙ্গির কাছে তা নিষ্প্রভ হয়ে যেত। তাঁর আসল কাজ ছিল তাদের সাহায্য করা যারা জীবনের জাঁতাকলে পিষ্ট। যা তিনি আগে কোনওদিন বলেননি তাই তিনি একদিন সকালে আন্তরিকভাবে বললেন তাঁর স্কুলের ছাত্রদের :
‘হে আমার প্রাণাধিক ছাত্রগণ, একটা কথা তোমাদের বলছি শোনো। তোমরা যারা এখনও ছোট, এখানে এসে ভেবে থাকতে পারো যে পিতামাতার শৃঙ্খলমুক্ত তোমরা। ইস্কুলে এসে স্বপ্ন দেখতে পারো তোমরা অনেক বড় হয়ে গেছ। শিক্ষকদের আর মান্যিগণ্যি করার দরকার নেই। কিন্তু জেনে রেখো তোমরা কখনওই বন্ধনমুক্ত নও! তোমাদের অজেয় অমর আত্মা যখন একবার দেহধারণ করেছে, তখনই সে খ্রিস্টের মত বন্ধনে আবদ্ধ। কোনও মানুষই বন্ধনমুক্ত নয়— একে অপরের থেকেও নয়— এমনকি ঈশ্বরের থেকেও নয়।
আসল কথা, স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে কান্নাকাটি করা গালমন্দ পাড়া নিরর্থক; বরং আনন্দের সঙ্গে খুঁজে পেতে চেষ্টা করো কীভাবে সেই বন্ধনের ভার তোমরা সব অক্লেশে সহ্য করতে পারো। নক্ষত্রেরাও স্বর্গে বন্ধনমুক্ত নয়; নিয়ম-কানুন মেনে তারাও চলতে বাধ্য; পাছে অনিয়মে সৃষ্টিসুদ্ধু ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে। গ্রীষ্মের আকাশে উল্কা দেখে থাকবে তোমরা, মনে হতে পারে তারা স্বাধীনতার আনন্দে ভাস্বর। মোটেই তা নয়। তাদের অভাবনীয় পরিণতি ধ্বংস ও অন্ধকারে লয়। সেইসব নক্ষত্ররাই টিকে থাকে যারা নিজেদের নির্ধারিত পথে সুস্থিতভাবে এগিয়ে চলে। সহ্য নিয়ে থাকে শেষ পর্যন্ত।’
নীল পোশাকের চিনে খুদে ছাত্ররা এ কথাগুলোর বিন্দুবিসর্গ বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, তাঁর শান্ত কণ্ঠস্বরে আবেগমুগ্ধ হয়ে এবং তাঁর গোলগাল মুখের বিরল গাম্ভীর্য দেখে।
সারা দিন এদিক-সেদিক করে নানা ঝকমারি কাজে কাটে তাঁর, যেমন ভোরে তাঁকে কতিপয় বিশ্বস্ত বৃদ্ধা রমণীর কাছে ভাষণ দিতে হয়। এদের পরিধানে তখন সুতির কোট এবং পাজামা, কালো রুমাল তাদের মাথার চারিদিকে বাঁধা। কখনও কখনও তাঁর ভাষণ তাদের ধাতস্থ না হওয়ার জন্য তিনি কিঞ্চিৎ মুশকিলেও পড়েন। কেন না ইতালীয় উচ্চারণে তিনি চিনা ভাষা বলতেন, যা তাদের বোধগম্য হত না। কিন্তু শেষমেশ তিনি যখন দেখতে পেতেন যে, তাদের চোখের দৃষ্টি মেরি মা আর তাঁর সন্তানের দিকে নিবদ্ধ, তখন তিনি এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেন যে তাঁর কথা না বুঝুক ক্ষতি নেই, কিন্তু তারা তো তাকিয়ে আছে পবিত্র ছবিটার দিকে ও প্রাণপণে তার অর্থ উদ্ধারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
দুপুরের আগে, ছাত্রদের স্কুলে তিনি অল্পস্বল্প পড়াবারই চেষ্টা করেন। কিন্তু এর থেকে বড় কাজ আছে তাঁর। কেন না যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে ডাকা হবে গরিবগুরবোদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সালিশি মানবার জন্য।
‘ফাদার, কাল রাতে এর কাছে দশ পেনি দামের চাল বিক্রি করেছি, ভেবেছিলাম আজ ভোরেই টাকাটা পেয়ে যাব। কিন্তু এখন, এ ব্যাটা বলছে ওর কাছে কিছুই নেই। না চাল, না পেনি।’
কুলির পোশাকে দুজনারই পিঠ উন্মুক্ত, সূর্য করাঘাতে দগ্ধ, একজন তো রেগে আগুন, অপরজন পোষ না মানা।
‘ততক্ষণে আমি হেজিয়ে মরি আর কী! আমি উপোস করে মরি আর উনি ভরা আড়ত নিয়ে দিব্বি চালিয়ে যান। বিপ্লবীরা এদিকে আসছে, আর, তারা যখন আসবে, তোর মত সব লোক যারা চালের মজুতদার তাদের সব চাল আমাদের দিতে হবে যাদের চাল নেই। চাল চাই… চাল। এজন্য আবার টাকা কীসের?’
এ যেন দুটো উদ্ধত মোরগ একে অপরকে আক্রমণের আগে মেপে নিচ্ছে। ফাদার আন্দ্রিয়া তখন দুজনার কাঁধে হাত রেখে যে লোকটা বেশি তড়পাচ্ছিল তাকে বিনয়নম্র কণ্ঠে বললেন: ‘বন্ধু, বিপ্লবীদের কথা আমি কিছুই জানি না। তবু আমি যা বুঝি তা এই যে আমার বাগান আগাছায় ভরে গেছে, আর, তুমি যদি তা সাফ করে দাও, তবে আমি খুশি হয়ে তোমাকে তোমার মজুরি দেব। আর তা দিয়ে আমি নিশ্চিত তোমার মহান হৃদয়ের দ্বারা, তুমি তোমার প্রতিবেশীকে এই দশ পেনি শোধ করে দেবে। তোমার সুহৃদ হৃদয়ের পরিচয় আমার অজানা নয়। কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে ও বেচারা বড্ড গরিব আর তার চাল তুমি খেয়ে ফেলেছ। কাজ না করলে খাওয়ার অধিকার কারও জন্মায় না। এ হল জীবনের আইন, যা এমনকি বিপ্লবও সঠিকভাবে পরিবর্তন করতে পারে না।’
মুহূর্তে দুই যুদ্ধরত মুখের এতক্ষণের টানাপোড়েন কর্পূরের মত উবে গেল। দু’জনে হাসল দুধসাদা দাঁত বের করে। ফাদার আন্দ্রিয়ারও গোলাপ-রাঙা মুখে হাসির ফোয়ারা ছুটল। দিনশেষে দ্বিগুণ মজুরি দিতে গেলে লোকটি ঘাড় নেড়ে তা নিতে অস্বীকার করামাত্র ফাদার আন্দ্রিয়া একরকম জোর করে তাকে কুড়ি পেনি গুঁজে দিয়ে বললেন: ‘কোনও দিন তোমাকে কাজ করতে বলব, হয়তো সেদিন আমার পকেটে টাকা থাকবে না।’
বিকেলে ভাত, কড়াইশুঁটি ও লম্বা পিঠা খাওয়ার পরে তাঁর চ্যাপ্টা কালো টুপিটা মাথায় লাগিয়ে মানুষজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের পর্ব সারতেন। তাদের সঙ্গে চা খেতেন এবং গৃহস্থ বধূদের হাতে তৈরি গোটা ডিম সেদ্ধ খেতেন। এখানকার ধনী ব্যক্তিদের তিনি জানতেন না। বিদেশি ও ক্যাথলিক ধর্মযাজক হিসাবে এটা তাঁকে পীড়া দিত। আর সক্ষম হলেও তিনি তাঁর উপস্থিতি জোর করে ওদের সামনে হাজির করেননি। হতশ্রী মাটির বুকে নুইয়ে পড়া বাড়িগুলিই ছিল তাঁর গন্তব্যস্থান। ভিক্ষুকদের মাটির দেওয়ালও বাদ যেত না। টাকাপয়সা হাতে এলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। বিদ্রোহের ঝড়ঝঞ্ঝা এদের জানার কথা নয়; ফাদার আন্দ্রিয়ারও অবস্থা তথৈবচ। বহু বছর দৈনিক সংবাদপত্রের ধারকাছ দিয়ে যাননি। দিনরাত্রির এই ঘূর্ণিচক্রে কোথায় কী ঘটে চলেছে তার বিন্দুবিসর্গের ধারণাও তাঁর ছিল না।
সপ্তাহের একদিন একান্তে তিনি স্বদেশভূমির কথা ভাবতেন। সপ্তাহের শেষদিন সন্ধেবেলা সাফসুতরো হয়ে তাঁর কালো দাড়ি ঝকঝকে তকতকে করে রাখতেন; হাতদু’টিতে একটু আতর লাগাতেন, তারপর ছাদের ওপর রাখা একটা পুরনো আরামকেদারায় গা ভাসিয়ে দিতেন। বাকি রাতগুলোয় টেবিলের পাশে রাখা একটা টুলে বসতেন। ওখানে ছিল একটি ছোট মানমন্দির। কাগজ-কলম বের করে তাঁর ছোট্ট, নিখুঁত হাতে আকাশে নক্ষত্রের গতিবিধি লিখে রাখতেন, যা তিনি সিক্কাউইতে থাকা উপরওয়ালার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এইসব বছরের বহু সন্ধে পার করে দিয়ে তিনি কালক্রমে সুদূর প্রাচ্যে একজন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলে পরিচিত হলেন, যদিও সে কথা তিনি নিজে জানতেন না। তাঁর কাছে নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা মস্তিষ্কে একধরনের বিনোদন ও উল্লাস, যা তাঁকে খুঁটিনাটির ব্যাপারে অতি যত্নশীল ও তীক্ষ্ম, কঠিন চিন্তাকে সংহত করতে সাহায্য করেছে।
কিন্তু আজ সপ্তাহের শেষে তিনি কোনও কাগজ, কলম নিলেন না। জানালা খুলে নক্ষত্রের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে নিজের অজান্তে চলে গেলেন সাতাশ বছর আগের ফেলে আসা সুদূর ইতালিতে, যা আর তাঁর কোনও দিনই দৃষ্টিগোচর হবে না। বয়স তখন কতই বা হবে! বড়জোর তিরিশ। কিন্তু এইসব বছরগুলি এমনকি পার হয়ে গেলেও অপরাধবোধ সহ বিদায়ের যন্ত্রণা এখনও সুতীক্ষ্মতায় স্মরণে আছে। এখনও তিনি সেই সমুদ্রতটটি দেখতে পান। একদিন জাহাজের ডেকে বসে দেখতে থাকলেন আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে মাতৃভূমি, তাঁর স্বদেশ, পিতামাতা, বোন, ভাই ও প্রাণাধিক ভিতেলিয়া। এই ভিতেলিয়া তাঁর চেয়েও বেশি ভালবাসত তাঁর ভাইকে।
গির্জায় যাজক হয়ে আসা সেই ফেলে আসা পাপের প্রায়শ্চিত্তের মাশুল এত বছর ধরে। ঈশ্বরের জন্য নয়, মাতা মেরির জন্যও নয়, শুধু ভিতেলিয়া তাঁকে ভালবাসেনি— এজন্য। এমনও নয় যে ভিতেলিয়া বা অন্য কেউ তা জানত। তাঁর ভাই অবশ্য লম্বাটে দোহারা গোছের, গম্ভীর, বাদামি রঙের নির্জীব সুন্দর চোখ তার। আর ভিতেলিয়া! সে তো লম্বা মলিন এবং পরমাসুন্দরী— জলপাই গাছের গজিয়ে ওঠা নবপল্লবের মত। বর্ণ তুলতুলে, চাপা এবং তা ফিকে কুয়াশার মত। তাঁর ওপর যথেষ্ট পরিমাণে কর্তৃত্ব ছিল এই ভিতেলিয়ার। অথচ তাঁর কথা কেউই গুরুত্ব দিয়ে না ভাবলেও, সবসময় তিনি হাসিঠাট্টায়, গল্প-রসিকতায় মশগুল। তাঁর খুদে, গভীর, কালো চোখ হাস্যকৌতুকে ভরপুর।
ভিতেলিয়ার সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ের পরেও তাঁর চিরায়ত রসিকতা থেমে থাকেনি। তবে তিনি শুধু অপেক্ষা করছিলেন তাঁর ভাই ভিতেলিয়ার কাছে কতটা বিশ্বস্ত হয়ে উঠছে তার ওপর। অনুযোগ বা নালিশ জানানোরও কিছু নেই সেখানে। তাঁর ভাই অবশ্য ভালমানুষ, তবে তার দেহের সৌন্দর্যের মধ্যে কেমন যেন খানিক বোকা বোকা ভাব, আর, এখন সেই ভাই যখন সন্তানের জনক হতে চলল, তখন তিনি ঠিক করলেন, আর নয়, এবার পিতার মদের ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করবেন পুরোপুরিভাবে। তারা সুখে থাকুক। না, এখানেও অনুযোগ জানানোর কিছু নেই।
অনেক আত্মত্যাগও যখন কারও নজর কাড়ল না, একবছর শুধু মর্মে মর্মে জ্বলে শেষমেশ ঠিক করলেন এবার তিনি ধর্মপ্রচারক হবেন। আর তখনই তিনি হলেন এক পলাতক যাজক।
পরিবার উপহাস করল— জনে জনে মুচকি হাসল। আর ভিতেলিয়া! সে তাঁকে থামিয়ে দিয়েছিল আর কী! হাতদু’টি তাঁর নরম করপল্লবে বেঁধে সঙ্গীতের চেয়েও সুমধুর কণ্ঠে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলতে লাগল, ‘আন্দ্রিয়া, ভাই আমার, তুমি চলে গেলে কে থাকবে আমার পাশে পাশে? কে খেলবে আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে?’ আন্দ্রিয়া শুধু মাথা নাড়লেন। হাসলেন। নির্বাক নিশ্চুপ। আর ভিতেলিয়া শুধু অবাক হয়ে দেখল যে আন্দ্রিয়ার দু’চোখ জলে ভরে গেছে। তাঁকে বলল, ‘যেতে চাও, যাও।’
কত, কত বছর আগের কথা! কত বছর ধরে তিনি ভিতেলিয়াকে চিন্তায় আনেননি, কেন না সে অপর একজনের বিবাহিত স্ত্রী। রাতের পর রাত তিনি শুধু নক্ষত্রের কাছে নতজানু হয়ে শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। কখনও মনে হয়নি যে ভিতেলিয়াকে পাগলের মত ভালবাসার খেসারত প্রায়শ্চিত্তে লীন হয়েছে। একবার তার কথা ভাবতে গিয়ে সমস্ত শরীর তাঁর কামজ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল। প্রায়শ্চিত্ত বিধানের জন্য পাগলের মত রাস্তায় দৌড়ে গিয়ে সেই কনকনে ঠান্ডায় এক ভিখিরিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে কম্বল চাপা দিয়ে নিজের বিছানায় শুইয়েছিলেন। এদিকে নিজের তো দাঁতকপাটি লাগার যোগাড়। কিন্তু ভোর হতেই বীরদর্পে তার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘এখন কি তুমি শান্ত হয়েছ বাবা? আর তো আমাকে জ্বালাবে না!’ এসব প্রমাণ করে তাঁর মধুর হাসির অন্তরালে লুকিয়ে আছে এক গভীর ট্র‌্যাজেডি।
একদিন কালো হরফে খামে মোড়া চিঠি এল তাঁর কাছে। বহু বছর পরে এটাই প্রথম চিঠি। চিঠি খুলে দেখলেন ভিতেলিয়া আর ইহজগতে নেই। অবশেষে… অবশেষে একধরনের স্বস্তি তিনি পেলেন। আর তার পরেই সপ্তাহ শেষের এই সন্ধেয় তিনি ভিতেলিয়াকে একান্তে ভাবতে লাগলেন। এখন তো সে মৃত। যেন নক্ষত্রখচিত আকাশে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন সে কারও পত্নী নয়— কারও অধিকার নেই তার ওপর। কারও ব্যক্তিগত আদরের ধন নয় সে, স্বর্গের এক অংশবিশেষ। আকাশের নক্ষত্রের মতই কলঙ্কহীনা, নিষ্পাপ।
এখন তিনি একজন স্থিতধী যাজক। একদিন স্কুলের এক ছাত্র পালিয়ে গিয়ে বিপ্লবী দলে যোগ দিলে তিনি বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে তার ক্রন্দনরতা জননীর কাছে ফিরে আসতে বলেন। ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে, একটু হেসে মৃদু আবেগ আপ্লুত স্বরে বললেন, ‘মঙ্গলময় ঈশ্বর এ সংসারে জীবকে পাঠান কিছু কর্তব্যকর্ম করার জন্য।’
হাত ছাড়িয়ে ছেলেটি বেশ ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিল, ‘ওসব বুঝিফুজি না। বিপ্লবে ঈশ্বরের কোনও স্থান নেই। সংসারধর্ম বলেও কিছু নেই। আমরা এখানে মুক্ত, আর সেই মুক্তির বাণী আমরা আপামর জনতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’
‘অ্যাঁ!’ অস্ফুট এই শব্দটি ফাদার আন্দ্রিয়ার মুখ থেকে বেরিয়ে এল।
এই প্রথম তিনি এক আসন্ন বিপদের জন্য অস্বস্তিবোধ করতে লাগলেন। অ্যাদ্দিন চারদিকে যে বিপ্লব বিপ্লব ধ্বনি সবেগে সোচ্চারিত হচ্ছিল তার দিকে দৃকপাত পর্যন্ত করেননি। এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে এই বিপ্লবের কথা, বিশেষ করে তাঁর ইস্কুলের ছাত্ররা যখন একের পর এক যোগ দিচ্ছে বিপ্লবী দলে। কেউ নিশ্চয়ই তাদের খেপিয়ে তুলেছে। শেষে উপায়ান্তর না পেয়ে ছাত্রদের ডেকে বললেন, ‘তোমাদের দেখছি মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকেছে। এবার তাহলে আমার বিদায়ের পালা। কিন্তু তোমাদের বলি, তোমরা যে প্রার্থনাসঙ্গীত এখানে শিখেছ, তা যেন কখনও ভুলো না। এই আমার শেষ অনুরোধ।’
এক ছাত্রের মাথায় স্নেহপেলব হাত ছুঁইয়ে চকিতে তিনি পথ চলতে লাগলেন; বারাকটা তখনও পেরোতে পারেননি। অমনি পিছন থেকে ভেসে এল এক মস্ত হাসির হিল্লোল— তাঁর প্রাণাধিক পুত্রবৎসল ছাত্রদের অহৈতুকী চিৎকার— ‘ব্যাটা ভিনদেশি পালানো কুত্তা।’
এর অর্থ তাঁর বোধগম্য হল না। একবার ভাবলেন ফিরে গিয়ে এই চিৎকার থামান। কেউ সব্বাইকে ছাপিয়ে তখনও কমরেডদের খুশি করে চেঁচাচ্ছে, ‘ব্যাটা ভিনদেশি পালানো কুত্তা। খ্রিস্টিয়ান, ভণ্ড। আমি এদের ঘেন্না করি। ওদের ধর্ম তো বুজরুকি। আমি বিপ্লবী। হিম্মত থাকে তো চ্যালেঞ্জ জানাক।’
ফাদার আন্দ্রিয়া কেমন বোবা বনে গেলেন। কী সব কদর্য ভাষা আজ তাঁরই ছাত্রদের মুখ থেকে বের হচ্ছে। এই ছেলেটিকে না তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকেই স্কুলে দেখে আসছেন! সমস্ত শরীর খানিকটা কেঁপে উঠল। একটা চিন্তা কেবলই ঘুরপাক খেয়ে ক্ষতের আকারে মনে বিঁধছে, ‘পিটারও তাহলে এভাবে ঈশ্বরকে অমান্য করেছিল!’ ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে খুব কাঁদলেন।
এরপরে তাঁর মনে হল তিনি যেন এক নামহীন গোত্রহীন পরিচয়হীন অপরিমেয় এক ঘূর্ণাবর্তের কিনারে দাঁড়িয়ে। সম্পূর্ণ একা। দ্বীপের মতই নিঃসঙ্গ। তিনি বলেছিলেন যে অবশ্যই এই বিপ্লবের একটা কিনারা করে ছাড়বেন এবং দেখবেন যাতে তাঁর ছাত্ররা বিপথে না যায়। কিন্তু এই অনুসন্ধানের দরকার নেই। প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা তাঁকে ঘিরে ধরে এক গোলকধাঁধায় তলিয়ে দিল।
সাতাশটা বছর তিনি এদের সাথে কাটিয়েছেন সাংঘাতিক এই জনবহুল নগরীর ক্ষুদ্র এক ঘিঞ্জি প্রান্তে— পুব-পশ্চিমের রাজনৈতিক বিভেদ সম্বন্ধে কোনও ধারণা না জেনেই। আজ তাঁর ছোট্ট অবয়বটা ভগ্ন মন্দির, সাঁকো বা পুরনো রাস্তার মতই আকারপ্রাপ্ত। খেলতে থাকা কচিকাঁচারা শীত-গ্রীষ্ম বারোমাস তাঁর হাস্যকরভাবে ঝুলে পড়া পকেট ভর্তি চিনেবাদাম দেখে দেখে অভ্যস্ত। রাস্তার ধারে দোকানের কাউন্টারগুলি অব্দি সচকিত কুমারী মেরির ছবি ও ক্রস দেখে দেখে আর ইঁদারার পাশ দিয়ে তাঁর পথচলার অর্থই হল বাসন-মাজা রত মহিলারা সূর্যাস্তের পূর্বের সময় মিলিয়ে নিচ্ছে, নয়তো দুপুরের একঘণ্টা পরের সময়।
এখন কীই বা অবশিষ্ট আছে? সবই পাল্টে গেছে। তিনি আর ফাদার আন্দ্রিয়া নন। বুড়িয়ে যাওয়া নির্বিষ এক ধর্মপ্রচারকমাত্র; বরং বলা উচিত, এক ভিনদেশি।
একদিন হাত বাড়িয়ে একটি শিশুকে একমুঠো চিনাবাদাম দিতে গেলে সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। ‘আমার মা বলেছেন ওতে বিষ আছে।’
‘বিষ!’ ফাদার আন্দ্রিয়া অবাকবিস্ময়ে আকাশ থেকে পড়লেন।
পরদিনও পকেটভর্তি চিনাবাদাম ফিরিয়ে আনতে হল। একবার তো ইঁদারার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক মহিলা তাঁকে দেখে থুতুই ছেটাল। তারপরও লোকজন মাথা নেড়েছে তাঁর হাসিমুখ দেখে। তাতে না আছে উত্তাপ, না ভালবাসা। সম্পূর্ণ এক ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা ফাদারের।
কয়েকদিন কেটে গেল। এক রাতে এক প্রতিবেশী এল তাঁর কাছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। লোকটা কিঞ্চিৎ ভাল আবার মন্দও বটে। কিন্তু কোনও দিন আন্দ্রিয়া এই বৃদ্ধ লোকটির ভুল শোধরাবার জন্য মুখফুটে কিছু বলেননি। এখন সে ফাদার আন্দ্রিয়াকে বলল, ‘এই উন্মত্ত অবস্থা না থিতুলে বাইরে বেরোবেন না, ফাদার।’
‘কীসের উন্মত্ততা?’
‘এই যে ভিনদেশি, ভিনদেশি আর বিপ্লব বিপ্লব চলছে না, এই যে দখিন থেকে লম্বা কালো গাউন পরা ছেলেরা আসছে, তাদের কথা জনগণ গোগ্রাসে গিলছে, আর তারাই বলছে যে ভিনদেশিরা তাদের নতুন ধর্ম দিয়ে জনগণকে হত্যা করছে, তাদের বুক চিরছে।’
‘নতুন ধর্ম? আমার তো নতুন ধর্ম বলে কিছু নেই। আমি তো সেই সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। প্রচারকার্য চালাচ্ছি।’
‘হলেও বা, আপনি ভিনদেশি তো।’
‘কী আশ্চর্য! এটাই তো বড্ড ভাবাচ্ছে আমাকে।’
কিন্তু পরের দিন থেকে বৃদ্ধের কথা না শুনে আর উপায় রইল না। কেন না পরদিন কড়িগেট পেরিয়ে যেই না তিনি রাস্তায় নেমেছেন, আচমকা একটা বড় পাথরের টুকরো সজোরে এসে আঘাত করল তাঁর বুকে। আবলুস কাঠের ক্রসখানা ভেঙে একেবারে দু-টুকরো হয়ে গেল। হাত নামিয়ে যেই না সেটা তুলতে গেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আর একটা পাথরের টুকরো তাঁর হাতে লাগল। হাতটা বিশ্রীভাবে কেটে গেল। ভয়ে মুখ তাঁর পাণ্ডুবর্ণ। কোনওরকমে দৌড়ে এসে প্রচারগৃহের দরজা বন্ধ করে হাঁটু মুড়ে বসে ভাঙা ক্রসে হাত রাখলেন। এরপর বহুদিন কারও সাথে কোনও কথা বলেননি। পরিশেষে সেই অমর অক্ষয় বাক্যই তাঁর মুখ ঠেলে বেরিয়ে এল, ‘হে পরমপিতা, এদেরকে তুমি ক্ষমা করো, কেন না এরা জানে না এরা কী করছে।’
তারপর থেকে তিনি ওই চৌহদ্দির মধ্যেই আছেন। ঝড়ের বাতাবরণের মধ্যে শান্ত কেন্দ্রবিন্দু আপাতত। কয়েকদিন কেউ তাঁকে দেখতে এল না আর। স্কুলঘরটির খাঁখাঁ শ্রেণিকক্ষগুলির দিকে বিষন্ন মুখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। নিঃসঙ্গ চৌহদ্দির বাইরে যেখানে তিনি আর তাঁর বুড়ো সহকারী রোজ বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতেন, সেখান থেকে নানারকম অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে। কখনও মনে হয় (হয়তো বা মনেরই ভুল) রাস্তা থেকে ভেসে আসছে ওই শব্দ। ফাদার গেট বন্ধ করে দেন। শুধু সামান্য খাবার কেনার জন্য দিনে একবারই সন্ধ্যার দিকে ওই বৃদ্ধের জন্য খোলেন। শেষে একদিন বৃদ্ধ লোকটি খালিহাতে ফিরে এসে বেদনার স্বরে বলল, ‘ওরা আর আমাকে আপনার জন্য খাবার কিনতে দেবে না। আপনার প্রাণ বাঁচানোর জন্য কতরকম যে ভণিতার আশ্রয় নিয়েছি, কী বলব। ওদের বলেছি, আমি আর আপনার সাথে নেই। বরং আপনাকে দারুণ ঘেন্না করি। যা হোক, এবার শুনুন। বাগানটার পশ্চিম দিকটার কোণ থেকে রোজ রাতে আপনার জন্য খাবার পোঁটলা ছুড়ে দিয়ে আসব। আর প্রত্যেক সন্ধেয় ওই সময়টায় আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করে বলব— আমাদের ঈশ্বর যেন আপনাকে দেখে।’
তারপর থেকে ফাদার আন্দ্রিয়া এক্কেবারে একা। মানমন্দিরেই বেশিরভাগ সময় কাটান। আর এখানকার প্রত্যেক সন্ধের কথাই ভাবেন। দিনগুলি এদিকে বেজায় বড় আর সঙ্গীহীন। এমনকি কুষ্ঠরুগিদেরও তিনি পাচ্ছেন না। আর বাইরে থেকে থেকে বিদ্রোহের উচ্চনিনাদ। যেন মনে হচ্ছে গর্জনরত নীল দরিয়ার আঘাতে বিচূর্ণ এক দ্বীপে তিনি নির্বাসিত। সেই ঢেউ কবে একদিন সত্যি সত্যিই তাঁকে ভেঙে গুঁড়িয়ে কোন পরপারে নিয়ে যাকে তার ঠিকানা নেই।
ক্রমশই এর থেকে মন সরাবার চেষ্টা করছেন আপ্রাণ। গড়ে তুলছেন শৈশবের ছোট্ট স্বপ্নময় এক ইতালি। তাঁর প্রিয় আঙুর খেতের মধুর স্মৃতির অতুলনীয় আঘ্রাণ। রাতের পর রাত পুরনো আরামকেদারায় বসে জীবনের শুভারম্ভ যেন পুনর্নির্মাণ করছেন। মে মাস। আকাশের ঝিকিমিকি তারায় চৌদিক উদ্ভাসিত। কলম বা নোটবুক কিছুই ধরলেন না। তাদের অপার্থিব সৌন্দর্য ছাড়া, তারামণ্ডলী সম্বন্ধে তিনি আজ সম্পূর্ণ উদাসীন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এই বিপুল আকাশ আর তারার জন্য। মে মাসের চিনের আকাশ আর গ্রীষ্মের ইতালির আকাশ একইরকম। অন্ধকার আকাশে সোনালি তারাগুলি যেন ঝুলে আছে। ঠিক এমনই এক রাতে ইতালিতে একবার খোলা জানালা দিয়ে তারাদের অপূর্ব নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অন্ধবেগে ছুটে ভিতেলিয়ার বাড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছেন। পেল্লাই ঢাকের বাদ্যির মত হৃদপিণ্ড তখনও বাজছে। থরথর করে কাঁপছে শরীর। আজ তাঁকে যে করে হোক চিৎকার করে বলতেই হবে, ‘ভিতেলিয়া, আমি তোমাকে ভালবাসি।’
ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ামাত্র ভাই দরজা খুলে বিনীতভাবে বলল, ‘আমরা শুতে যাচ্ছিলাম, আন্দ্রিয়া। তোমার কি বিশেষ কোনও দরকার আছে?’
ভাইয়ের পিছনেই দাঁড়িয়ে ভিতেলিয়া। খানিকটা অন্ধকারের আবডালে। মুখ মলিন— গোধূলির ফুলের মতই অস্পষ্ট। ভিতেলিয়া এগিয়ে এসে স্বামীর হাতে আলতো করে হাত রাখে। শরীর ছিল তার বুকে। সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তের ভঙ্গি। আন্দ্রিয়ার সব আবেগ মুহূর্তে উবে গেল।
‘না, মানে ধন্যবাদ। আমি ভাবলাম… আসলে এত রাত হয়েছে বুঝতে পারিনি। ভাবলাম দু’দণ্ড গল্প করি। হয়তো…’
‘আচ্ছা, আচ্ছা। আরেকদিন এসো।’ ভাই গম্ভীরভাবে বলল। আর ভিতেলিয়া যোগ করল, ‘শুভরাত্রি, ভাই আন্দ্রিয়া!’ তারপর দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
সেই গোটা রাত বাগানে আন্দ্রিয়া একা ঠায় দাঁড়িয়ে। প্রতিজ্ঞা করলেন, ভিতেলিয়ার তাঁকে যখন বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই, তখন তিনি জীবনভর দরিদ্রের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন— সুদূর প্রাচ্যে।
আহ্! যৌবন আধারে যত দুঃখ যত বেদনা যত আবেগ তিনি জমা করে রেখেছেন তার লয় হোক এই সাংঘাতিক ইচ্ছাশক্তিতে, যদিও জানেন তার থেকে মুক্তিলাভ তাঁর কখনও ঘটবে না— যদ্দিন তিনি বেঁচে থাকবেন এই ধরিত্রীর বুকে। এখন এই নক্ষত্রখচিত আকাশে তাঁর বয়ে বেড়ানো নিদারুণ দুঃখাঘাত ভিতেলিয়াকে না বলাই ভাল। আজ সে বুদ্ধি দিয়ে বুঝুক, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুক। বেঁচে থাকতে তো বোঝেনি। এখনকার এই নতুন স্বর্গীয় সম্পর্কের ভাগীদার তো উভয়েই।
চাপ চাপ একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি তখন আস্তে আস্তে বাগানের পশিচম দিকটার কোণে এসে দাঁড়ালেন। সেখানে পদ্মপাতায় মোড়া একটা প্যাকেট খুলে খানিকটা হিমশীতল ভাত আর কয়েক টুকরো রান্না মাংস খেলেন। তারপর তাঁর প্রার্থনামন্ত্র পাঠ করলেন— আঙুলগুলো তখনও বুকে লেগে থাকা ভাঙা ক্রসচিহ্নের চারিদিকে ঘুরছে।
প্রাচীরের ওপারে রাজপথ থেকে হাজার হাজার পদধ্বনির শব্দ ভেসে এল। অবাক হয়ে খানিকক্ষণ শুনলেন কান পেতে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আবার তাঁর মানমন্দিরের দিকে যেতে শুরু করলেন। সেখানে চেয়ারে বসে স্বর্গের পরিষ্কার শূন্যতা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লেন জানেন না।
ধড়ফড় করে জেগে উঠলেন ভোরে, যেন কোনও কোলাহল হঠাৎই তাঁকে জাগিয়ে দিল। কী হচ্ছে বুঝতে পারছেন না কিছুই। ঊষালগ্নে তারার রং থাকে খানিকটা ফিকে। তখনও অন্ধকার থাকে শিশিরভেজা গির্জার ছাদে। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে উন্মত্তের মত ভেসে আসছে নানা রকমের আওয়াজ, হৈহট্টগোল। পরপর গুলির শব্দ। উঠে বসে তিনি দিক ঠিক করতে না পেরে ভাবতে চেষ্টা করলেন— কী হতে পারে! এসবই কি তাঁর ঘুম ভাঙার কারণ! কুচকাওয়াজের শব্দ তো আর শোনা যাচ্ছে না। দূরবর্তী পুবের আকাশে ও তবে কীসের ঝলকানি! কিছু দাউদাউ করে জ্বলছে নিশ্চয়ই। ওই দিকটাতে থাকে শহরের ধনী ব্যক্তিরা। সেখানে সব কেতন ওড়ানো আধুনিক দোকানপাট। তবে কি পুব দিগন্তে সূর্য উঠল! না, তাও তো হবার নয়। এই মেঘমেদুর ধূসর আকাশে এমন মহাসমারোহে সূর্য তো উঠবে না!
সবেগে চেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে নেমে পড়লেন। ঘুমের ঘোর তখনও কাটেনি। শরীর-মন অবসন্ন। ঘাসের ওপর পা দেওয়ামাত্র সদর দরজায় একটানা জোর করাঘাতের শব্দ। মাথা চুলকে চিন্তাগুলোকে সব গুছিয়ে তিনি দরজা খুলতে গেলেন। এতক্ষণ এ তাহলে কড়া নাড়ার শব্দ, যা তিনি ঘুমের মধ্যে শুনেছেন। অতিকষ্টে ভারি কাঠের খিলটা খুললেন। শেষমেশ দরজা খুলে যা দেখলেন, তাতে তাঁর চক্ষুস্থির। শ’য়ে শ’য়ে লোক সেখানে একত্রে দাঁড়িয়ে— আর ছাই রঙের পোশকে গাদা গাদা সৈন্য। তাদের মুখের চেহারা যে এত কুৎসিত, এত ভয়ংকর, এত হিংসাত্মক হতে পারে এ তাঁর কল্পনারও অতীত। এত সঙ্কুচিত হয়ে গেলেন যে জীবনে কোনও কুষ্ঠরুগি দেখেও এমনটা ঘটেনি। পৈশাচিক চিৎকার সহ তাদের বন্দুকের নল তাঁর দিকে তাক করে। ভয় না পেলেও একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলেন।
সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী চাও তোমরা, বলো তো বন্ধুরা?’
তাঁর সেই স্কুল-পালানো ছেলেটার থেকে খানিক বয়সে বড় এক যুবক তাঁর দিকে এগিয়ে এল। টান মেরে গলায় ঝুলানো স্তবমালা ছিঁড়ে ফেলল। এত বছর ধরে সযত্নে রক্ষিত ক্রুসের যাবতীয় অবশিষ্টাংশ একেবারে মাটিতে লুণ্ঠিত হল।’
সেই যুবক চেঁচিয়ে বলল, ‘পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দুনিয়া থেকে নিপাত যাক। এই চাই আমরা।’
‘পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী!’— অবাক ফাদার আন্দ্রিয়ার মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল। এই শব্দগুলো তো তিনি জীবনে শোনেননি। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন চার্চ ফাদারদের জীবনপঞ্জি আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই ছাড়া তিনি তো আর কিছুই পড়েননি। এই যুবকের বক্তব্যের সামান্যতম ধারণাও তিনি করতে পারলেন না।
তখনও যুবকটির বন্দুকের নল তাক করে আছে ফাদার আন্দ্রিয়ার দিকে। সে চেঁচিয়ে বলে চলেছে— ‘আমরা বিপ্লবী!’
তার কণ্ঠস্বর এতই রূঢ় ও কর্কশ যেন বহু ঘণ্টা ধরে চেঁচাচ্ছে। মসৃণ মুখমণ্ডল রক্তজবার মত ক্রোধে লাল, যেন সবেমাত্র মদ গিলে এসেছে। তখনও চেঁচাচ্ছে, ‘আমরা সবাইকে মুক্ত করতে এসেছি।’
‘সবাইকে মুক্ত করতে?’— মৃদু হেসে ধীরে ধীরে জানতে চাইলেন ফাদার। ধুলোর মধ্য থেকে ক্রসটি তোলবার জন্য যেইমাত্র মাথা নিচু করেছেন, অমনি ‘ক্রস’ ছোঁয়ার আগেই যুবকটির বন্দুক গর্জে উঠল। আর ফাদার আন্দ্রিয়া চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লেন মাটির পৃথিবীর বুকে।

গ্রাফিক্স : মুনির হোসেন
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »
মোহাম্মদ কাজী মামুন

বালকেরা অচেনা থাকে : এক অবিস্মরণীয় পাঠ অভিজ্ঞতা

ঘাসফুল নদী থেকে প্রকাশিত ‘বালকেরা অচেনা থাকে’ গল্পগ্রন্থটি যতই এগোনো হয়, একটা অনুতাপ ভর করতে থাকে পাঠকের মনে— কেন আগে সন্ধান পায়নি এই অমূল্য রত্নসম্ভারের! হ্যাঁ, রত্নসম্ভারই, কারণ একটা-দুটো নয়, প্রায় দশটি রত্ন, তাও নানা জাতের— লুকিয়ে ছিল গল্পগ্রন্থটির অনাবিষ্কৃত খনিতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসবের শতবর্ষ

কবির প্রয়াণের পরের বছর থেকেই আশ্রমবাসী বাইশে শ্রাবণকে বৃক্ষরোপণ উৎসব বলে স্থির করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনটিই এ-উৎসবের স্থায়ী তারিখ। বাইশের ভোর থেকেই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সকালে কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা বিচিত্রভাবে একটি পালকি চিত্রিত করেন ছবি এঁকে, ফুল, লতাপাতায়। মঙ্গলধ্বনি দিতে দিতে এর পর পালকির ভিতরে টবের মধ্যে একটি চারাগাছকে স্থাপন করা হয়। অতঃপর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত-পরিবেশন-সহ আশ্রম-পরিক্রমা।

Read More »