Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। রক্তকরবী নিয়ে আলোচনা নয়, আজ বরং খুঁজে দেখি রক্তকরবীতে রবীন্দ্রনাথের নন্দিনীকে। পাণ্ডুলিপির খসড়া থেকে দেখা যায়, তিনি নন্দিনীকে কখনও খঞ্জনা কখনও খঞ্জন কখনও সুনন্দা নাম দিয়েছেন। নাটকের মূল চরিত্র নন্দিনীকে উপস্থাপন করা হয়েছে পরিবর্তনকামী এক নারী হিসেবে। যক্ষপুরীর যে আঁধার সেই আঁধারে একটু আলোর পরশ নিয়ে আসতে তার নান্দনিক চেষ্টার কোনও অন্ত নেই। নান্দনিক বলছি একারণে যে, নন্দিনী বিপ্লবী নারী হলেও তার বিপ্লবের পথ কখনওই সহিংস নয়। বরং বিশু পাগলার গান, কিশোরের রক্তকরবী অনুষঙ্গ এসেছে বারবার যা নন্দিনীকে উপস্থাপন করেছে আলো-অন্বেষী এক নান্দনিক নারী হিসেবে। নাটকে বারবার রাজা, শোষক, শ্রমিক, প্রতিবাদ বিষয়গুলো আপাতদৃষ্টিতে মার্কসের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের প্রাথমিক আভাষ দিলেও প্রকৃতপক্ষে সেই শ্রেণিসংগ্রাম আর নন্দিনীর বিপ্লব এক কিনা তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

রবীন্দ্র সাহিত্য-সমুদ্রে বারবার ভেসে উঠেছে এক-একজন উজ্জ্বল নারীর মুখচ্ছবি। কখনও তাঁরা বালিকা, কখনও কিশোরী, কখনও-বা যুবতী। এসব স্তর অতিক্রম করে তাঁরা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন এক-একজন সম্পূর্ণ নারী। তাঁর কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক সর্বত্রই নারীশক্তির জয়জয়কার। তাঁর সাহিত্যকর্মের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, সেখানে যেন নারীরা বারবার নব নবরূপে ফিরে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথের নায়িকারা একেবারেই স্বতন্ত্র। কখনও তারা দ্বিধাগ্রস্ত, কখনও-বা আত্মবিশ্বাসী। কখনও তারা রহস্যময়ী, আবার কখনও ভীষণ অকপট। নারীচরিত্রের ভেতর যে এক চিরকালীন রহস্যময়তা, তাকে রবীন্দ্রনাথ রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আপাত-ঘরোয়া রমণীর বুকের গহিনেও যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে, এই সত্যকে তিনি প্রাণপণে বিশ্বাস করেছিলেন। নন্দিনী চরিত্রটিও এর বাইরে নয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘রক্তকরবীর সমস্ত পালাটি নন্দিনী বলে একটি মানবীর ছবি। চারি দিকের পীড়নের ভিতর দিয়ে তার আত্মপ্রকাশ। ফোয়ারা যেমন সঙ্কীর্ণতার পীড়নে হাসিতে অশ্রুতে কলধ্বনিতে ঊর্ধ্বে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তেমনি।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘নাটকের মধ্যেই কবি আভাস দিয়েছেন যে, মাটি খুঁড়ে যে পাতালে ধন খোঁজা হয় নন্দিনী সেখানকার নয়, মাটির উপর তলে যেখানে প্রাণের, যেখানে রূপের, যেখানে প্রেমের লীলা নন্দিনী সেই সহজ সুখের, সেই সহজ সৌন্দর্যের।’ নন্দিনী এবং রক্তকরবী আসলে একই, তারা স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত। প্রাণের স্বাধীন সত্তা, মুক্তচিন্তা ও বন্ধনমুক্তি মানুষের চির আরাধ্য, সে সত্য ও সুন্দরের পূজারী, সংকীর্ণতা ও জড়ের বিরুদ্ধে চৈতন্যের বিজয়, এই চিরন্তন সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক নন্দিনী। প্রেক্ষাপট একটি কাল্পনিক রাজ্য তার নাম যক্ষপুরী। এই নগরটি পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক, পুঁজিবাদ যেমনটা হয়ে থাকে। এখানে কেউ নন্দিনীকে চায় আত্মসাৎ করবে, কেউ চায় তাড়িয়ে দেবে। কিন্তু নন্দিনী তার স্বভাবগুণেই চায় ব্যবস্থাটাকে ভাঙবে, অস্ত্রের জোরে নয়, প্রাণের জোরে। রাজাকে সে জানিয়ে দিয়েছে, ‘আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার সঙ্গে লড়াই।’ পৌরাণিক ভাবনার যক্ষরাজ কুবেরের স্বর্ণসিংহাসন আর তার বিপুল ঐশ্বর্যমণ্ডিত পাতালপুরী এটা নয়। তবে এখানে মাটির নিচে সোনার খনি। সেখানে তাল তাল সোনা সঞ্চিত আছে। তারই সন্ধান পেয়ে সুড়ঙ্গ কেটে সেই সোনা আহরণ করে চলেছে একদল পরিশ্রমী মজুর। নাটকে যাদের বলা হচ্ছে ‘খোদাইকর’। কিশোর, গোকুল, ফাগুলাল, বিশু এরাই রাতদিন খনি থেকে সোনা তুলে আনে। খোদাইকরেরা সারাদিন মদের নেশায় চুর হয়ে থাকে। যক্ষপুরীতে মুনাফা অর্জনই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। দয়া-মায়া মানবিকতা এখানে উপেক্ষিত। রাজা প্রজাদের শোষণ করছে আর রাজভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে খনি-মজুরেরা যন্ত্রের মতো সোনা তুলে চলেছে। এরাই উনিশ-বিশ শতকের শিল্পায়ন আর নগরায়নের দাপটে ভূমি আর কৃষিজীবন থেকে উৎপাটিত কৃষককূল কিংবা কৃষিমজুর। রাজা নিজেও কিন্তু বন্দি, তার নিজের গড়া ওই ব্যবস্থার ভেতরে। সে নিঃসঙ্গ, তপ্ত, রিক্ত, ক্লান্ত। থাকে লোহার তৈরি জালের ভেতরে। যে সর্দার ও মোড়লরা তার চার পাশে রয়েছে তারা তার পক্ষে কাজ করে, আবার তাকে পাহারাও দেয়, ঘিরে রাখে, রাজা যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে। যক্ষপুরীতে মৈত্রী নেই। রয়েছে রাগ, অবিশ্বাস, হিংসা ও ষড়যন্ত্র। নগরের বাইরে আছে জীবন্ত প্রকৃতি, সেখানে কৃষিকাজ চলে, সেখান থেকে ডাক আসে: ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়রে চলে আয়, আয়, আয়।’ ঘটনার সময়টা পৌষ মাসের, ফসলকাটার দিনের। রাজার ভেতরে আছে লালসা; তাল তাল সোনা খুঁড়ে তুলেছে তার খোদাইকাররা। কিন্তু ভেতরের মানুষটা এখনও একেবারে পাথর হয়ে যায়নি। যে জন্য নন্দিনীর প্রতি সে চঞ্চল হয়। নন্দিনীর সঙ্গে রঞ্জনের বন্ধুত্ব রাজাকে ঈর্ষাকাতর করে, তার ভেতরে কম্পন ধরায়, রঞ্জনও বিদ্রোহী, সে এই রাজ্যের যান্ত্রিকতাকে মানে না, সে গান গায়, নানান সাজে নিজেকে সাজায়; রঞ্জন কিছুতেই খোদাইকার হবে না। আর আছে বিশুপাগলা। সেও গান গায়, এবং যক্ষপুরীর নিয়মকানুন মানে না।

রক্তকরবীর প্রায় সব চরিত্র বাঁধা পড়ে আছে যক্ষপুরীর যান্ত্রিক জীবন আর লৌহ যবনিকার আড়ালে। রঞ্জন নন্দিনীর প্রেমাস্পদ। সে এই নাটকের প্রতিবাদী সত্ত্বা, সে স্রোতস্বিনী নদীর মতো। নাটকের এক পর্যায়ে প্রহরীদের হাতে বিশু বন্দি হয়। বন্দি হয় কিশোর। খনির মজুররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বন্দিশালা চুরমার করে ভেঙে ফেলতে এগিয়ে চলে কারিগরপাড়া থেকে সব মজুরেরা। এদিকে রাজাকে না জানিয়ে রঞ্জনকেও কৌশলে বন্দি করে সর্দারেরা। রক্তকরবীর রাজা চরিত্রটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রাজার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন দ্বৈতসত্ত্বা। বলছেন ‘একই দেহে রাবণ ও বিভীষণ। সে আপনাকেই আপনি পরাস্ত করে’। একই দেহে মানব ও দেব সত্ত্বা। নন্দিনী যক্ষপুরী আসলে তার আবহ বদলে যাচ্ছে, তাই রাজা নন্দিনীর প্রতি কোনও নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারেননি। আবার নন্দিনী কোনও বিদ্রোহী নারীও নয়। প্রতিশোধ পরায়ণতা নিয়ে রাজাকে জয় করার বাসনা তার ছিল না। তার হাতে ছিল মুক্তজীবনের আলোকবর্র্তিকা। নন্দিনীর যেটুকু বিদ্রোহ তা যক্ষপুরীর অচলায়তন ভেঙে মুক্ত বাতাস বইয়ে দেয়ার জন্য বিদ্রোহ। রাজা নিজেকে পাহাড়ের চূড়ার মতো নিঃসঙ্গ বলেছেন। নন্দিনীর ভালবাসার কাছে রাজা হার মেনেছিলেন। মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নন্দিনীর সাথে রঞ্জনের। শেষ পর্যন্ত রাজা তার প্রাসাদের দ্বার খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। রঞ্জনের মৃতদেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে। নন্দিনীর মুখে রাজা জানলেন এই রঞ্জন। সর্দাররা রঞ্জনের পরিচয় গোপন রেখেছিল রাজার কাছে। রাজা অনুশোচনায় ভেঙে পড়লেন, ‘আমি যৌবনকে মেরেছি– এতদিন ধরে আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে কেবল যৌবনকে মেরেছি। মরা যৌবনের অভিশাপ আমাকে লেগেছে’। ধ্বজাপূজার দণ্ড তিনি নিজ হাতে ভেঙে ফেললেন, ছিঁড়ে ফেললেন ওর কেতন। শেষতক রাজা বলছেন, ‘এখনো অনেক ভাঙা বাকি, তুমিও তো আমার সঙ্গে যাবে নন্দিনী, প্রলয়পথে আমার দীপশিখা?’ নন্দিনী বলছে, ‘যাব আমি’। এদিকে কুন্দফুলের মালা বর্শার আগে বেঁধে সর্দার এগিয়ে আসছে। নন্দিনী বলছে ‘ঐ মালাকে আমার বুকের রক্তে রক্তকরবীর রং করে দিয়ে যাব’। এদিকে কারিগররা বন্দিশালা ভেঙে ফেলেছে। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, নন্দিনীর জয়!

বাস্তববাদকে খারিজ করে অ-স্বভাববাদী আঙ্গিকে রূপক নাটকের যে-খোঁজ রবীন্দ্রনাথ করছিলেন, সে-দিক থেকে দেখলে রক্তকরবী-র স্থান হবে মধ্যবর্তী পর্যায়ে। এখানে পাশাপাশি দুটি ঘরানা— বাস্তববাদ ও রূপকসাহিত্য— বহাল থেকেছে। এমনকি, এই দুই ধারার মধ্যে সংঘাতও ঘটেছে নাটকে। নন্দিনী যে রক্তমাংসর মানুষ নন, তিনি যে কোনও কিছুর প্রতীক— নাটকের গোড়াতেই নানাভাবে সে-কথা বুঝিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ। রঞ্জন নামের সঙ্গে পরিচিত হবার সময়েই পাঠক/ দর্শক বুঝতে পারেন— নন্দিনীর মতো রঞ্জনও প্রতীকী চরিত্র, বাস্তব চরিত্র নয়। রাজা আগাগোড়াই রহস্যময়; কখনওই তাকে বাস্তব চরিত্র বলে মনে হয় না। রক্তকরবী শুধু এই তিনটি চরিত্রকে নিয়ে লেখা নয়। নন্দিনী, রঞ্জন আর রাজা ছাড়া বাকি সব চরিত্র সরাসরি আমাদের চেনাজানা জগৎ থেকে উঠে আসে। তাদের নির্দিষ্ট পেশারও উল্লেখ করেন নাট্যকার। চন্দ্রা, ফাগুলাল, বিশু, কিশোর, সর্দার, গোঁসাই— সকলেই আমাদের পরিচিত জগতের মানুষ। বলা চলে, এরা প্রতিনিধিমূলক (typical) চরিত্র। এছাড়া, রক্তকরবী-তে বাস্তববাদী ঘরানার কাঠামোও ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথ। রক্তকরবী-তে বাস্তববাদের আধারে কয়েকটি রূপক চরিত্র নিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু, বাস্তববাদ কিছু শর্ত আরোপ করে, যা থেকে রবীন্দ্রনাথও রেহাই পান না। সুতরাং নাটক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে নন্দিনীকে আবার একটি ‘সাধারণ’ চরিত্র হিসেবেও দেখানোর দরকার পড়ে। পুরোপুরি রূপক চরিত্রের হলে অন্যদের সঙ্গে তার কথা বলা সম্ভব ছিল না। তাই ফাগুলালকে বলতে হল, নন্দিনীকে আগে থেকে চিনতেন বিশু (“বিশুর বিপদ আজ ঘটে নি, এখানে আসবার অনেক আগে থাকতেই নন্দিনীকে জানে”)। রাজা ছাড়া অন্য চরিত্রর সঙ্গে কথা বলার সময় নন্দিনীকে রক্তমাংসর মানুষের মতো করে হাজির করতে হয়। সর্দার, অধ্যাপক, গোঁসাই আর পালোয়ানের সঙ্গে যে-নন্দিনী কথা বলে, তার সঙ্গে নাটকের প্রথম অংশের নন্দিনীর মিল খুবই কম। দু-একটি সংলাপের দিকে তাকালেই ব্যাপারটি বোঝা যাবে। নন্দিনী কখনও রূপক আবার কখনও বাস্তব চরিত্র হওয়ায় বাস্তববাদের সাধারণ শর্তগুলি পূরণ হয় না। তাই গোটা নাটকে চোখে পড়ে তাঁর চরিত্রে নানা অসঙ্গতি। রক্তকরবী-র প্রথম ও শেষ অংশের নন্দিনীর সঙ্গে নাটকের মাঝের অংশর নন্দিনীর বিস্তর ফারাক থেকে যায়। একই ব্যাপার ঘটে রঞ্জনের বেলায়। রঞ্জন যে একজন ‘মানুষ’, তা সর্দার আর মোড়লের কথাবার্তা মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেন নাট্যকার। এমনকি, রঞ্জনকে রাজার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও রবীন্দ্রনাথকে মেনে নিতে হল বাস্তববাদের শর্ত। তারপরও বলা যায় রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী যেন পৃথিবীর সকল জ্ঞানময় মানুষের প্রতিনিধি– যে সব মানুষ জীবনকে চাহিদা দিয়ে নয়– বরং আনন্দ দিয়ে অনুভব করতে শিখেছে। ‘রক্তকরবী’ নাটকটিকে সমকালীন গভীরতায় নানাভাবে অনুভব করতে করতে সেই সময়ের সাথে আজকের সময়কে প্রত্যক্ষ করে। ক্রমবর্ধমান সংকট ও অস্থিরতার মধ্যে মানুষের কান্না ও মিতস্বর ‘রক্তকরবী’ নাটকের নন্দিনীর অস্তিত্বকেই খোঁজে ফেরে নিরন্তর।

তথ্যঋণ:
রবীন্দ্রনাট্যপ্রবাহ [পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ], প্রমথনাথ বিশী, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি।
রক্তকরবী: আলোকিত উদ্ভাসন, সন্তোষ কুমার মণ্ডল সম্পাদিত, উদ্দালক সাহিত্য প্রকাশন।
রক্তকরবী: পাঠ ও পাঠান্তরের ভাবনায়, মলয় রক্ষিত, দে’জ পাবলিশিং।

চিত্রণ: অরুণাভ মজুমদার

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গা মাঈ কী! জয়!

ঢাকা বা সমগ্র বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজোর চাঁদা আদায়ের চল খুব একটা নেই। মণ্ডপে এসেই পাড়ার লোক চাঁদা দেন। জবরদস্তি করে চাঁদা আদায়ের যে বীভৎসতা কলকাতা তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আছে, তা অন্তত ঢাকা আর বরিশালে দেখিনি। পুজোর দিনেও অনেকে এসে প্যান্ডেলের পাশে চাঁদা আদায়কারীদের টেবিলের সামনে এসে চাঁদা দিয়ে যান। পাড়ার হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। স্বেচ্ছায় এসে চাঁদা দিয়ে যান। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

Read More »