Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

মৃত্যুফাঁদ ও বিলাবল ঠাট

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে
বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।
সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন
অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার
ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা
শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,
অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

এযাবৎ নিষ্পলক কুয়াশার রাতদিন কড়চায়
ছিল বেসামাল গরমিল, এবার আর মিলবে না রেহাই।
ওই শোনো মুহুর্মুহু পড়ছে তেহাই, পাহাড়প্রমাণ অসঙ্গতি।

তাম্রশাসনের চোরাদৃষ্টি পাকদণ্ডী ঘুরতে নারাজ
তাই বুক চিরে, ফালা করে তুলে আনা হল গহ্বর।
তার অতলে সহস্রতন্ত্রীর অন্তঃসলিলা—
অভিমান চুইয়ে পড়ছে অগোচরে।

অথচ যে নিস্তরঙ্গ জনপদ তামাদি হয়ে এতদিন টিকে ছিল
আপন খেয়ালে, আজ তাকে বিবাগী উতরাইয়ে
জলাঞ্জলি দিতে হবে সবটুকু, তেমনটাই আকাশবাণী।

তাই, চারপাশজুড়ে নাগপাশে মুড়ে ফেলা হয়েছে পাথুরেপ্রাণ
চলছে ইমারতে তাল ঠোকাঠুকি, সভ্য-ভব্য-সভ্যতায় শান।
শাল সেগুন পাইনের কবরে বাঁধা হয়েছে রঙিন মলাট
ঈগল আজ বাবুটি সেজে ভেঁজে চলেছে বিলাবল ঠাট।
অথচ চঞ্চুর কোণে লেগে আছে রক্ত জমাট!

চারদিকে মৃত্যুফাঁদ, গোল গোল কথাদের কূপ
সারে সারে যূপকাঠ গজিয়েছে যেখানে, নাগরিক জীবন
সেপথেই গড়িয়ে চলেছে যন্ত্রবৎ নিশ্চুপ।

**

শব্দকল্প

বিসর্জনের জল নিঙড়ে তুলে এনেছি তোমায়—
তুমি ব্রহ্মেরও অকাল-অতীত শব্দ।
যে কবিতাঘরখানা ভেঙে তলিয়ে গিয়েছ সেদিন
দেখো তার কালবেলাজুড়ে দাঁড়িয়ে মহাশূন্যের কাটাকুটি
আর কিছু বন্ধ্যা সহস্রাব্দ।

আজও জানি না উদ্ধত কালপুরুষের ফণায়
কতবার ফালা হয়েছে তোমার দেহ?
ক’খানা মলাটে ধরা দিয়েছ তুমি?
অথবা ক’টা গ্রন্থে পরিপূর্ণ তোমার গর্ভ।
অথচ পাতাঝরা চৈত্রের খেয়ালি কবি
আজও হা-পিত্যেস করে মরে, এখনও অতৃপ্ত তার সঙ্গম-সন্দর্ভ।

সেই ক্ষয়ে যাওয়া কাঠামোয়
আবার মেলে ধরেছি আমি খসে যাওয়া নির্মোক।
শোকস্তব্ধ অশান্ত সময়ের মলিন প্রহরে
তার বিভঙ্গ কোনও পরিণতি পাবে কিনা জানি না,
অথবা আবাহন রাগের গমক
শরীরজুড়ে প্রশান্তি ছড়াবে কিনা, তাও জানা নেই।

শুধু জানি শব্দরা জাল বোনে, মহাকালের অনুরণনে
সে ইন্দ্রজাল আবারও গড়বে অক্ষয় শব্দের বুনিয়াদ।

***

পারিজাতের ছোঁয়া

একটা পারিজাতের ছোঁয়া আমারও চাই,
যার শিশির ধোওয়া আশ্বাস আনবে নতুন সকাল,
যে রাঙা শরীরের নরম আবেশ আতুর বুকে
এঁকে দেবে দীর্ঘ প্রশ্বাসের সোহেলা।

একটা পারিজাত হোক আমার, একান্ত আমার।
যার উদার নদীতে লীন হয়ে যাবে পৃথিবীর
ছন্নছাড়া সব কাঁটাতার। আর ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না জুড়োবে
ভরা জঠরের নন্দিত কামোদে।

এমন একটা পারিজাত চাই ভীষণভাবে
আমার, আমাদের সকলের।
যার উজল স্নিগ্ধতায় শীতল হবে
অর্বুদ কুরুক্ষেত্রের শোণিত-দগ্ধ বুক।
স্তব্ধ হবে সবুজের কর্কট যন্ত্রণা।

অসম্ভব শান্তির সে পারিজাত নেমে আসুক
অস্থির পৃথিবীর বুকে, পারিজাত-সুখে
হিন্দোল কলতানে জাগুক জীবনের ছন্দ।
রন্ধ্র-রন্ধ্র বয়ে যাক পূর্ণতা, ক্ষীরসাগরের আনন্দ।

চিত্রণ: মনিকা সাহা

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =

Recent Posts

দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »