মৃত্যুফাঁদ ও বিলাবল ঠাট
দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে
বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।
সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন
অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার
ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা
শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,
অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!
এযাবৎ নিষ্পলক কুয়াশার রাতদিন কড়চায়
ছিল বেসামাল গরমিল, এবার আর মিলবে না রেহাই।
ওই শোনো মুহুর্মুহু পড়ছে তেহাই, পাহাড়প্রমাণ অসঙ্গতি।
তাম্রশাসনের চোরাদৃষ্টি পাকদণ্ডী ঘুরতে নারাজ
তাই বুক চিরে, ফালা করে তুলে আনা হল গহ্বর।
তার অতলে সহস্রতন্ত্রীর অন্তঃসলিলা—
অভিমান চুইয়ে পড়ছে অগোচরে।
অথচ যে নিস্তরঙ্গ জনপদ তামাদি হয়ে এতদিন টিকে ছিল
আপন খেয়ালে, আজ তাকে বিবাগী উতরাইয়ে
জলাঞ্জলি দিতে হবে সবটুকু, তেমনটাই আকাশবাণী।
তাই, চারপাশজুড়ে নাগপাশে মুড়ে ফেলা হয়েছে পাথুরেপ্রাণ
চলছে ইমারতে তাল ঠোকাঠুকি, সভ্য-ভব্য-সভ্যতায় শান।
শাল সেগুন পাইনের কবরে বাঁধা হয়েছে রঙিন মলাট
ঈগল আজ বাবুটি সেজে ভেঁজে চলেছে বিলাবল ঠাট।
অথচ চঞ্চুর কোণে লেগে আছে রক্ত জমাট!
চারদিকে মৃত্যুফাঁদ, গোল গোল কথাদের কূপ
সারে সারে যূপকাঠ গজিয়েছে যেখানে, নাগরিক জীবন
সেপথেই গড়িয়ে চলেছে যন্ত্রবৎ নিশ্চুপ।
**
শব্দকল্প
বিসর্জনের জল নিঙড়ে তুলে এনেছি তোমায়—
তুমি ব্রহ্মেরও অকাল-অতীত শব্দ।
যে কবিতাঘরখানা ভেঙে তলিয়ে গিয়েছ সেদিন
দেখো তার কালবেলাজুড়ে দাঁড়িয়ে মহাশূন্যের কাটাকুটি
আর কিছু বন্ধ্যা সহস্রাব্দ।
আজও জানি না উদ্ধত কালপুরুষের ফণায়
কতবার ফালা হয়েছে তোমার দেহ?
ক’খানা মলাটে ধরা দিয়েছ তুমি?
অথবা ক’টা গ্রন্থে পরিপূর্ণ তোমার গর্ভ।
অথচ পাতাঝরা চৈত্রের খেয়ালি কবি
আজও হা-পিত্যেস করে মরে, এখনও অতৃপ্ত তার সঙ্গম-সন্দর্ভ।
সেই ক্ষয়ে যাওয়া কাঠামোয়
আবার মেলে ধরেছি আমি খসে যাওয়া নির্মোক।
শোকস্তব্ধ অশান্ত সময়ের মলিন প্রহরে
তার বিভঙ্গ কোনও পরিণতি পাবে কিনা জানি না,
অথবা আবাহন রাগের গমক
শরীরজুড়ে প্রশান্তি ছড়াবে কিনা, তাও জানা নেই।
শুধু জানি শব্দরা জাল বোনে, মহাকালের অনুরণনে
সে ইন্দ্রজাল আবারও গড়বে অক্ষয় শব্দের বুনিয়াদ।
***
পারিজাতের ছোঁয়া
একটা পারিজাতের ছোঁয়া আমারও চাই,
যার শিশির ধোওয়া আশ্বাস আনবে নতুন সকাল,
যে রাঙা শরীরের নরম আবেশ আতুর বুকে
এঁকে দেবে দীর্ঘ প্রশ্বাসের সোহেলা।
একটা পারিজাত হোক আমার, একান্ত আমার।
যার উদার নদীতে লীন হয়ে যাবে পৃথিবীর
ছন্নছাড়া সব কাঁটাতার। আর ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না জুড়োবে
ভরা জঠরের নন্দিত কামোদে।
এমন একটা পারিজাত চাই ভীষণভাবে
আমার, আমাদের সকলের।
যার উজল স্নিগ্ধতায় শীতল হবে
অর্বুদ কুরুক্ষেত্রের শোণিত-দগ্ধ বুক।
স্তব্ধ হবে সবুজের কর্কট যন্ত্রণা।
অসম্ভব শান্তির সে পারিজাত নেমে আসুক
অস্থির পৃথিবীর বুকে, পারিজাত-সুখে
হিন্দোল কলতানে জাগুক জীবনের ছন্দ।
রন্ধ্র-রন্ধ্র বয়ে যাক পূর্ণতা, ক্ষীরসাগরের আনন্দ।
চিত্রণ: মনিকা সাহা






One Response
Osadharon,Khub bhalo