Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নবান্নের চাল তুলাইপাঞ্জি

আজ নবান্ন। রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার মানুষের অধিকাংশ বাড়িতে আজ নতুন তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত রেঁধে সেটা দিয়েই নতুন চালের নবান্ন হবে। ‘নবান্ন’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নবান্ন উৎসব হল নতুন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি চালের প্রথম রন্ধন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান ওঠার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। একসময় গোটা বাংলায় সাড়ম্বরে নবান্ন উদ্‌যাপন হত। ঘরে ঘরে বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে সমাদৃত ছিল নবান্ন।

তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত যাঁরা একবার খেয়েছেন, হয়তো কোনওদিনই এই চালের ভাতের স্বাদ ভুলতে পারবেন না। বিশেষ করে এই চালের তৈরি ভাতের অপূর্ব সুগন্ধের কথা। সাদা পেঁজা মেঘের মত দেখতে হয় এই তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত। সুন্দর সাদা সাদা আর সঙ্গে অপূর্ব সুগন্ধ। রান্না করার সময় তুলাইপাঞ্জি চালের অপূর্ব সুগন্ধে সারা বাড়ি ম ম করে। যেখানে এই চালের ভাত রান্না হয়, বাড়ির লোকেরা তো বটেই, এমনকি পাড়া-পড়শিরাও এই গন্ধে মালুম করতে পারেন এই বাড়িতে তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত রান্না হচ্ছে।

কথিত আছে, রায়গঞ্জ এলাকার মোহিনীগঞ্জ এলাকায় এক বুড়ি থাকতেন। সেই বুড়ির পাকা সাদা চুল হাওয়ায় উড়ত যখন, তখন মনে হত আকাশের মেঘ যেন মাটিতে নেমে এসেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে, সেই বুড়ি নাকি নিজের জমির কিছু অংশে বহু যুগ আগে একধরনের ধানের বীজ রোপণ করে সেই ধান থেকে চাল তৈরি করেছিলেন। সেই চালের নামই তুলাইপাঞ্জি। পরে অবশ্য এই ধান উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহকুমার একটি বিশেষ এলাকাতেই চাষ হত।

তুলাইপাঞ্জি মূলত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মহকুমা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি অংশে উৎপাদিত হয়। বাংলার সেরা এই সুগন্ধী চালের পেটেন্ট নিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। তুলাইপাঞ্জি চালকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার, ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে যোগদানকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের জন্য আয়োজিত তিন দিনের ফুড ফেস্টিভ্যালে এই চাল প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়। সেখানে তুলাইপাঞ্জি চাল ভর্তি মুখ সেলাই করা ব্যাগও বিক্রি হয়েছিল।

Tulaipanji Rice উত্তর দিনাজপুর মোহিনীগঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল

তুলাইপাঞ্জি চালের চাহিদা তো এখন জেলা ছাড়িয়ে অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে। রায়গঞ্জের বিভিন্ন বাজারে ঘুরলেই চোখে পড়ে, চালের দোকানগুলিতে সিমেন্টের বস্তার আকারের প্লাস্টিকের ব্যাগে তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রির জন্য রাখা রয়েছে। রায়গঞ্জে কেউ ঘুরতে এলে বা কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে এলে বাড়ি ফেরার পথে এক ব্যাগ তুলাইপাঞ্জি চাল কিনে নিয়ে যান। এই ব্যাগে থাকে ৫০ কেজি চাল। তবে একটু বিশ্বাসযোগ্য দোকান থেকে না কিনলে ক্রেতার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

রায়গঞ্জের মাটির বিশেষ গুণ এবং অনুকূল আবহাওয়া এই তুলাইপাঞ্জির মত সুগন্ধী চাল চাষের পক্ষে অনুকূল। তবে এই একই আবহাওয়া জেলার অনেক জায়গাতেই থাকে বলে কৃষি দফতর উত্তর দিনাজপুর জেলার অনেক জায়গাতেই তুলাইপাঞ্জি চাল চাষ করার জন্য কৃষকদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। বিশেষ করে ইসলামপুর মহকুমার কয়েকটি ব্লক এলাকায়। যেমন, গোয়ালপোখর ব্লক। এই এলাকাটি ১৯৫৬ সালে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এখানকার আবহাওয়া প্রায় রায়গঞ্জের মত হওয়ার কারণেই এই পরীক্ষামূলক চাষের চেষ্টা। তবে রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল এখন এককথায় জগদ্বিখ্যাত!

মূলত, জুলাই মাস নাগাদ জমিতে তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ রোপণ করা হয়। ধান ওঠে নভেম্বর মাসের গোড়াতেই। জমিতে সাধারণ আমন ধানের মতই দেখতে এই তুলাইপাঞ্জি ধানের গাছ। আর একইভাবে ধান ঝেড়ে সেটা থেকে চাল তৈরি করা হয়। সেই ধান থেকে চাল তৈরি করে সেই চালের নবান্ন হয় অগ্রহায়ণ মাসে।

চিত্র: গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »