দুর্গাপুজো সর্বদা শারদ নয়
পৃথিবীতে যত জনগোষ্ঠী আছে, প্রত্যেকের বার্ষিক ধর্মীয় আনন্দোৎসব আছে। বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা, মুসলমানদের ইদ, খ্রিস্টানদের বড়দিন, তেমনই বাঙালি হিন্দুদের দুর্গাপুজো। এখানে মিল ও পার্থক্য দুটোই আছে। মিলটা তো বোঝা গেল, পার্থক্যটা? অন্য সব মহোৎসব সেই সেই ধর্মপ্রবক্তাদের কেন্দ্র করে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুদের উদযাপন দেবতাকেন্দ্রিক। তাই তামিল হিন্দুরা তাঁদের সেরা উৎসবরূপে পালন করেন পোঙ্গল, পাঞ্জাবিরা বৈশাখী, অসমিয়ারা বিহু, গুজরাতের লোক নবরাত্রি, কেরালাবাসীরা ওনাম, মারাঠীরা গণেশচতুর্থী, বা তেলুগুভাষীরা য়ুগাদি।
বহু বিবর্তনের পথ বেয়ে আজ দুর্গাপুজো বাঙালির আপন হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বাল্মীকিতে ছিল না, কৃত্তিবাস দেবী দুর্গার অকালবোধন আনলেন। যা ছিল একদা কৃষকের শস্যকেন্দ্রিক যাপন, তা প্রথমে ধনীদের, পরে ‘সর্বজনীন’-রূপে আমজনতার আরাধ্য হয়ে উঠল। একচালা মূর্তির পরিবর্তন এল, লক্ষ্মী সরস্বতী গণেশ ও কার্তিককে আলাদা রেখে। আর এখন চলছে থিম পুজোর কাল। খুঁটিপুজো-ও নতুন সংযোজন।
বিবর্তন আসুক, স্বাগত তাকে। পুজোর ক’টি দিন আনন্দে আমোদে রঙিন হয়ে উঠুক মানুষ। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় একদিকে, অন্যদিকে পুজোয় কাছে-দূরে বেড়াতে যাওয়া, চলুক। কানাডা থেকে ত্রিনিদাদ, জার্মানি থেকে কেনিয়ার বাঙালি আত্মপরিচয় লাভ করে নিজ সংস্কৃতির, করুক। শারদীয় পত্রপত্রিকার ঢল নামে এই শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে, নামুক। সারা বছরের জীবনীশক্তি অর্জিত হয় উৎসবের মধ্যে দিয়ে। বাণিজ্য হয় কোটি কোটি টাকার, যার মূল্য নিতান্ত উপেক্ষণীয় নয়।
কলকাতা পুজোর ঠিক আগে বন্যায় ভাসল, করুণ মৃত্যু হল দশজনের, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় কোটি কোটি টাকার বই জলে ভিজে প্রকাশকদের বিশাল ক্ষতি করে দিয়ে গেল। নাগরিক জনজীবন চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল বেশ কয়েকদিন। বহু পুজো-প্যান্ডেল বিধ্বস্ত! তাইতে পুজো এবার সার্বিক আনন্দ দিতে পারবে না।
তবুও শারদলক্ষ্মী আসছেন প্রতি বছরের মতো। একটি সংশোধনী। দুর্গাপুজো কিন্তু সর্বদা শারদ নয়, কেন না একবছর তা আশ্বিনে হয়, পরের বছর কার্তিকে, অর্থাৎ হেমন্তে। তবু শারদীয়া পূজা! হ্যাঁ, আর্ষপ্রয়োগ এটা।
সকলের জন্য শারদীয় শুভেচ্ছা।
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়,
সম্পাদক, ভালভাষা