ঔজ্জ্বল্যময় মহানগরী। বাজারহাট ও শপিংমলের জমজমাট রোশনাই শহরের কান্তি শতগুণ বাড়িয়ে তোলে। তবে চারিদিকের ব্যস্ততা মানুষের মনে এই আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকতে দেয় না— সেই মনে অবস্থান করে স্বার্থপরতা ও অহংকারের নিকষ কালো ছায়া।
আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব সম্পূর্ণরূপে লোপ পায় না, মন থেকে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে— তাদের মন সরল বলেই হয়তো সেখানে দয়ামায়া ও ভালবাসার প্রদীপটা খুব সহজে নেভে না। এর দৃষ্টান্ত হিসেবেই একটা গল্প জানা যাক তা হলে।
অফিস চত্বরের পাকা সড়ক। সবার গতি ব্যস্ত সেখানে, কারও কোনও দিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র সময় নেই— সবাই ছুটছে। সেই ব্যস্ততায় ভরা পথের ধারেই এক ভিখিরি রোজ হাত-পেতে বসে থাকেন, বাঁচার আশায়। তবে ওই যে বললাম, ঘুরে তাকানোর সময় কারও নেই— তার জন্যেই ভিখিরির প্রাণধারণ করাটা রোজ একটু বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাঁর মতে, এ বিধির লিখন! তবে তাঁর এই বিশ্বাসও ছিল যে, বিধাতা কখনও কাউকে ফেলে দেন না, তিনি শুধু সঠিক সময়ে সব জুড়িয়ে দেন।
আমাদের গল্পের আদিত্য এখন ক্লাস সিক্সে পড়ে, একাই স্কুলে যায় রোজ। ভিখিরিটির সামনে দিয়েই যায় এবং স্বভাবতই লক্ষ্য না করে। একদিন, যাওয়ার সময় কী জানি কী ভেবে সে ঘুরে তাকাল দরিদ্রের দিকে আর যা দেখল তা দেখে তার মনে একটা তীক্ষ্ম বেদনা অনুভব করল। দেখল, ভিখিরির একটা পা ও একটা হাত নেই। তক্ষুনি সে ফিরে গিয়ে নিজের লাঞ্চ-বক্স খুলে তাকে রুটি-তরকারি সাধল। বৃদ্ধ ভিখিরি প্রথমটিতে দারুণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিত্যকে খুব আশীর্বাদ করে তৃপ্তির সঙ্গে খাবারটা শেষ করলেন। ভিখিরির সাথে দু’একটা কথা বলার পর সে স্কুলের দিকে যাওয়া আরম্ভ করল আবার। মনে মনে ভাবল, আজ না হয় তার একটু দেরিই হল স্কুল পৌঁছতে, না হয় আজ বন্ধুর টিফিন থেকে চেয়ে খেয়ে নিল— কিন্তু তার বদলে একটা মানুষের বেঁচে থাকার খোরাক জুগিয়েছে– অভাগা বৃদ্ধের মনের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম স্থান হলেও সে অর্জন করেছে, এটাই যথেষ্ট।
এর পরের দিন থেকে সে রোজ সেই দরিদ্রের জন্য কিছু না কিছু খাবার ও তার সঙ্গে এক বোতল জল কিনে নিয়ে যেত— পকেটমানি দিয়ে। বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।
তার এই কাজ দেখে আশপাশের লোকজনরাও তারপর থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা শুরু করলেন ভিখিরিটিকে। ব্যস্ততা ও স্বার্থপরতার পর্দা মন থেকে সরিয়ে সেখানে প্রবেশ করল মানবিকতার জ্যোতি।
চিত্রণ: ধৃতিসুন্দর মণ্ডল








V.Good
ক্ষুদ্র লেখিকার ক্ষুদ্র প্রয়াস বেশ প্রশংসনীয়।আশীর্বাদ রইলো।
লেখিকার জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ এবং অভিনন্দন। বাংলা ভাষার প্রতি লেখিকার দক্ষতা, শব্দ চয়ন এবং সর্বোপরি অনুগল্পের সঠিক মানদন্ড বজায় রাখা বিশেষ নৈপুণ্যের দাবি করে। ভবিষ্যতের জন্য লেখিকার প্রতি শুভকামনা রইল।