Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

অনুগল্প: অর্জন

ঔজ্জ্বল্যময় মহানগরী। বাজারহাট ও শপিংমলের জমজমাট রোশনাই শহরের কান্তি শতগুণ বাড়িয়ে তোলে। তবে চারিদিকের ব্যস্ততা মানুষের মনে এই আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকতে দেয় না— সেই মনে অবস্থান করে স্বার্থপরতা ও অহংকারের নিকষ কালো ছায়া।
আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব সম্পূর্ণরূপে লোপ পায় না, মন থেকে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে— তাদের মন সরল বলেই হয়তো সেখানে দয়ামায়া ও ভালবাসার প্রদীপটা খুব সহজে নেভে না। এর দৃষ্টান্ত হিসেবেই একটা গল্প জানা যাক তা হলে।
অফিস চত্বরের পাকা সড়ক। সবার গতি ব্যস্ত সেখানে, কারও কোনও দিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র সময় নেই— সবাই ছুটছে। সেই ব্যস্ততায় ভরা পথের ধারেই এক ভিখিরি রোজ হাত-পেতে বসে থাকেন, বাঁচার আশায়। তবে ওই যে বললাম, ঘুরে তাকানোর সময় কারও নেই— তার জন্যেই ভিখিরির প্রাণধারণ করাটা রোজ একটু বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাঁর মতে, এ বিধির লিখন! তবে তাঁর এই বিশ্বাসও ছিল যে, বিধাতা কখনও কাউকে ফেলে দেন না, তিনি শুধু সঠিক সময়ে সব জুড়িয়ে দেন।
আমাদের গল্পের আদিত্য এখন ক্লাস সিক্সে পড়ে, একাই স্কুলে যায় রোজ। ভিখিরিটির সামনে দিয়েই যায় এবং স্বভাবতই লক্ষ্য না করে। একদিন, যাওয়ার সময় কী জানি কী ভেবে সে ঘুরে তাকাল দরিদ্রের দিকে আর যা দেখল তা দেখে তার মনে একটা তীক্ষ্ম বেদনা অনুভব করল। দেখল, ভিখিরির একটা পা ও একটা হাত নেই। তক্ষুনি সে ফিরে গিয়ে নিজের লাঞ্চ-বক্স খুলে তাকে রুটি-তরকারি সাধল। বৃদ্ধ ভিখিরি প্রথমটিতে দারুণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিত্যকে খুব আশীর্বাদ করে তৃপ্তির সঙ্গে খাবারটা শেষ করলেন। ভিখিরির সাথে দু’একটা কথা বলার পর সে স্কুলের দিকে যাওয়া আরম্ভ করল আবার। মনে মনে ভাবল, আজ না হয় তার একটু দেরিই হল স্কুল পৌঁছতে, না হয় আজ বন্ধুর টিফিন থেকে চেয়ে খেয়ে নিল— কিন্তু তার বদলে একটা মানুষের বেঁচে থাকার খোরাক জুগিয়েছে– অভাগা বৃদ্ধের মনের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম স্থান হলেও সে অর্জন করেছে, এটাই যথেষ্ট।
এর পরের দিন থেকে সে রোজ সেই দরিদ্রের জন্য কিছু না কিছু খাবার ও তার সঙ্গে এক বোতল জল কিনে নিয়ে যেত— পকেটমানি দিয়ে। বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।
তার এই কাজ দেখে আশপাশের লোকজনরাও তারপর থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা শুরু করলেন ভিখিরিটিকে। ব্যস্ততা ও স্বার্থপরতার পর্দা মন থেকে সরিয়ে সেখানে প্রবেশ করল মানবিকতার জ্যোতি।

চিত্রণ: ধৃতিসুন্দর মণ্ডল

Advertisement
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Adriyan Ghosh
Adriyan Ghosh
1 day ago

V.Good

Piyali Roy
Piyali Roy
46 minutes ago

ক্ষুদ্র লেখিকার ক্ষুদ্র প্রয়াস বেশ প্রশংসনীয়।আশীর্বাদ রইলো।

Sukanya Das
Sukanya Das
8 minutes ago

লেখিকার জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ এবং অভিনন্দন। বাংলা ভাষার প্রতি লেখিকার দক্ষতা, শব্দ চয়ন এবং সর্বোপরি অনুগল্পের সঠিক মানদন্ড বজায় রাখা বিশেষ নৈপুণ্যের দাবি করে। ভবিষ্যতের জন্য লেখিকার প্রতি শুভকামনা রইল।

Recent Posts

মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গা মাঈ কী! জয়!

ঢাকা বা সমগ্র বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজোর চাঁদা আদায়ের চল খুব একটা নেই। মণ্ডপে এসেই পাড়ার লোক চাঁদা দেন। জবরদস্তি করে চাঁদা আদায়ের যে বীভৎসতা কলকাতা তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আছে, তা অন্তত ঢাকা আর বরিশালে দেখিনি। পুজোর দিনেও অনেকে এসে প্যান্ডেলের পাশে চাঁদা আদায়কারীদের টেবিলের সামনে এসে চাঁদা দিয়ে যান। পাড়ার হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। স্বেচ্ছায় এসে চাঁদা দিয়ে যান। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও প্রসঙ্গত

সমসময় তাঁকে চেনেনি। বরং সর্বপ্রযত্নে বানচাল করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে তাঁর প্রগতিশীল কাজকর্মকে। এই সময় ও বাঙালি সমাজ-ও কি চিনেছে তাঁকে? তাঁকে তাই শেষ জীবন কাটাতে হল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী থেকে দূরে সাঁওতাল পরগনায়। শেষ বয়সে উপলব্ধি করেছিলেন তিনি, যাদের জন্য তাঁর এই কাজ, সব অপাত্রে দান!

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: দেড়শো বছরের সূচনায়

তাঁকে অনুবাদ করা হয় ভারতীয় নানা ভাষায় নানা সময়ে। তবুও কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ মূল্যায়িত হননি আজ-ও। বেশ কিছু অনুবাদ ছিল তাঁর, প্রথমজীবনে কলকাতা বাসকালে, হিন্দি থেকে ইংরেজিতে, যা হারিয়ে গেছে চিরতরে। বারো বছর রেঙ্গুন-পেরু পর্বে আগুন লেগে পুড়েছে তাঁর আঁকা ছবি, ‘চরিত্রহীন’-এর পাণ্ডুলিপি, পরে আবার যা লেখেন।

Read More »