Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বেঁচে থাকেন মার্কস

কার্ল মার্কস ২০২

কলেজে সবচেয়ে বেশি হাতখরচ করা সেই ছেলেটি।
আর তারপর প্রায় আজীবন চরম অর্থকষ্টে কাটানো সেই ভদ্রলোক।

টগবগে যুবক নব্যহেগেলিয়ান সেই ছাত্র।
মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা হেগেলের তত্ত্বকে পায়ে দাঁড় করানো সেই তাত্ত্বিক।

ছত্রে ছত্রে প্রাচীন গ্রিক রোমান সাহিত্যের উদ্ধৃতি আর চরিত্র ও ঘটনা উল্লেখ করা সেই পণ্ডিত।
সবকিছুকে সন্দেহ করো— এই ছিল যাঁর প্রিয়বাক্য সেই অনুসন্ধিত্সু।

বড় বড় লাইব্রেরিতে বছরের পর বছর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো সেই গবেষক।
রাস্তায় ব্যারিকেড বেঁধে যুদ্ধে সমান উত্সাহী সেই সাহসী যোদ্ধা।

বিয়ারের মাগে তুফান তোলা সেই তার্কিক।
আর মেহনতীদের আন্তর্জাতিক গড়ে তোলার সেই অক্লান্ত সংগঠক।

সভ্যতার গায়ের জমকালো ভালোমানুষির পোশাক একটানে ছিঁড়ে ফেলা সেই বিদ্রোহী।
সমাজের সম্পদে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে লড়াই করা সেই বিপ্লবী।

মানুষের বুদ্ধি শ্রমে গড়ে ওঠা সভ্যতার নতুন ইতিহাসের জনক সেই ঐতিহাসিক।
শুধু ব্যাখ্যা নয়, দুনিয়াকে বদলের ডাক দেওয়া সেই দার্শনিক।

ভগবান আর নিয়তিকে আস্তকুঁড়ে ছুড়ে ফেলা সেই ধর্মদ্বেষী।
কোনও আপ্তবাক্য নয়, নিজের চিন্তার পথ নিজে কাটার শিক্ষা দেওয়া সেই দিশারী।

একটি জীবন
প্রজন্মর পর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে
সুদিনের খোঁজে।
একটি জীবন
কোটি কোটি মেহনতীর ভেসে চলা জীবনের বতিঘর।
একটি জীবন
মুক্তির সংগ্রামে অবিরাম হেঁটে চলার শক্তি।

আজও অর্থনীতির বিপর্যয়ের সময় মানুষ তাঁর লেখাতেই খোঁজে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়।
মহামারীর মুখে দাঁড়ানো পৃথিবীতে আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে তাঁর কল্পিত সমাজের অপরিহার্যতা।

এখনও তিনি শাসকের দুঃস্বপ্ন
তিনি কার্ল মার্কস।

জন্মদিন

লড়াই তো নয় সমন্বয়ের
লড়াই তো নয় সমঝোতার
সব হারানো দলের লড়াই
লড়াই চলে সব জেতার।

মুষ্টিমেয়র মুষ্টি থেকে
লাগামখানি ছিঁড়ে
মুক্তিপথের বার্তা দিলেন
মেহন্নতির ভিড়ে।

Advertisement

ইতিহাসের নতুন ধারা
অর্থনীতির আলো
ব্যাখ্যা তো নয়, বদলানো চাই
চিন্তাটা জমকালো।

দর্শনেরই রাজপ্রাসাদের
সকল আগল খুলে
অস্ত্র করে সর্বহারার
হাতেই দিলেন তুলে।

তিনি মানেই প্রজ্ঞা এবং
পুঁজির সর্বনাশ
শ্রমিক শ্রেণির উত্তরণেই
বেঁচে থাকেন মার্কস।

মন্দভাগ্য মার্কস

হিংসে করার মতো মন্দভাগ্য ভদ্রলোকের

যা তিনি বলেননি,
ভক্তির আতিশয্যে ভক্তরা
সেই কথাগুলোই তাঁর কলমনিঃসৃত বাণী বলেই প্রচার করেন।
যা তিনি বলেছেন,
ঠিক তার উল্‌টো কথা বলাতেই
ভক্তবৃন্দর অপার শান্তি।
যুগে যুগে কালে কালে দেশে দেশে
প্রদেশে প্রদেশে জেলায় জেলায়
পাড়ায় পাড়ায়
কত যে মার্কসবাদ রচিত হল!
কী তাদের বৈচিত্র্য! কী অভিনবত্ব!
সেইসব মার্কসবাদে নৈরাজ্যবাদীরা আছেন, ইউটোপিয়ানরা আছেন,
নারদোনিকরা আছেন, কৃচ্ছ্রবাদীরা আছেন,
খুঁজলে কুলাকপন্থীদেরও পাওয়া যাবে—
কেবল মার্কস অনুপস্থিত।

সত্যিই, হিংসে করার মত মন্দভাগ্য ভদ্রলোকের

ভক্তরা তাঁকে একেবারে পেড়ে ফেলেছেন।
একটা সেন্টহুড বা অবতারত্ব
দিতে পারলেই ভক্তরা খুশি হতেন।
দেওয়ালে দেওয়ালে তো
তিনি সর্বশক্তিমান।
তাঁর লেখা বইপত্তর
আর পাঁচটা ধর্মগ্রন্থর মত
অতিযত্নে রক্ষা করা হয়,
ফুলটুল দিয়ে পুজোও করা হয় হয়তো।
কিন্তু পড়া আর হয়ে ওঠে না।
ধর্মগ্রন্থ কি পড়বার জিনিস?
দেশে কি কথকঠাকুরের অভাব পড়েছে?
“তারপর মার্কস বললেন”,
বলে তাঁরা মার্কসীয় ঠেক আলো করে বসেন।

কেউ কেউ আবার পরমহংস
দুধ আর জল আলাদা করেন,
মার্কসের দর্শনটা ভাল,
কিন্তু অর্থনীতিটা যেন কেমন কেমন।

জানেন তো মিশরে
বহু দোকানেই ক্লিওপেট্রার মাথার খুলি বিক্রি হয়।
কোনও কোনও দোকানে নাকি একই সঙ্গে
সেই রানির ছোটবেলা আর বড়বেলার
করোটি পাওয়া যায়।
সেইসব খদ্দেররাই সম্ভবত
নবীন মার্কস, প্রৌঢ় মার্কস আর প্রবীণ মার্কস নিয়ে
চুলচেরা বিচারে বসেন।

যে মানুষটার প্রিয় বাক্যবন্ধ ছিল,
“সবকিছুকে সন্দেহ করতে হবে”
সেই মানুষটার এত বিশ্বাসী ভক্ত
দেখে খানিক অস্বস্তি হয় বই কী।

সত্যিই, ভদ্রলোকের হিংসে করার মত মন্দভাগ্য ।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 17 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »