Site icon BhaloBhasa

মোহাম্মদ কাজী মামুনের কবিতা

উড়াল পথের যাত্রী

সে ছিল উড়ালপথ এক ভীষণ
আর নারকেল গাছটার সাথে ছিল তার কতকালের গাঁটছড়া।
উড়ালের ধাতব শরীর থেকে যানগুলি যখন ছড়িয়ে দিত হলকা
গাছটা শুকোত একটু একটু করে
আর কেঁদে-কেটে বুক ভাসাত রাত্র গভীর হলেই।

কিন্তু সেদিন কী হল! এল সে দ্রিম দ্রিম শব্দ করে
তারপর উড়তে উড়তে আটকে গেল
গাছটির শাখা-প্রশাখায় আচ্ছা করে।
শহরকে কেউ দেখেছে কভু চড়তে গাছে?
আর উড়াল পথও কি কখনও থেমে থাকে?

কিন্তু সেদিন সে তাকে পেয়ে গেল হাত ছোঁয়াতেই,
আর আলতো করে টেনেটুনে দিলে
খয়েরি বুক-জামা থেকে বেরিয়ে আসা
থোকা থোকা সবুজ স্তন।
লম্বাটে মুখে যার অনেক কোমল খাঁজ,
পাতার শিরায় শিরায় চুমুর নিবিড় ভাঁজ।
ফলগুলো তখনও পার করেনি কৈশোর
সোঁদা গন্ধ, রসালো শাঁসের ভারে টইটুম্বুর।

এদিকে পথটি তখন কাঁপছে থেমে থেমে
যেথায় সে বেলা হলেই সে উঠে পড়ে আস্তে করে
আর তারপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অনন্তকাল
কোন এক সিগনালের প্রবল প্রতীক্ষায়।
ঠিক যখুনি বাতিরা সব যায় আউটিংয়ে
আর ঘ্যাড়ঘ্যাড়ে ইঞ্জিনের নামে নিদ
রুদ্ধশ্বাস ছুটতে ছুটতে শহরের এই পুলের পরে
যাত্রীদল এসে দাঁড়ায় গনগনে সূর্যকে মাথায় করে।
শরীরের রস বন্যার তোড়ে ভেসে গেলে
গাছের ছায়ায় জিরোয় তারা হেলে গিয়ে
ঘন নিশ্বাসের আশ মিটিয়ে পোহায় রোদ
তারপর জলের বাষ্পে ছেয়ে ফেলে নোনা চরাচর।

বেতার কাঁপতে থাকতে দশ নম্বর সাইক্লোন সংকেতে
কিন্তু হঠাৎই জ্বলে ওঠে সিগনাল বাতির রক্তস্রাব
দীর্ঘ পাতার সারি পিছু ধাওয়া করেও অবশেষে থেমে পড়ে
আর সে সরসর করে নামতে থাকে ভীষণ সেই উড়াল হতে।
পেছনে গাছেরা ফুলে ফুলে ফের গর্ভবতী
থোকা থোকা ফলের জন্ম, গন্ধ ও স্বাদহীন
সেই যাত্রী যখন চলমান কোনও জট ছাড়া
গাছেদের তখন ফের উড়ালপথের গাঁটছড়া।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়