Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

দেশীয় বাংলা গালাগালি

ভাল কাজ করলেও গালাগালি, আর মন্দ কাজ করলে তো কথাই নেই। অন্নপ্রাশনের ভাত পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, এমনই দেশীয় বাংলা গালাগালির তেজ! শব্দ যে ব্রহ্ম, হাড়ে হাড়ে মালুম হবে আপনার, যদি গাল খান। আর যিনি দেন, তিনি চরম আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, যা দিয়েছি না মাইরি! এঃ! এই ‘মাইরি’ কোনও গালি নয়। কথাটি এসেছে ‘বাই মেরি’ (by Mary) থেকে। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাই বলছেন। তবে মাইরি মাইরি করে শুরু করি ঋগ্বেদ থেকেই।
ঋগ্বেদের যুগে যাঁরা যজ্ঞ করতেন না, তাঁদের পরিচয় হয়ে যায় ‘অসুর’। প্রথম দিকে দেব ও অসুরদের মধ্যে সদ্ভাব থাকলেও পরে তাঁদের মধ্যে শত্রুতা থেকে যুদ্ধ পর্যন্ত হয়। দেবতাদের নেতা বধ করেন বৃত্রাসুরকে। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল (১০/১৩৮/৩) থেকে জানা যাচ্ছে, ইন্দ্র পিপরু অসুরের দুর্গ ধ্বংস করে দেন। শত্রুতা তৈরি হওয়ার পর থেকে ‘অসুর’ শব্দটি গালাগালি অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে।
সপ্তসিন্ধুর দেশে ইন্দ্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর্যরা মন দিয়েছিলেন মধ্য ভারত জয়ে। কিন্তু সেখানে গোপালক রাজা দেবকীনন্দন কৃষ্ণের কাছে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হল আর্য সেনাপতি ইন্দ্রকে। কৃষ্ণের কাছে অশ্বারোহী বাহিনী না থাকলেও এমন এক সুরক্ষিত স্থান বেছে নিয়ে সেখান থেকে তিনি যুদ্ধ শুরু করলেন যে, ইন্দ্রের কোনও কৌশল সেখানে খাটল না। বৃহস্পতির সাহায্যে কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান ইন্দ্র। এই তথ্য রয়েছে ঋগ্বেদের কয়েকটি সূত্রে (৮/৯৬/১৩-১৫)। আসলে, ইন্দ্রের যজ্ঞ-সংস্কৃতি ও আধিপত্য মানতে চাননি কৃষ্ণ আর তাই এই যুদ্ধ।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধরত কৃষ্ণ আর মহাভারতের চিরপরিচিত কৃষ্ণ এক ব্যক্তি নন। তা হলে আমরা ঋগ্বেদ ও মহাভারত অনুসারে দু’জন কৃষ্ণকে দেখতে পাচ্ছি। ঋগ্বেদের কৃষ্ণ আর মহাভারতের কৃষ্ণ। আর যুদ্ধ যখন হয়েছে, তখন কি আর গালাগালি বাদ থাকে! তবে ঋগ্বেদে তার কোনও উল্লেখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবে হওয়াটাই তো সম্ভব!
ভাগবতের দ্বিতীয় স্কন্ধের সপ্তম এবং চতুর্থ স্কন্ধের উনবিংশ অধ্যায়ে জৈন বৌদ্ধ তান্ত্রিক ধর্মকে ‘পাষণ্ড’ বলা হয়েছে। জগাই-মাধাই এমনই ‘পাষণ্ড’ বলে পরিচিত।
বাংলা গালাগালির দীর্ঘ ইতিহাস কেবল ভাষা নয়, বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিবর্তনের সঙ্গেও জড়িত। ভাষাবিদ থেকে গবেষকরা এই বিষয়টিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। যেমন, ভাষাবিদ বেন জিমার (Ben Zimmer) জানাচ্ছেন, ঐতিহাসিক দিক থেকে গালিকে চিহ্নিত করা ভীষণ কঠিন, কারণ এটি লিখিত রূপ পাওয়ার অনেক আগে থেকেই কথ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে শব্দের অর্থ বদলে যেতে পারে এবং নতুন শব্দ প্রবেশ করতে পারে, যা প্রক্রিয়াটিকে জটিল করে তোলে। অন্যদিকে, গবেষক গ্রিনের মতে, স্ল্যাং (slang) হল ভাষার একটি অংশ, যা নিজের বক্তব্য তুলে ধরার একটি চটজলদি ও সৎ উপায়। প্রাথমিকভাবে নিজেদের কথাবার্তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আড়াল করতে অপরাধীদের মধ্যেই গালি ব্যবহৃত হত।
এবার আসা যাক শব্দের ব্যুৎপত্তি বিষয়ে। ‘গালি’ শব্দটি সংস্কৃত ‘গাল্ + ই-তু. আ.’ থেকে এসেছে। অনেক বাংলা গালির মূলে রয়েছে ফারসি, উর্দু বা অন্যান্য ভাষার প্রভাব। পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষাতেই গালাগালি রয়েছে। বলতে গেলে, এটি মানুষের কথ্যভাষার এক স্বাভাবিক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাগ, হতাশা, ঘৃণা তো বটেই, এমনকি কখনও কখনও স্নেহ প্রকাশ করতেও গালাগালির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আমি জানি, কলকাতার এক কোম্পানির মালিক মাঝে মাঝে তাঁর কর্মচারীদের স্নেহমিশ্রিত গালি দিতেন ‘হারামি’ বলে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যেও গালাগালির নমুনা দেখা যায়, যা আধুনিক বাংলা গালাগালির বিবর্তনের একটি ধারণা জন্মে। এই সময়ের গালাগালিগুলি প্রায় ক্ষেত্রেই সামাজিক শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম বা শারীরিক অক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল।
যেমন, মনসামঙ্গল কাব্যে চাঁদ সদাগর ‘চ্যাংমুড়ি কানী’ বলে গালাগালি দিতে দেখি। আবার কালকেতু নিজেকে ‘রাঁড়’ বলছেন। বাংলায় বিধবা নারীকে বলে ‘রাঁড়ী’, যা স্থানীয় ভাষায় হয়েছে ‘নাড়ী’। এ নাড়ী শরীরের ‘নাড়ি’ নয়, রাঁঢ় থেকে রাঁঢ়ি এবং তারপর চলতি কথায় ‘নাড়ি’। ব্যঙ্গার্থে ‘নেড়ি’। গালাগালিতে স্থানীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন, বীরভূমের শৈবক্ষেত্র বক্রেশ্বরের আশেপাশের মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে ‘নামুনে বক্রেশ্বরে’! এখানে বক্রেশ্বর শ্মশানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সোজা কথায়, মৃত্যু কামনা করা। ‘নামুনে’ মানে নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যু কামনা করা।
আমার দেখা একটি ঘটনা মনে পড়ছে। এক বয়স্কা মহিলা গালাগালি দিতে গিয়ে বলছেন, ‘তু আমার সিঁথিতে বসবি লো!’ আসলে, মহিলাটি ছিলেন বিধবা। এভাবে তিনি শত্রুর বৈধব্য কামনা করছেন। এই এলাকায় আরেকটি গালাগালি প্রচলিত আছে। তা হল, বাবার লাগরাজ পেয়েছিস, যা খুশি তাই করবি? আসলে এটি হচ্ছে ‘লাখেরাজ সনদ’। লা + খিরাজ= লাখেরাজ। মানে চিরকাল ভোগ্য সম্পত্তি। এর পিছনে রয়েছে ইতিহাস। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর বীরভূমের প্রশাসনিক কেন্দ্র রাজনগরের ‘বীর রাজা’ বলে জনগণের কাছে পরিচিত বসন্ত চৌধুরী, বক্রেশ্বর শিবের সেবা পুজোর জন্য বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের কাছে আমড়াই গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণদের এনে এই লাখেরাজ সনদের মাধ্যমে হাজার বিঘে নিষ্কর জমি দিয়ে পাণ্ডা হিসেবে বসিয়েছিলেন। সেই লাখেরাজ এখন ‘লাগরাজ’ হয়ে গালাগালির উপাদান।
শুধুমাত্র কোনও ব্যক্তিকে হেয় করার জন্য নয়, কখনও কখনও গোষ্ঠী বা জাতিকে অবমাননার উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হত গালি। এভাবেই ‘ছোটলোকের জাত’, ‘খেঁড়ো খেকো চাষা’, ‘মরিচ কাটা বেনে’ কথাগুলি বহুলব্যবহৃত হয়েছে, এখনও হয়। আর মানুষ ছাড়াও ইতর প্রাণীদের নাম ধরেও গালি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। নেড়ি কুত্তা, ডাহালে কুকুর গ্রামের দিকে চালু আছে। গাধার বাচ্চা, খচ্চরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা এসব ইতর প্রাণীদের সঙ্গে তুলনা করে মানুষকেও গালি দেওয়া হয়।
সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গালাগালির অর্থ ও ব্যবহার পাল্টে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন গালি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে, ‘সেকু’, ‘মাকু’, ‘চাড্ডি’, ‘অন্ধভক্ত’, ‘তার কাটা’ বেশ চলছে এখন।
অবৈধ প্রেমের স্থাননামেও স্থান পেয়েছে গালি। যেমন, ব্রিটিশ আমলে এক সাহেব ও এক মেম অবৈধ প্রেম করত নদীর যে চরে, তার নাম হয়ে যায় ‘নাঙ্-ঢেমনির চর’, আর স্থানটির নাম হয় ‘নাঙ্ খানা’, বর্তমানে নাম পাল্টে ‘নামখানা’। ‘নাঙ্’ বা বানানভেদে ‘নাং’ মানে উপপত্নী।
বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মুণ্ডিত মস্তক দেখে তাদের দাগিয়ে দেওয়া হয় ‘নেড়ে’ বলে। স্ত্রী হলে ‘নেড়ি’। ‘এভাবেই ‘নেড়া-নেড়ি’।
চর্যাপদে বাংলাদেশের জনগণের এক অশিষ্ট জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন, সিদ্ধাচার্য কাহ্ন সে সময়কার এমনি এক অশিষ্ট জীবনের ছবি এঁকেছেন। এই চর্যাগীতিতে রয়েছে এক ডোম নারীর সঙ্গে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসীর অবৈধ প্রণয়ের স্বীকারোক্তি:
‘তিন ভুবন আমি হেলায় বেয়েছি।
আমি শুয়েছি মহাসুখ-নীড়ে।
ওলো ডোমনি, কেমন তোর ছেনালি–
একটেরে কুলীনেরা আর মাঝখানে কাবাডি।
তুই, লো ডোমনি, সকল নোংরা করলি–
বিনা কাজে, বিনা কারণে বীর্য টলালি।
কেউ কেউ তোকে কুৎসিত বলে।
বিদ্বানজনেরা তোর কাছে মুখ খোলে না।
ডোমনির বাড়া ছিনাল নাই।’
(অনুবাদ: সুকুমার সেন)
‘ছিনাল’ তো এক ধরনের গালাগালি।
দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘নীলদর্পণ’ নাটকে বলেছেন বেশ কিছু গালাগালির সংলাপ। প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর লেখা ‘তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ’ গ্রন্থেও সাধকের মুখে বেশ কিছু গালাগালির সংলাপ শুনিয়েছেন।
যে পুরুষ বোকা, ব্যর্থ, লোক তাকে বলে ‘লি-মুরোদে’। মানে, মরদের মর্দানি নেই বা মুরোদ নেই। তবে ভাল মরদ থাকলেও গানের কথায় শোনা যায়, ‘মরদ আমার ভাল বটে, শাশুড়িটো কানা!
শ্বশুরটো মোষের পারা, খায় হাঁড়িয়া হাঁড়া হাঁড়া।’ ‘হাঁড়িয়া’ এক ধরনের দেশি মদ, আর ‘হাঁড়া’ হচ্ছে মাটির বড় জালা। আগেকার দিনে খাবারের দোকানে এই ধরনের মাটির জালায় জল রাখা হত, সঙ্গে একটি মগ বা গ্লাস।
খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে জনসাধারণের রুচি ও চাহিদার দিকে চেয়ে এক ধরনের বেশ সস্তা বই কলকাতার শোভাবাজার-চিৎপুর অঞ্চলে একটা বটগাছকে কেন্দ্র করে ছাপা হতে শুরু করে, যাকে বলা হত ‘বটতলার বই’। সাধন-ভজন, যৌন কেলেঙ্কারি, ঢকাঢক মদিরা পান, বেশ্যাসক্তি, বাল্যবিবাহ, বিধবাবিবাহ, ইংরেজি শিক্ষার কুফল, মা ফেলে বউ-ভজনা, নব্য বঙ্গের নব সংস্কৃতি, উইক এন্ড, রেলগাড়ি, কলকাতার নতুন আমোদ-প্রমোদ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ থেকে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির এক আশ্চর্য সমাহার ছিল এই বটতলার বইয়ে। আর কেচ্ছার সঙ্গে গালাগালির তালিকা ছিল ফাউ।
এছাড়া কলকাতার জেলেপাড়ার সঙ আর বীরভূমের রাজনগর থানার তাঁতিপাড়া গ্রামের সঙ একসময় ছিল বিনোদনের শীর্ষে। গালাগালির সংলাপ ছিল সেখানে। আমআদমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন সে-সব জিনিস।
প্রথম দিকে গালাগালি ছিল না, পরে হয়েছে। এরকম একটি শব্দ ‘মাগী’। আদতে এটি কোনও গালাগাল নয়। শ্রীরামকৃষ্ণ, বঙ্কিম, কালীপ্রসন্ন হামেশাই ব্যবহার করেছেন এ শব্দটি। পরে বাংলা সাহিত্য থেকে শব্দটি উঠে গেল ব্রাহ্ম ভাবধারার প্রভাবে। রবীন্দ্রনাথ কখনও এ শব্দটি ব্যবহার করেননি। পরবর্তীকালে একটি গল্পে ‘মাগী’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন পরশুরাম। তবে সেই গল্পে মাগী নিয়ে জুতসই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি: ‘মাগী খারাপ কথা হবে কেন? রীতিমতো তদ্ভব শব্দ। আসল কথাটি হল মার্গিতব্যা, অর্থাৎ যাহা মাগিবার জিনিস।’
তবে রাজশেখর বসু অবশ্য তাঁর ‘চলন্তিকা’ অভিধানে এই ব্যাখ্যা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।
বাংলায় বেশিরভাগ গালিই এসেছে হিন্দি ভাষা থেকে। যথা ‘বানচোৎ’ এসেছে হিন্দি ‘বহিন চোৎ’ থেকে। ‘হারামী’, যার উৎস হিন্দি গালি এবং অর্থ যার বাপের ঠিক নেই, বেজন্মা। বেজন্মা, বেদো, গু-গোর ব্যাটা খুব চালু বাংলা গালি।
‘বোকা’ শব্দ দিয়ে বাংলা ভাষায় খুব মিষ্টি একটি গালি খুব চালু আছে। এই গালি দিলে বাঙালিরা খুব রেগে যায়, কারণ বাঙালি বুদ্ধিমান। তাকে বোকা বললে তো রাগ হবেই!
বাংলায় ‘চুতিয়া’ বলে একটি গালি আছে, যা এসেছে হিন্দি থেকে। হিন্দিতে ‘চুতিয়া’ মানে বোকা, আর বাংলায় খুব খারাপ লোক। ‘চুতিয়া নাগপুর’ (মতান্তরে ‘ছুতিয়া নাগপুর’) তাই হয়ে গেছে ছোটনাগপুর।
ইন্দিরা জমানায় ব্যাপকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ চালু করা হয়েছিল। তখন একশো পাঁচ টাকা দেওয়া হত একজন পুরুষকে। পুরুষটি পেত একশো, আর পাঁচ টাকা এজেন্ট। এরপর গ্রামে ঝগড়া হলে ঝগড়াবাজ মহিলা প্রতিপক্ষকে বলত, ‘খাঁসি ভাতারি’। ভর্তা থেকে ‘ভাতার’ আর বর্ধমান জেলার ‘ভাতার’ নামে যে স্থাননাম, তার উৎস সুকুমার সেন বলছেন, ‘ভক্তাগার’ থেকে ‘ভাতার’।
শেষে একটি কথা বলতেই হয়, বহু গালিগালাজ আমরা নিজেরা জানি, বহু বার শুনেছি, কিন্তু লিখতে পারছি না। সেসব পাঠক, নিজেরাই অনুভব করবেন, আশা করি। এখানে আপনাদের অনুপ্রাণিত করার সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র।

তথ্যসূত্র:
১) বাঙ্গালীর ইতিহাস, আদি পর্ব: নীহাররঞ্জন রায়, দে’জ, কলকাতা।
২) বাংলার সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন, সাহিত্য অ্যাকাদেমি, অষ্টম মুদ্রণ, ২০১৩।
৩) বাংলা স্ল্যাং – সমীক্ষা ও অভিধান (২০০৬): অভ্র বসু।
৪) বাংলা স্ল্যাং অভিধান (২০২২): কৃষ্ণ শর্মা।

Advertisement

চিত্রণ: বাপ্পাদিত্য জানা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 9 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »